কৃষিতে বদলে দিচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে উপকূল

শফিকুল ইসলাম খোকন: আমরা কথায় বলে থাকি বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এটি আমরা বিশ্বাস করি। আর সেজন্যই কৃষি উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। সরকারিণ্ডবেসরকারিভাবে কৃষিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ক্রমান¦য়ে কৃষি বদলে দিচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে উপকূল। কৃষি ক্ষেত্রে বেশিরভাগই ভূমিকা রাখছে উপকূল। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলেই বেশি লবনাক্ততা থাকার কারণে কৃষিও হুমকির মুখে পড়ে।

উপকূলীয় জনজীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস,বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলের মানুষের নিত্যদিনের সাথী। নানা বিপত্তি এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গি। যার মধ্যে রয়েছে লবনাক্ততা। লবনাক্ততা কখনো উপকূলীয় বাসিন্দাদের কাছে পৌষ মাস আবার কখনো সর্বনাশ হয়ে থাকে। সমুদ্র উপকূলে কৃষি কাজেও রয়েছে নানাবিধ বাঁধা যার মধ্যে লবণাক্ততা অন্যতম। শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। এসময়ে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় মিষ্টি পানিও থাকেনা, নদী এবং যে সমস্ত খালে পানি থাকে তাও প্রায় লবণাক্ত হয়ে যায়।

পুকুর এবং বিল শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত যেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকত। এমনকি নলকূপের পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে যায়, ফলে মিষ্টি পানি খুব দুষ্কর হয়ে যায়। আর এর ফলশ্রুতিতে কৃষি কাজ তথা সবজি চাষ হয়ে যায় প্রায় অসম্ভব,ফলে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদী থাকে পুরো শুকনো মৌসুম জুড়ে। কৃষিতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষক বা কৃষি অনেক অবদান রাখছে। বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের মোট ১৪ জেলা উপকূলের আওতায়। মোট কৃষি জমির ৩০ ভাগ জমি রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে যার প্রায় ৫৩ ভাগ লবণাক্ততায় আক্রান্ত এবং লবণাক্ততা প্রতিবছরে বেড়েই চলেছে। এ কারণে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের কৃষক তাদের জমি অনাবাদী রাখতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে জাতীয় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

উৎপাদন এবং আয় কমে যাওয়ার কারনে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে ভুগছে প্রতিটি কৃষক পরিবার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এ সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইকো কোঅপারেশন দি সল্ট সলিউশন নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের লবণ সহিষ্ণু ফসলের সাথে পরিচয় ঘটানো, প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং গুণগতমান সম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা, যার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির মান উন্নত হবে।

আমরা জানি, বিশ্বে খাদ্যশস্যের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্যে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩৪ টন উৎপাদন করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম, যা নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। টেকসই কৃষি উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্য শস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে।

দেশের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি’তে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সবোর্চ্চ বিবেচনায় নিয়ে নানামুখি প্রদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। দারিদ্র্য, ঘনবসতি, নগরজীবনের নানা অনিশ্চয়তা আর জলবায়ুর পরিবর্তনের ভেতর বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও টিকে থাকার মূল জায়গাটি হচ্ছে ভূমি ও কৃষক সম্প্রদায়। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাছে বাংলাদেশ।

