আমাদের দেশে নারীর জন্য পিরিয়ড একটি লজ্জার ব্যাপার মনে করা হয়। এজন্য পরিবারের বড়রাও মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে খুব একটা কিছু বলেন না।
যার ফলে ১১-১২ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের জন্য পিরিয়ডের প্রথম অভিজ্ঞতা হয়, ভয়াবহ ও বিব্রতকর। অসচেতনতার কারণে পিরিয়ডকালীন সময় অনেক কিশোরীই ভয় পেয়ে লজ্জায় বাড়ির কাউকে না জানিয়ে দুশ্চিন্তা করে। যা তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সমস্যা করতে পারে।
মেয়ে সন্তানের জন্য পিরিয়ড সম্পর্কে জানা ও একটা বয়সের পর মোটামুটি প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। তাই পিরিয়ডের মতো জরুরি বিষয় নিয়ে লজ্জা, ট্যাবু না রেখে সন্তানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে। সন্তান বয়ঃসন্ধিতে এলেই এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করুন৷ শরীরিক পরিবর্তন, পিরিয়ড কেন হয়, সেই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবেই স্পষ্ট ধারণা দিন সন্তানকে৷
টিভিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখে আপনার ছোট পাঁচ বছরের শিশুটিও যদি জানতে চায়, তাকে এটা ওটা না বুঝিয়ে খুব সাধারণভাবে বুঝিয়ে বলুন। এতে করে নারীর প্রতি সে সম্মান নিয়ে বেড়ে উঠবে, খামোখা অতি আগ্রহ দেখাবে না।
কিশোরী কন্যার পাশে থাকুন, তাকে বোঝান পিরিয়ড কোনো অসুখ না, এটা নারী জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই পিরিয়ড হলে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে ঘরে বসে থাকারও প্রয়োজন নেই। সন্তানের পিরিয়ড হলে তার স্বাস্থ্যকর, পরিষ্কার থাকার বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। ইনফেকশন এড়াতে এসময়ে কাপড়, তুলা, টিস্যু নয় ব্যবহার করতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটারি ন্যাপকিন।
পরিবারের শুধু মা-ই নয়, বাবারও দায়িত্ব রয়েছে সন্তানের এই সময়ে মানসিক সমর্থন দিয়ে তার জীবনটা আরও সহজ ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে। কারণ মেয়ে শিশুরা সাধারণত বাবার সঙ্গে বেশি মিশে থাকতে ও সব কথা জানাতে আগ্রহী থাকে। কিন্তু দেখা যায় পিরিয়ড হওয়ার পর থেকে মেয়েদের বাবার সঙ্গে ধীরে ধীরে দূরত্ব চলে আসে সম্পর্কে। এটা না করে বরং নিজের সেই ছোট্ট আদরের পুতুল মেয়েটার বন্ধু হয়ে উঠুন। পিরিয়ড শুরু পরবর্তী সময়গুলো এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে তাকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করুন।
পিরিয়ড চলাকালীন কিশোরীর বিরক্তিভাব, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও দুর্বলতা আসে। দুশ্চিন্তা, ভয় ও মানসিক অবসাদ দূর করতে এই সময়ে সঠিক খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এ সময়ে খাদ্য তালিকায় টকদই, মাছ, ছোলা, আদার রস, রসুন, দুধ, আঙুর, কলা, বাদাম, ডার্ক চকলেট, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি ও প্রচুর পানি রাখুন।