কুড়িগ্রামে যত্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ

পিবিএ,কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে নারী ও শিশুদের কল্যাণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নেওয়া ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’ (আইএসপিপি) বা যত্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে সুবিধাভোগীরা জানিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে এ ক্ষেত্রে টাকা আদায় ঠেকাতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

যত্ন প্রকল্পে
তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিতে হয়

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় লক্ষাধিক পরিবার যত্ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। ইউনিয়নের জনসংখ্যা অনুপাতে এক হাজার দুই শ থেকে এক হাজার পাঁচ শ পর্যন্ত কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যে পরিবারে গর্ভবতী নারী, শূন্য থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশু অথবা দুই-চার বছর বয়সী শিশু রয়েছে, তাঁরাই হবেন যত্ন প্রকল্পের উপকারভোগী।

উপকারভোগী গর্ভবতী হলে চারবার চেক-আপের জন্য চার হাজার টাকা পাবেন। শিশু জন্ম নেওয়ার ২৪ মাস পর্যন্ত মাসিক মনোদৈহিক সেশনে অংশ নিয়ে মা ও শিশু এক হাজার চার শ টাকা পাবেন। টানা তিন মাস সেশনে উপস্থিত থাকলে মা একটি বোনাস ভাতাও পাবেন।

এ ছাড়া শিশুর বয়স পাঁচ বছর হওয়া পর্যন্ত প্রতি তিন মাস পরপর মনোদৈহিক সেশনে অংশ নেওয়ার জন্য সাত শ টাকা হারে ভাতা পাবেন। এসব আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে উপকারভোগী নির্বাচন করছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে।

এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ারচর গ্রামে গেলে স্থানীয় নুর আলম জানান, তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে মেম্বার খালিদকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। গ্রামের দিনমজুর মমিনুলের স্ত্রী মেহেনা তালিকায় নাম লেখাতে মাসিক ১০০ টাকা সুদে পাঁচ হাজার টাকা দাদন নিয়ে মেম্বারকে দিয়েছেন। হেকমত আলীর স্ত্রী হামিদা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টেকা-পয়সা নাই। বাবার কাছে কয়ছি। বাবা মহাজনের কাছে টাকা নিয়া দিছে।

এই টাকা মেম্বারকে দিছি।’ রহিম বাদশার স্ত্রী রুপা দাবি করেন, টাকা জোগাড় করতে না পারায় তিনি তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য খালিদ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু রাজারহাট নয়, তালিকাভুক্তির নামে ব্যাপক আর্থিক লেনদেনের এই চিত্র উলিপুর, চিলমারী, ফুলবাড়ীসহ অন্যান্য উপজেলায়ও। রাজারহাট ইউনিয়নের উপনচৌকি গ্রামের দিনমজুর নজীর হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান এনামুল লিস্টে নাম তোলার জন্য ছয় হাজার টাকা চাইছে। আমার দিবার কোনো উপায় নাই। কাগজ ফেরত আনি ইউএনও সাবের কাছ থাকি ফরম আনি জমা দিছি।’

উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহুবুর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন অর রশিদ, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনতাল হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মঞ্জু অভিযোগ করেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার ইউপি সদস্যদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে উপকারভোগী নির্বাচন করেছেন। ইউপি সদস্য মহুবর রহমান বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কথা অনুযায়ী ২৫ তারিখ কাগজপত্র জমা দিলেও তিনি ফরম নাই জানিয়ে আমাদের দেওয়া উপকারভোগীদের বাদ দিয়েছেন।’

ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ইউপি সদস্যরা নির্দিষ্ট সময়ে কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় তালিকা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আইএসপিপি প্রকল্পের রাজারহাট উপজেলা সমন্বয়ক ইমদাদুল হক জানান, জনবলের অভাবে তাঁরা ঠিকভাবে তদারক করতে পারছেন না। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাশেদুল হক প্রধান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উলিপুরের ইউএনও মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘কেউ লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কুড়িগ্রাম-৩ আসনের (উলিপুর) সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, ‘এ ব্যাপারে ইউএনওকে দিয়ে চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।’

পিবিএ/এমাআইবি/আরআই

আরও পড়ুন...