তৌহিদুল ইসলাম বাদল: কোভিডের শক্তি কমেছে কিনা সঠিক বলতে পারবো না। তবে মানুষের শক্তি যে বেড়েছে শতগুণ তার শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবো কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই। ওবাইদুল কাদের যখন কোভিডের চেয়ে মানুষের শক্তি বেশি বলেছিলেন তখন দেশবাসী তাঁকে টিপ্পনী কেটেছিলেন। আমজনতার টিপ্পনী কাটা অপরাধ ছিল না, তখন হয়তো কোভিডের চেয়ে মানুষের মনোবল ছিল কম। কোভিড মানুষকে যতটা রোগে মেরেছে তার চেয়ে বেশি মেরেছে শোকে ও একাকীত্বে। কোভিড মানুষকে শক্তিশালী হওয়ারই শিক্ষা দেয়৷ শিক্ষা দেয় নিয়মানুবর্তিতাসহ ধার্মিকতা ও মানবতার। কিন্তু মানুষ কোভিডের ভাষা ও বার্তা না বুঝে হয়েছে হতাশাগ্রস্ত, দুর্বল, ধর্মহীন ও বিছিন্ন। কোভিড কখনোই বিচ্ছিন্নতাবাদের শিক্ষা দেয় না। কোভিড মানুষকে শিক্ষা দেয় মানবতা ও সামাজিকতার। কিন্তু আফসোস মানুষ বরাবরই ভুল শিক্ষা গ্রহণ করে, এটি মানুষের অজ্ঞতারই ফসল।
গতকাল ফেসবুকের নিউজ ফিডে দেখলাম, ঢাকার কর কমিশনার বজলুল কবির ভুঁইয়া কোভিড পজেটিভ হয়ে খুব রসিকতার সাথে বিষয়টি শেয়ার করে দোয়া চেয়েছেন। তাঁর সেই পোস্টে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ লিখেছেন তিনিও পজেটিভ হয়ে ১৪ দিন যাবৎ বাসায় আছেন। একই পোস্টে সাবেক কর কমিশনার কাজী এমদাদ লিখেছেন তিনিও পজেটিভ, ১৭ দিন থেকে গৃহবন্দী। তাঁরা সকলেই শারিরীকভাবে সুস্থ আছেন। এটি খুব মজাদার সংবাদ। এরকম আত্মবিশ্বাসী আরো কিছু মানুষের পজেটিভ হওয়া প্রয়োজন মানুষের স্বার্থেই। অনেকেই আমরা পজেটিভ কিন্তু সমাজের ভয়ে, রাষ্ট্রের ভয়ে, জানা অজানা নানা ভয়ে স্বীকার করছি না। স্বীকার না করারও যথার্থ কারণ রয়েছে। স্বীকার করলেই আপনি হবেন বিছিন্ন, একঘরে, স্বজনহারা, বাস্তুহারা; এমনকি মরেও শায়িত হবেন দাফনছাড়া। আর সেই ভয়ে পরীক্ষা না করার সংখ্যাও ঢের বেশি।
আমাদের অধিকাংশের ধারণা পজেটিভ রোগীর কাছে গেলেই কোভিড ধরে ফেলবে। বিষয়টি এমন নয়। কোভিড রোগীর গায়ে হাত দিলে কিংবা ছুঁয়ে দিলে আপনার কোভিড হবে না। শুধুমাত্র কোভিড রোগীর হাঁচি, কাশি কিংবা কথা বলার সময় নির্গত লালার সুক্ষ্ম কণিকা শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে গেলেই আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। কোভিড নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ কোভিড আক্রান্তের হার যেমন বেশি, ঠিক তেমনই হার বেশি সুস্থতার। এর মৃত্যুহার খুবই কম। আমরা শুধুমাত্র পরীক্ষা করা পজেটিভ রোগীকেই ভয় পাই কিন্তু আমাদের চারপাশে কত মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়ে আমাদের সাথেই মিলেমিশে কাজ করছে তার হিসাব আমরা কেউ রাখি না। তাই ভীতি নয়; স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা ও মানবতা চর্চার মাধ্যমেই কোভিডকে মোকাবেলা করা অধিকতর সহজ।
নিষ্ঠুরতা ও নিঃসঙ্গতা কোভিডের বার্তা হতে পারে না। প্রতিকূলতা মানুষক ঐক্যের শিক্ষা দেয়; বিচ্ছিন্নতাবাদের নয়। বেশিরভাগ পজেটিভ মানুষগুলো চিকিৎসা ও ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের যে মানবতার মৃত্যু হচ্ছে প্রতিনিয়ত তাকে বাঁচাবে কিসে? কোভিড যেনো পজেটিভ না করে মানবতাকে; মানুষকে করে করুক। কেননা মানুষের চিকিৎসা সম্ভব; মানবতার নয়। টিকা মানুষের রোগ প্রতিরোধ কওে; মানবতার নয়। মানবতার টীকা মানুষের সুচিন্তা ও বিবেক।
কোভিডকে শক্তিহীন-দূর্বল করার একটি উপায় হলো মানসিক শক্তি বাড়িয়ে কোভিডের চেয়ে অধিক শক্তিশালী হওয়া। ইনশাআল্লাহ্ সেই শক্তি হয়তো আমরা একদিন অর্জন করতে সক্ষম হবো। সেই সাথে এটিও মনে রাখতে হবে কোভিডের চেয়ে শক্তিশালী হওয়া সম্ভব হলেও মৃত্যুর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পৃথিবীর সবকিছুকে জয় করা গেলেও মৃত্যুকে জয় করা যায় না। মৃত্যু সর্বদা অরিন্দম। তাই কোভিডে আতঙ্কিত না হয়ে, মৃত্যুকে মৃৃত্যুর চেয়ে বেশি ভয় না পেয়ে যেকোন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকা বুদ্ধিমান ও ঈমানদারের কাজ।
কোভিড আক্রান্ত মানুষকে দূরে ঠেলে না দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে তার পাশে থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব এবং সেটিই হবে উত্তম। মনে রাখা জরুরি, আজ আপনি অন্যের পাশে না থাকলে নিশ্চিত আপনার পাশেও প্রয়োজনে কাউকে পাবেন না। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত কোন কিছুই আপনার কাজে আসবে না। এখন সময় এসেছে বদলানোর। সময় এসেছে প্রচলিত স্লোগান পরিবর্তনের। “সামাজিক দূরত্ব নয়; নিরাপদ দূরত্বে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোভিড যুদ্ধে টিকিয়ে রাখতে হবে নিজেকে। টিকিয়ে রাখতে হবে এই সভ্যতাকে। টিকিয়ে রাখতে হবে বিশ্ব অর্থনীতিকে। কোভিড পৃথিবীতে কতদিন থাকবে তা আমরা কেউ জানি না, তবে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত মানুষ থাকবে সেটি নিশ্চিত। কোভিড যতদিন থাকবে কোভিডের সাথেই আমাদের বসবাস করতে হবে। হয়তো একদিন মানুষ হবে কোভিডের চেয়ে অধিক শক্তিশালী, কোভিড হবে সাধারণ সর্দি-জ্বরের মত।