পিবিএ,কুবি প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা ও বিচারের দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সম্মতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টার মত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছিল কুমিল্লা পলিটেকনিক কলেজ, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, সিসিএন শিক্ষা পরিবারের শিক্ষার্থীসহ কুমিল্লা শহরের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ফলে সড়কের দুই পাশ ধরে প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ শহরের অভিমুখ থেকে রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে কুমিল্লা জেলা স্কুলের এক শিক্ষার্থী আহত হয়। তখন উত্তেজিত অবরোধকারীদের কয়েকজন শহরের অভিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করে। পুলিশ জানিয়েছে, ভাঙচুর করা গাড়িটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ব্যবহৃত গাড়ি।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে কুবির প্রধান ফটকে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে জমায়েত হয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিকাল ৩ টা ৪২ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। এই অবরোধ শেষ হয় বিকাল ৫ টা বেজে ৪০ মিনিটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচ হল নিয়ে মিছিল নিয়ে আসলে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে ‘ রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, আমার সোনার বাংলায়, বৈষ্যমের ঠাই নাই, লেগে ছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে যান। সেখানে হলের গেটে তালা দেখে শিক্ষার্থীরা তালা ভাঙার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে হল প্রভোস্ট তাদের সাথে কথা বললে, তারা হল গেট খুলে দিল চলে যাবে বলে জানান। তখন গেট খুলে দিলে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে আবার ক্যাম্পাস গেট যান। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদে অন্য শিক্ষার্থীরা ঢুকার সময় প্রক্টরিয়াল বডির সাথে বাদানুবাদ হয় এবং ধাক্কাধাক্কি হয়।
এরপর সেখান থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে রাস্তার পাশের বাড়ি, দোকান থেকে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করা হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন এবং বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আমরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা এসব হামলার বিচার চাই।
এই বিষয়ে হাইওয়ে ময়নামতি ক্রসিং থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, ‘ যানজট শুধু বাড়ছেই। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার যানজটের খবর পেয়েছি।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যতক্ষন ক্যাম্পাসে ছিল ততক্ষণ আমরা কন্ট্রোল করতে পেরেছি। অনেক বহিরাগত ঢুকছিল ক্যাম্পাসে। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তখন তাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি হয় আমাদের। এখন তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দিকে যাচ্ছে। আমি পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলেছি। শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ কোন নাশকতামূলক কাজ যেন তারা না করে।
কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাফি ঘটনার ব্যাপারে বলেন, ‘যেহেতু আন্দোলনকারীরা সবাই শিক্ষার্থী আমরা তাদের প্রতি সহনশীল আচরণ করেছি তারপরও গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃকপক্ষকে জানানো হয়েছে আমরা নির্দেশনা পেলে আইনী ব্যাবস্থা নিবো।’