কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার সীমান্তে ভারতীয় বন্য হাতির তান্ডবে অতিষ্ট সীমান্তবাসী।
বিএসএফ কাঁটাতারের গেট খুলে দেয়ায় প্রতিদিন হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করে পাকা ধানের ক্ষেত নষ্ট করছে। হাতির অব্যাহত তান্ডবে সীমান্তবাসী আতংকে দিন কাটাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে প্রতিবছরের ন্যায় চলতি বছরেও ভারতীয় বন্য হাতির তান্ডবের স্বীকার হচ্ছেন সীমান্তবাসী। এদিকে গেল এক সপ্তাহ ধরে হাতির তান্ডবে শেষ সম্বল পাকা ধান রক্ষা করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন সীমান্তের কৃষক।
রৌমারী এবং রাজিবপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে ভারতীয় এসব বন্য হাতি। এরমধ্যে অন্যতম হাতি প্রবেশের পথ হলো রৌমারীর আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১০৭১/৭২ এর উত্তর পাশে আলগাচরে কাঁটাতারের গেট খুলে দেয় ভারতীয় রক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। ভারতের গারোহীলসহ নিকটবর্তী পাহাড় থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে ২০/৩০টি ভারতীয় বন্য হাতির দল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এসব হাতির দল আগে শুধু রাতে আসলেও এখন দিনের বেলাতেও বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে প্রবেশ করছে।
মঙ্গলবার (২জুন) দিনের বেলায় ২৬টি ভারতীয় বন্য হাতির একটি দল রৌমারী সদর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ী গ্রামে চষে বেড়াচ্ছিল। ফলে সদর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি, চুলিয়ারচর ও ঝাউবাড়ি এবং যাদুরচর ইউনিয়নের পাহাড়তলী বিক্রিবিল দক্ষিণ আলগারচর, খেওয়ারচর, বকবান্ধাসহ ৮টি গ্রামের হেক্টরের পর হেক্টর পাকা ধান ক্ষেত তছনছ করছে বন্য হাতির দল। এছাড়াও গেল এক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় বন্য হাতির তান্ডবে বাংলাদেশ ও ভারতের কৃষকের পাকা ও আধা পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এরমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তি প্রায় শতাধিকের বেশি কৃষকের ৩০হেক্টর পাকা-আধা পাকা ধানের ক্ষতি করেছে। এছাড়াও গম,কলা বাগান, ভুট্রা ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলী জমি নস্ট করেছে। হাতির তান্ডব থেকে বাঁচতে দু’দেশের মানুষজন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, আগুন জালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে এবং শ্যালো মেশিন চালু করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। উপজেলার মিয়াপাড়া, বাউল পাড়া, জালচিড়া পাড়া, বালিয়ামারী, লাঠিয়ালডাঙ্গা, বাগানবাড়ী, বংশির ভিটা,আলগারচর,উত্তর আলগারচর, ঝাউবাড়ী, চুলিয়ারচর, বারবান্দা এবং ভারতের বলদাং গিরি, কালাইয়ের চর, শটিমারী,ভাটির গাঁও, শদুরটিলা, কারিপারাসহ এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানাযায়।
বড়াইবাড়ী গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিনের আড়াই বিঘা, দক্ষিণ আলগারচরের হায়দার আলীর দু’একর এবং খেওয়ার চরের এমদাদুল হকের ৫ বিঘা ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা জানান। ঋণ নিয়ে আবাদ করায় বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেই সাথে হাতির দল কখন লোকালয়ে ঢুকে জানমালের ক্ষতি করবে এই আতংকে দিন কাটাচ্ছেন তারা। ভারতীয় হাতি দল বেধে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে সর্বশান্ত করে দিলেও দেশের কেউ গুরুত্ব না দেবার অভিযোগ সীমান্তবাসীর। এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত দু’রাষ্ট্রে সরকারের কাছে আহবান জানান সীমান্তবাসী।
রৌমারী উপজেলা কৃষি অফিসার শাহরিয়ার হোসেন জানান, বন্য হাতির দল এ পর্যন্ত ৪০ জন কৃষকের ২৫ হেক্টরের মতো পাকা ধান ক্ষেত নষ্ট করেছে। এ অবস্থায় হাতির দল সরে যাওয়ার সাথে সাথে ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, সন্ধ্যায় এক দল ঢুকছে এবং সকালে চলে যাচ্ছে। আবার সকালে আসছে আরেক দল। বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে দেওয়ায় হাতির দলগুলো একের পর এক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে ফসল নষ্ট করছে। এজন্য চোখে টর্চ লাইটের আলো ফেলে হাতির দলকে তাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য পর্যাপ্ত টর্চ লাইট সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পিবিএ/মমিনুল ইসলাম বাবু/এমএ