পিবিএ,কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় একটি রাইস মিলের আড়ালে ভেজাল ও নিম্নমানের ভোজ্য পণ্য সামগ্রীর কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়াই নিম্নমানের সয়াবিন তেল,বল সাবান,জুস এবং চানাচুর উৎপাদন করছেন। তবে প্রশাসনের নজরে এলে আইনগত ব্যবস্থা নেবার কর্তৃপক্ষের।
উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাবাইতারী গ্রামের জোসনার মোড় এলাকার বাসিন্দা মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে হাবিবুর রহমান। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর হতে তিনি মেসার্স আপেল চাউল মিল নামে চালের ব্যবসা শুরু করেন। পরে তিনি ২০১৬সালে মেসার্স আপেল অয়েল মিল নামে ঘোড়া মার্কায় আপেল সরিষার তেল উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন( বিএসটিআই) এর নিকট লাইসেন্স নেন।
লাইসেন্স নেবার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিম্নমানের ভেজাল ভোজ্যপণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিলের মালিক চাল কলের ভিতরে অস্বাস্থ্যকর এবং স্যাত স্যাতে পরিবেশে বিভিন্ন কোম্পানীর স্টীকার ও লোগো ব্যবহার করে ঘোড়া মার্কা সরিষার তেল, জান্নাত সোয়াবিন, আপেল চানাচুর,প্রিন্স জুস এবং চমক কাপড় ধোয়ার সাবান তৈরী করে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি করে থাকেন।
মেসার্স আপেল অয়েল মিলের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান বলেন,বিএসটিআই এর অনুমোদন নিয়ে ঘোড়া মার্কা সরিষার তেল তৈরি করছেন তিনি। আর পরীক্ষামূলকভাবে সোয়াবিন তেল,সাবান, চানাচুর এবং জুস তৈরি করছেন। পরবর্তীতে বিএসটিআই থেকে এসব পণ্যের অনুমোদন নেবেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান।
নিয়োগকৃত পিকআপ চালক হিমেল আহমেদ জানান, মাসিক ১১হাজার ৫০০ এবং ৯হাজার টাকায় তারা ২জন করছেন। কচাকাটা, মাদারগঞ্জ,নুনখাওয়াসহ প্রত্যন্ত ও চরাঞ্চলে এসব পণ্য বিক্রি করেন ভ্যান ও পিকআপে করে। গাড়ি প্রতি ৫/৭ হাজার টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করেন তারা প্রতিদিন।
খড়িবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী সন্তোষ কুমার রায়,আজিজুল হক ও শাহানুর রহমান জানান,এসব পণ্য দেখেই বোঝা যায় এগুলো নিম্নমানের। তাই আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট না করার জন্য প্রতিষ্ঠানে রাখি না।
ক্রেতা রহিম মিয়া নুরুল ইসলাম, বুলবুলি আকতারসহ অনেকেই জানান, এসব পণ্য ভেজাল ও নিম্নমানের হওয়ায় তারা এলাকায় বিক্রি না করে গ্রামাঞ্চলের ছোট ছোট বাজার গুলোতে বিক্রি করে থাকেন।
বিএসটিআই এবং মোবাইল কোর্টের নজরদারী না থাকায় এসব পণ্য বাজারে সয়লাব। অনেকেই এসব পণ্য ব্যবহার করে শারিরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এই বিষয়ে বিএসটিআই’এর রংপুর অঞ্চলের ফিল্ড অফিসার দেলোওয়ার হোসেন জানান, মেসার্স আপেল সরিষা অয়েল মিল নামে লাইসেন্স দেয়া আছে। তবে সেই লাইসেন্সের নবায়ণ করার চলতি বছরের জুন মাসেই শেষ। তিনি তার কারখানায় অন্য কোন পণ্য উৎপাদনের জন্য বিএসটিআই’র নিকট কোন আবেদন করেনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাছুমা আরেফিন বলেন, আপনি পণ্য গুলোর তালিকা দেন আমি মোবাইল কোর্টের আওতায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। কুড়িগ্রাম জেলার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারি পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অনুমোদনহীন ভাবে কেউ পণ্য উৎপাদন করলেও তাদের কোন দায়বদ্ধতা থাকে না। ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা ফুলবাড়ির বিষয়টি খতিয়ে দেখব বলে জানান।
পিবিএ/এমআইবি/আরআই