আগেই বলেছি, দক্ষিনাঞ্চল তথা উপকূলীয় অঞ্চলে লবনাক্ততার কারণে কৃষকের কাছে সর্বনাশ হয়ে থাকে। এ লবন সহিষ্ণু জাত নিয়ে দক্ষিনাঞ্চলের খুলনা বাগেরহাট,পটুয়াখালী ও বরগুনা এই চারটি জেলার ৮টি উপজেলার ৫ হাজার চাষি পরিবার নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের দোড় গোড়ায় গিয়ে বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোডেক এবং কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ড ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সল্ট ফার্ম টেক্সেল। প্রকল্পটি তিন বছর ধরে এই অঞ্চলে শুকনো অর্থাৎ শীত মৌসুমে লবণাক্ত জমিতে গাজর, রেডবিট (বিটকপি), আলু, ফুলকপি,ওলকপি এবং বাঁধাকপি উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তিসমূহের প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষনা মতে, মোট ২০০ প্রদর্শনী প্লট এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকরা শিখেছে লবণ সহিষ্ণু কৃষির প্রযুক্তিসমূহ, জানতে পেরেছে বিভিন্ন ফসলের লবণ সহ্য ক্ষমতার মাত্রা। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদেরকে মাঝে বিতরণকৃত নতুন জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপির রাইমা জাতটি যা ৮ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে, আকারে বড় এবং অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। ফুলকপির স্কাইওয়াকার জাতটি যা ১২ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে ফুল বড় ও উজ্জ্বল হয় এবং স্বাদ অনেক ভাল। ওলকপির লেক এবং করিস্ট জাত দুটো যা ৯ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে আকারে অনেক বড় হয় কিন্তু শক্ত অর্থাৎ আঁশ হয় না, তুলনামূলক বেশি নরম এবং স্বাদ অত্যন্ত ভালো, ইচ্ছে করলে কাঁচাই চিবিয়ে খাওয়া যায়। আলুর মেট্রো জাতটি যা ১০ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে আকারে বড় ও অত্যন্ত সুস্বাদু হয় এবং ফলন স্থানীয়ভাবে চাষকৃত ডায়মন্ড এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। এছাড়াও প্রকল্প থেকে চাষিদের মাঝে রেড বিট নামে এক নতুন ফসলের বোরো নামক জাতটির উৎপাদন ও সম্প্রসারণের কাজ করছে যা উচ্চ মাত্রার লবণ সহিষ্ণু প্রায় ২১ ডিএস/মি যার পাতা এবং মূল টিউবার দুটোই খাওয়া যায়।

এটি অনেক উন্নত পুষ্টিগুন স¤পন্ন ফসল। এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসেবে অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। ১৪ জেলার মধ্যে মোট ৮টি উপজেলার প্রায় ১০০ একর অনাবাদী জমিতে এসব সবজি ফসলের লবণ সহিষ্ণু জাতসমূহের আবাদ করা হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ণ সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৩০ জন প্রশিক্ষিত নার্সারার (সবজি বীজ উৎপাদনকারী) এর মাধ্যমে গুনগত মানসম্পন্ন সবজি চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যাতে অন্যান্য কৃষক এ সকল উন্নত মানের সবজি ফসলের চারা সহজেই পেতে পারে,এছাড়াও দেশের স্বনামধন্য বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লালতীর সিড কোম্পানীর মাধ্যমেও এসকল বিদেশী জাতসমূহের সহজ প্রাপ্যতার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের সহায়তায় বাগেরহাটের রামপালে তৈরি করা হয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র যেখান থেকে খুব সহজেই যে কোনো জাতের লবণ সহিষ্ণুতার মাত্রা নিরুপন করা যাবে।

এসকল প্রদর্শনী প্লটে পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করে বেড নালা পদ্ধতিতে জমি তৈরি করা হয়। এতে নেদারল্যান্ডস থেকে আনা লবণ সহিষ্ণু জাতের বীজ রোপন করা হয়, সাথে থাকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে মালচিং এর প্রয়োগ। প্রকল্পের কর্মীরা নিয়মিত জমির লবণের মাত্রা, পিএইচ এবং ময়েশ্চার কন্টেন্ট পরিক্ষা করেন এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফলে লবণাক্ততার ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব হয়। প্রকল্প থকে বিতরণকৃত লবন সহিষ্ণু জাতের বীজ, উপযুক্ত মাটি ব্যাবস্থাপনা, উপযুক্ত সেচ এবং সার প্রয়োগ লবন সমস্যা সমাধানে অত্র অঞ্চলের কৃষকদের সফলতা এনে দিয়েছে।

