সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিয়েছেন।
সোমবার (৮ জুলাই) রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর শাহবাগ মোড় দিয়ে আবার যান চলাচল শুরু হয়েছে।
অবরোধ প্রত্যাহারের আগে আগামীকাল মঙ্গলবার গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি চলমান ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটের কর্মসূচি চলবে। তবে পরদিন বুধবার আবারও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে সেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ ছাড়া এক দফা দাবি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
এর আগে আজ বিকেলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শাহবাগ মোড়ের সড়ক অবরোধ করেছিলেন। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। এর অংশ হিসেবে শাহবাগ ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টেই সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরোধের কারণে শাহবাগসহ আশপাশের সব সড়কেই যান চলাচল বন্ধ ছিল। শাহবাগসহ বিভিন্ন মোড় অবরোধ করায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী৷
শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দেন৷ এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘মেধাবীরা দিচ্ছে ডাক, কোটাপ্রথা নিপাত যাক’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা’, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি। স্লোগানের পাশাপাশি চলে বক্তব্য, গান ও কবিতা আবৃত্তি। অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে আশপাশের সড়কগুলো ছেড়ে দিয়ে বড় বড় মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী৷
অবরোধ তুলে নেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অর্ধবেলা ব্লকেডে আমরা থেমে থাকব না। আমরা একটি সর্বাত্মক ব্লকেডের পরিকল্পনা করছি। এ জন্য আগামীকাল আমরা সারা দেশে ও ঢাকা শহরে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় ও গণসংযোগ করব। পরে বুধবার আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব। কিন্তু আমাদের চলমান ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটের কর্মসূচি চলবে। আমরা ব্লকেড প্রত্যাহার করছি না। বরং সর্বাত্মক ব্লকেডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ আগামীকাল বিকেলে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে আমরা আমাদের বুধবারের কর্মসূচি জানিয়ে দেব। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্লকেডের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিন।’
চার দফা দাবির পরিবর্তে আজ এক দফা দাবির কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। দাবিটি হলো, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করা। নাহিদ বলেন, ‘আমরা আমাদের এক দফা দাবি দিয়ে দিয়েছি, যেখানে আদালতের কোনো এখতিয়ার নেই। এটা করার দায়িত্ব কেবল নির্বাহী বিভাগ ও সরকারের। ফলে বল এখন সরকারের কোর্টে। এখন আর আদালত দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। সরকারই ঠিক করতে পারে, এই আন্দোলনের গতিপথ কী হবে।’
আজ দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম এই আন্দোলন যাতে দীর্ঘমেয়াদি না হয়। তাই এত দিন আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক কমিটি ঘোষণা করিনি। কিন্তু দাবি আদায় না হলে আমরা মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সারা দেশে প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা এই টিম গঠন করেছি।’ নাহিদ আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো রকম বাধা দেওয়া হলে বা হয়রানি করা হলে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব।’
কর্মসূচি ঘোষণার সময় নাহিদের পাশে ছিলেন আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, মাহিন সরকার, রিফাত রশিদ প্রমুখ৷