কুখ্যাত ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত

তাহজীবুল আনাম.পিবিএ,কক্সবাজার : দেশের নাম্বার ওয়ান ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। সাইফুল করিম টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলবনিয়াপাড়া গ্রামের ডা. হানিফের পুত্র ।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাত (৩১ মে) কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।হাজী সাইফুল ইয়াবার কারণে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি এবং প্রশাসনের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কাগজে কলমে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থলবন্দরের একজন সিএন্ডএফ (আমদানি-রফতানিকারক) ব্যবসায়ী। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে কাঠ আমদানি করে সে। তবে কাঠ আনার আড়ালে ইয়াবার চালান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্বশেষ তালিকায় ‘এক নম্বর ইয়াবা ব্যবসায়ী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার এই হাজী সাইফুল করিমকে। সাইফুল করিমের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলামও এই ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও তার মামা, মিয়ানমারে মংডুর আলী থাইং কিউ এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহিমও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
প্রত্যেক গোয়েন্দা রিপোর্টের শীর্ষে সাইফুল করিম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে। গত মাসেও দুদকের পক্ষ থেকে তার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৩ মে সাইফুলের ছোট ভাই মাহবুব ও রাশেদকে টেকনাফ নিজ বাড়ি থেকে ১০ হাজার ইয়াবা ও ৪টি অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়া পাড়া এলাকার মো. হানিফ প্রকাশ ওরফে হানিফ ডাক্তারের ছেলে সাইফুল করিম। চট্টগ্রাম মহসিন কলেজে পড়াশোনার সময় ১৯৯৮ সালের দিকে নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পণ্য কেনা-বেচায় সহায়তা করে খরচ জোগাতেন তিনি। অভাব অনটনে দিন চলতো তার।
ওই সময় তার দাদার বাড়ি মিয়ানমারের মংডু এলাকার ইয়াবা ডন ও মিয়ানমারের মোস্ট ওয়ান্টেড মগা সুইবিন নামক এক আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে সাইফুলের।
তাদের পৃষ্টপোষকতায় ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে এসকে ইন্টারন্যাশনাল নামে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসা শুরু করে সে। ২০০১ সালের দিকে টেকনাফের বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহর বোনকে বিয়ে করে টেকনাফ স্থলবন্দর নিয়ন্ত্রণে নেয়।
সাইফুলের শ্যালক জিয়াউর রহমান উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ২০০১ সালের দিকেই মিয়ানমার থেকে পণ্য অমদানির আড়ালে কৌশলে ইয়াবা আমদানি শুরু করে সাইফুল।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, মিয়ানমারের ইয়াবা কারখানার মালিকরা লাখ লাখ ইয়াবার চালান পাঠায় সাইফুলের কাছে। কারণ মিয়ানমারে স্থাপিত ৩৮টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত মাল বিক্রির একমাত্র মার্কেট হচ্ছে। এই ইয়াবা ব্যবসার সুবিধার্থে মিয়ানমার-বাংলাদেশ চলাচলের জন্য একাধিক জাহাজ কিনেছে সাইফুল।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতি প্রথম দফায় ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছে কক্সবাজারে। তখন সাইফুল করিমের আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠেনি।

ওসি আরও উল্লেখ করেন, সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানার এফআইআর নং-১৫/৩৩৬, তারিখ- ৫ মে, ২০১৯; ধারা-১৯ (ধ)/১৯(ভ) ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন; টেকনাফ থানার এফআইআর নং-১৫/৩৩৭, তারিখ- ৫ মে, ২০১৯; ধারা-৩৬(১) এর ১০(গ)/৪১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮; চট্টগ্রামের ডবলমুরিং মডেল থানার এফআইআর নং-৫৬, তারিখ- ৩০ এপ্রিল, ২০১৯; ধারা-৪ (২) ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন; তৎসহ ২৬ (২)/২৭ (১) ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন; টেকনাফ থানার এফআইআর নং-৪৩/৬৮২, তারিখ- ৯ নভেম্বর, ২০১৮; ধারা-১৯(১) এর ৯(খ)/২৫ ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন; টেকনাফ থানার এফআইআর নং-১০, তারিখ- ৩ মে ২০১৯; ধারা-১৯ (অ)/১৯(ভ) ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন; টেকনাফ থানার এফআইআর নং-১১, তারিখ- ৩ মে ২০১৯; ধারা-২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) এর ১০ (গ)/৪১; চট্টগ্রাম সিএমপি হালিশহর থানায় ১৩ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার মামলা নং- ১(৫)১৮, ধারা-১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯ (খ)/২৫/৩৩ (১) এর অস্থিত্ব পাওয়া যায়।

এছাড়াও বৃহস্পতিবার রাতে ইয়াবা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়, অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওসি।

পিবিএ/টিএ/ এইচটি

আরও পড়ুন...