কৃষিবিদদের মতেণ্ড উপকূলীয় অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদী থাকে লবনাক্ততার কারনে। ফলে এই সময়ে কৃষকরা অবর্নণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ইকো কো অপারেশনের অর্থায়নে কোডেক কর্তৃক বাস্তবায়িত দি সল্ট সলিউশন প্রকল্পটি কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানে সফলতার সাথে কাজ করছে। এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং আরো বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অত্র এলাকার চাষিরা লবণ সহিষ্ণু কৃষিতে দক্ষ হচ্ছে। তারা এখন খুব সহজেই তাদের জমির লবণের মাত্রা নির্ণয় করতে পারে এবং সে অনুযায়ী ফসল ও জাত নির্বাচন করে চাষাবাদ করতে পারছে। প্রকল্পের প্রযুক্তিসমূহ সমগ্র উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের মধ্যে সম্প্রসারণ করা গেলে তা লবণাক্ততার সমস্যা সমাধান করে বিপুল পরিমান অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হবে। ফলে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন সহজ হবে।

কৃষি মন্ত্রনালয়ের তথ্য মতে জানা যায়, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কর্তৃক গৃহীত কৃষি প্রণোদনা/পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে এ পর্যন্ত ৯৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। ফসলের উন্নত ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে অভূতপূর্ণ সাফল্য এসেছে। ২০১৮-১৯ সনে অবমুক্তকৃত উদ্ভাবিত জাত ১২ টি, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ৯৫টি, এবং নিবন্ধিত জাত ২৬টি। গম ও ভুট্টার গবেষণা সম্প্রসারণের জন্য সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গমের ১টি জাত উদ্ভাবন, গম ও ভুট্টার ৪ হাজার ৫ শটি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ এবং রোগবালাই ব্যবস্থাপনার উপর ১টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতো কিছুর পরেও উপকূলে আশুনুরুপ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা।

সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৯৯, ২০১৩ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় কৃষিনীতি প্রণয়ন করেছে। জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০১৯ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্রসেচ নীতিমালা, জৈব কৃষিনীতি প্রণয়নসহ কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরি ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা ২০১৯ প্রণীত হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষিতে অবদানের জন্য ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি সংহত/সম্প্রসারিত হবে। বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, এসডিজি ২০৩০, রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি,৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টাপ্লান: ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব রূপ পাবে।

আমরা জানি বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। উপকূল নিয়ে কেউই ভাবছেনা। অথচ উপকূলীয় অঞ্চল কৃষিতে ব্যপক অবদান রাখছে। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে কৃষি থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে লবনাক্ততার কারণে ফসল না হওয়াতে। তবে সরকারিণ্ডবেসরকারি পর্যায় উন্নত জাত ও লবনসহিষ্ণু জাত এবং কারগরি পরামর্শে আবারও কৃষির দিকে ঝুকছে চাষিরা। বসরকারিণ্ডবেসরকারি পর্যায়ে এর ধারাবাহিকতা অব্যত থাকবে বলে আমি আশা করছি। যেহেতু উপকূলীয় অঞ্চল কৃষিতে ব্যপক অবদান রাখছে সে কারণে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায় উপকূলকে গুরুত্ব দিতে হবে বেশি। কৃষি ক্ষেত্রে উপকূলকে বেশি গুরুত্ব দিলে এবং এ ধারা অব্যহত থাকলে যেমন অনাবাদি জমি আবাদি হবে, লবন সহিষ্ণজাতের কারণে লবনাক্ত জমিতে চাষাবাদ হবে, তেমনি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে লাভবান হবে দেশ এবং দেশ শস্য সংকটে পড়বেনা।

তাই, যদি কৃষির সাথে জড়িয়ে থাকে দেশের কৃষকের প্রাণ,কৃষির উন্নতি না হলে যদি কৃষকের উন্নতি নাই হয়, কৃষির উন্নতি যদি বাধাগ্রস্ত হয় তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কৃষির উন্নতি সাধিত হলে কৃষকের ও দুর্দশা লাঘব যদি হয়, তাহলে এ ব্যাপারে কৃষকদের মধ্যে চেতনাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। পুরানো আমলের চাষাবাদ প্রণালি পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সর্ম্পকে কৃষকগণদের কৃষি বিশেজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাইণ্ড জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর আযোজন চলছে সারাদেশে। কৃষিকে লাভজনক খাতে রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে হলে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হোক না একটি আন্দোলন? বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে হোক না কৃষির আন্দোলন? হোক একটি অঙ্গীকার, কৃষিতে বদলাবে বাংলাদেশ, কৃষিতে বদলে যাক উপকূল। এটাই হোক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর অঙ্গীকার।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক

আরও পড়ুন...