মাহবুব আলম,পিবিএ,জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির মূল কেন্দ্রবৃন্দ হল গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যথাক্রমে ৮টি করে মোট ১৬টি হল রয়েছে। কিন্তু এই হলগুলোতে কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কমিটি নেই। এমন অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠন গুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম। তবে হল কমিটি না থাকলেও জাবিতে শাখা কমিটি আছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগ ও ছাত্র সমাজের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের জাবিতে ২১৪ সদস্য বিশিষ্ট শাখা কমিটি আছে। ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল এই কমিটি এক বছরের জন্য গঠিত হলেও ইতিমধ্যে দুই বছর পার করে দিয়েছে। কিন্তু এখনো দিতে পারেনি হল কমিটি। যার কারণে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়েছে কর্মীদের বিশাল একটি অংশ। এছাড়া ২১৪ সদস্য কমিটিরও অধিকাংশ পদপ্রাপ্ত নেতা চাকরী করায় রাজনৈতিক কর্মকা-ে নিস্ক্রিয় রয়েছেন। এমন অবস্থায় ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে উপস্থিতি সংখ্যাও পূর্বের চেয়ে কম দেখা যায়। তবে হলগুলোতে সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকলেও ছেলেদের হলে আসন বন্টনের কাজটি করে থাকে ক্ষমতাসীন এই ছাত্র সংগঠনটি। এই সংগঠনটির সিনিয়র নেতা-কর্মীরাই নির্ধারণ করে দেয়- কোন আসনে কে থাকবে। এছাড়া তাদের ছত্রছায়ায় ছাত্রত্ব শেষ হওয়া এমন অনেকেই হলে অবস্থান করছে। যার কারণে ছেলেদের হলগুলোতে আবাসন সংকট চরমে। ছেলেদের হলে সংগঠনটির এমন প্রভাব দেখা গেলেও মেয়েদের হলে নেই কোন প্রভাব। কারণ মেয়েদের হলগুলোতে প্রশাসন থেকেই আসন বন্টন করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, নানা জটিলতার কারণে আমরা হল কমিটি দিতে পারিনাই। তবে আশা করছি শিগগিরই হল কমিটি দিয়ে দিতে পারবো।
এদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা মাঠের বিরোধী দল খ্যাত ছাত্র সংগঠনট ছাত্রদলের জাবিতে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গঠিত এই কমিটি তিনবছর পার করলেও দিতে পারেনি হল কমিটি। এমনকি শাখা কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯ সদস্য কমিটির মাত্র ৯জন বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। বাকিরা নানা কারণে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেননা। তবে কমিটির বাইরে থাকা অন্তত ২০-২৫ কর্মী সাংগঠনকি বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেয়।
ছাত্রদল সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর শাখা ছাত্রদলের বর্তমান সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকত ছাত্রলীগের হাতে ব্যাপক মারধরের শিকার হয়। তারপর থেকে জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে প্রকাশ্যে কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। এমনকি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা দিতে আসলেও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়। যার কারণে স্নাতক শেষ করতে পারেনি শাখা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি সোহেল রানাসহ কয়েকজন নেতা। এমন অবস্থায় জাবি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ ও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ঝটিকা মিছিল করেই সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এই বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. সোহেল রানা বলেন, আমরা শাখা কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কেন্দ্রের নিকট একটি কমিটির তালিকা জমা দিয়েছি। কেন্দ্র অনুমোদন দিলেই আমাদের শাখা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে আমাদেরকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দেওয়া হচ্ছেনা। এমন অবস্থায় হল কমিটি দেওয়া কঠিন।
এদিকে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর শাখা কমিটি থাকলেও কোনটিরই নেই হল কমিটি। ছাত্র ইউনিয়নের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট শাখা কমিটি আছে। প্রতিবছরই তারা কাউন্সিল করে শাখা কমিটি গঠন করলেও হল কমিটি দেওয়ার মত কর্মী সংখ্যা নেই বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সূত্র মতে, পুরো ক্যাম্পাসে তাদের নেতাকর্মী সংখ্যা ৫০ জনের মত। এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন থেকে হলগুলোতে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাই হল কমিটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।’
অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নামে দুটি সংগঠনের বিশ্বিবদ্যালয়ে কমিটি আছে। একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুস্মিতা মরিয়ম ও মোহাম্মদ দিদার। এই অংশটির ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আছে। অন্য অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহথির ও সুদীপ্ত। এই সংগঠনটির ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। এই সংগঠন দুটির পুরো ক্যাম্পাসে নেতাকর্মী সংখ্যা সর্বমোট ৩৫ জনের মত। যারফলে লোকসংকটে হলগুলোতে কমিটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা সংগঠন দুটির।
এছাড়া ক্যাম্পাসে জাসদ ছাত্রলীগের ৩৭সদস্য বিশিষ্ট কমিটি থাকলেও ক্যাম্পাসে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়না সংগঠনটিকে। এদিকে এ বছরের ৩১ মার্চ জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র সমাজ ক্যাম্পাসে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে।
পিবিএ/জেআই