মাথার যন্ত্রণার অনেক প্রকার আছে। কেন ব্যথা হচ্ছে বুঝবেন কীভাবে? চিনতে শিখিয়ে দিলেন নিউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। জেনে নিন কোন সমস্যায় মাথার কোনদিকে ব্যথা হয়।
মাইগ্রেন: মাথার যে কোনও একটা দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়। তাই একে আধ-কপালি ব্যথাও বলা হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা দপদপ করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে সেই ব্যথা পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া চোখের চারপাশেও ব্যথা হতে পারে।
টেনশন: এই কারণে মাথাব্যথা হলে পুরো মাথা জুড়ে হয়। মনে হবে, যেন কেউ মাথাটা চেপে ধরে আছে। ভারী ভারী লাগবে।
ক্লাস্টার হেডেক: দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় বা বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় এই ব্যথা হয়। চোখের পিছনের দিক থেকে মাথার একটি দিক বরাবর যন্ত্রণা হয়।
মাথার ভিতরে রক্তপাত হলে: মাথার পিছন দিক থেকে শুরু হয়ে ঘাড় পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
ব্রেন ইনফেকশন বা মেনিনজাইটিস: পুরো মাথাজুড়ে যন্ত্রণা হয়। সঙ্গে ঘাড়েও ব্যথা হয়।
চোখের পাওয়ার বাড়লে: চোখের চারপাশে ব্যথা হবে। মাথাতেও ব্যথা হবে।
ভেনাস সাইনাস: মাথার ভিতরে ভেনাস সাইনাস ক্লট করলেও যন্ত্রণা হয়।
ব্রেন টিউমার: মাথার ডান পাশে টেম্পোরাল লোবে টিউমার হলে সেই অংশে ব্যথা হয়। এরকমই যে দিকে টিউমার হয় সেই দিকে ব্যথা হয়। টিউমার ছোট থাকলে ব্যথা হয় না। আকারে অনেকটা বড় হলে তবেই হয় যন্ত্রণা।
বয়স্কদের মাথাব্যথা: কানের পিছনে টেম্পোরাল আর্টারি থাকে। সেখানে টেম্পোরাল আর্টারাইটিস বলে একটা অসুখ হয়। এই অসুখ হলেও কানের পিছনে তীব্র ব্যথা হয়।
সাইনাস ইনফেকশন: এ ক্ষেত্রে মুখমণ্ডলে ব্যথা হতে পারে।
কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?
কম-বেশি সকলেরই কখনও না কখনও মাথা যন্ত্রণা হয়। কারও হয় তীব্র, অসহনীয়। কারও মৃদু। বাজারচলতি ওষুধ খেয়ে বা মলম লাগিয়ে অনেক ব্যথার উপশম ঘটে। আবার একটু ঘুমিয়ে, বিশ্রাম নিলে কষ্ট উধাও হয়ে যায়। তাই মাথাব্যথা হলেই ডাক্তারের কাছে ছুটে যান না কেউই। কিন্তু যদি জীবনে প্রথমবার মারাত্মক মাথার যন্ত্রণা হয় তাহলে তখনই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। বয়স ৫৫-র উপরে হলে ও তারপর জীবনে প্রথম মাথাব্যথার ধাত শুরু হলে ডাক্তারের কাছে যান।
মাথা যন্ত্রণার সঙ্গে জ্বর, বমি হলে ইনফেকশন, মেনিনজাইটিস, মাথার ভিতরে রক্তপাতের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া মাথা ব্যথার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা বা একটা জিনিসকে দু’টো করে দেখা (ডিপ্লোপিয়া) শুরু করলেও একদম ফেলে রাখবেন না। মাথাব্যথার সঙ্গে নিউরোর সমস্যা দেখা দিলে অর্থাৎ হাত-পায়ে সাড় চলে গেলে, কোনও একদিকে প্যারালাইসিসের লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান। ঝিমিয়ে গেলে, চেনা মানুষকে চিনতে না পারলে দ্রুত নিউরোলজিস্টের কাছে যান।
ওষুধ ছাড়া ভাল থাকার উপায় –
মাইগ্রেনের রোগীকে প্রচণ্ড মাথা যন্ত্রণা হওয়ার সময় ডাক্তার কিছু ওষুধ দেন। তারপর ব্যথা কমার কিছু দিন পরেও কিছু ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু এই ওষুধ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বন্ধ করতে হবে। এরপর মাইগ্রেনের অ্যাটাক এড়াতে লাইফস্টাইল ঠিক করতে হবে। খালি পেটে বেশিক্ষণ থাকা ও রাত্রি জাগা চলবে না। হঠাৎ করে রোদে বেরনো চলবে না। ঘুম কম বা অতিরিক্ত ঘুম নয়। নির্দিষ্ট সময়ে ছ-সাত ঘণ্টা ঘুমান। বেশি করে জল খান। স্ট্রেস নেবেন না। তাই যোগাভ্যাস বা ধ্যান করে চাপমুক্ত থাকুন। হাঁটাহাঁটি করুন।