আবীর আকাশ: নোয়াখালীর বসুরহাটের দিকে এখন মিডিয়ার ক্যামেরা তাক করানো। সম্প্রতি কাদের মির্জার অসংলগ্ন আচরণ ও উদ্ভট কথাবার্তায় দেশবাসী তথা গণমাধ্যমগুলোর নজর কাড়তে শুরু করেছে। কাদের মির্জা হলো আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরের ভাই। কাদের মির্জা জাতীয় কোনো নেতা বা আলোচিত কোন ব্যক্তি না হলেও সম্প্রতি বসুরহাটের পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাচ্ছেতাই বক্তব্য ও যাকে-তাকে নিয়ে মন্তব্য করেন। এতে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হয়। কাদের মির্জা বসুরহাটের মেয়র নির্বাচিত হয়েছে পুনরায় ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদে নৌকা প্রতীক নিয়ে।দলের মধ্যে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি কার মদদে মাঠে নেমেছেন? নাকি তিনি নিজেই খামখেয়ালিপনায় এসব আবোল তাবোল বলছেন, পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছেনা। নাকি এটা সত্যিই তার বিবেকের লড়াই, কে বলবে! তবে এসব পরিষ্কার হওয়া দরকার।
কাদের মির্জা ও স্থানীয় আরেক নেতা বাদলের সাথে শক্তি প্রদর্শন নিয়ে বাকযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত গোলাগুলি পর্যায়ে পৌঁছে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়। বহু লোক আহত হয়। তাদের এসব অপকর্ম কাভারেজ দিতে সংবাদকর্মী গিয়েও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, কিন্তু কেন? তাদের এ ধৃষ্টতা কে থামাবে?
ওবায়দুল কাদের এ নিয়ে কোন কথা বলছেন বা তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে কোন মন্তব্য করছেন তা শোনা যায়নি। কোম্পানীগঞ্জ বসুরহাটের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কি অবুঝ, বোকা নাকি? কাদের মির্জা ও বাদলের মতো দুই ব্যক্তির কথায় তারা একে অপরে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে কেন? তারা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে নিজেরা গুলিবিদ্ধ হবে কেন? বসুরহাটের মানুষজন কি এত অপদার্থ যে পাগলের মতো প্রলাপ আওড়ানোদের পাত্তা দিয়ে, তাদের কথামতো চলে, নিজেরা নিজেদের বুকে গুলি করবে? এর সাথে সংবাদকর্মীরাও গুলিবিদ্ধ হবে,মারা যাবে!
আফসোস! আমজনতা বুঝেনা বলে কুত্তার মত রাস্তাঘাটে মরে! সাধারন জনগন যদি বুঝতো তাহলে কাদের মির্জা ও বাদলের কথায় সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে তাদের দুইজনকে মাঠে নামিয়ে কুস্তি লাগিয়ে দিতো। তাহলে দেখা যেত কার শক্তি-সামর্থ্য কত! দু’টাকার লোভে জনতা মরে এই দুই অপদার্থের কথায়! আহারে বড় আফসোস!
কাদের মির্জা ও বাদল এমন কি নেতা যে জনগণ তাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করে? তারা এ বিপথগামীদের কি এমন সিংহাসনে বসাবে যে তার মোহে নিজেরাই গোলাগুলি করবে? বুঝলিনারে জনগণ বুঝলিনা! কবে বুঝবে? জনগণ যখন পঙ্গু হয়ে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করবে,তখন? হায়!
কাদের মির্জা ও বাদল এই দুইজনকে গোলাগুলি করতে দিয়ে তোরা জনগণ ‘মায়ের সন্তান মায়ের কোলে ফিরে যা।’ তাদের ‘মসনদ’ প্রতিষ্ঠায় তোরা কেন জীবন দিবি রে!
কুকুর-বিড়ালের মতো মারা গেলে তোদের মা, স্ত্রী-সন্তান রাস্তায় নামবে বৈকি! কাদের মির্জা বা বাদল তোদের চারদিনের মিলাদেও অংশ নিতে যাবেনা। তাদের পিছনে কিসের লোভে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ভাইয়ের বুকে (রাজনীতির নামে নোংরা চরিত্রের বহিঃপ্রকাশে) ভাই হয়ে গুলি চালাস? একবার শুদ্ধ চিন্তা করে দেখ!
এসব চিন্তা, চেতনা, মিথ্যা ভাবনার জগত থেকে প্রত্যেক জনসাধারণকে হুঁশিয়ার হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নিজের অমূল্য জীবন নিরাপদ রাখতে হবে।
কাদের মির্জার অসংলগ্ন আচরণে গতমাসখানেক ধরে দেশে-বিদেশে বিভিন্নরকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। সে কার বা কোন গোষ্ঠীর মদদে বা ছত্রছায়ায় এসব আচরণ, গোলাগুলি করছে? মানুষ মারছে! সরকারকে তার বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কাদের মির্জার ব্যাপারে সরকার ও দলের অবস্থান পরিষ্কার না হলে বড় ধরনের বিপদের ঝুঁকি আছে।
এখনই ফোকাস পেতে শুরু করেছে কাদের মির্জা। হঠাত এসব আচরণ, বক্তব্য, যারতার বিষয়ে বিষোদগার করা, মন্তব্য করা শুরু করেছে যে, সে আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করছে! যা বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে।
কাদের মির্জা ও বাদল কি এমন বড় নেতা বনেছেন যে, তাদের কথায় এত ভয়ানক হবে বসুরহাটের পরিবেশ?
কোম্পানীগঞ্জ বসুরহাটের আইন-শৃঙ্খলা দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, সিআইডি, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের কাছে কি এমন তথ্য আছে যে, কাদের মির্জা কিসের খুঁটিতে ভর করে দলের ভিআইপিদের নিয়ে অসংলগ্ন মন্তব্য, বক্তব্য প্রদান করে? কাদের মির্জা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মদদে অসৎ সাহস দেখায়। নইলে সে এত শক্তি পায় কোথা হতে? যার কারণে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করছে! এ সংঘর্ষ কিসের আলামত? নিশ্চয় স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিস্তারিত খবর কেন্দ্রে পৌঁছাবে।
আমরা অতীত থেকে শিক্ষা পেয়েছি যে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিচালিত হয় ব্যক্তিবিশেষের খেয়ালখুশিতে। বড় জটিল ঘটনা ছাড়া গঠনতন্ত্র ফলো করা হয় না। কিন্তু এসব ব্যক্তিস্বার্থ বর্জন করে ‘দলের চেয়ে দেশ বড়’ বাক্যে আড়ষ্ট হয়ে ‘ভাই হয়ে ভাইয়ের বুকে গুলি চালানো পরিহার করে শুদ্ধ রাজনীতি ও স্বচ্চ সৎ নীতিতে আসতে হবে। শুধু পরিবর্তন নয় গুণগত পরিবর্তন করতে হবে। সরকার বিরোধী রাজনীতি দেশে এখন আর নেই। বিরোধী দল কথায়, বক্তব্যে-মন্তব্যে আছে, কাজে নেই। সুতরাং দেশ এখন একচ্ছত্রভাবে সরকারদলের নিয়ন্ত্রণে। চারদিকে পৌরসভা নির্বাচনে একচেটিয়াভাবে আওয়ামীলীগ জয় পাচ্ছেন। প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপি ছিটেফোটা জয়ে আসছেন। বিএনপির চেয়ে বেশি জয়ী হচ্ছে আওয়ামীলীগের ভেতরে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
যাক বেশি কথা না বাড়িয়ে দেশ-বিদেশে নোয়াখালীর বসুরহাটের কাদের মির্জা ও বাদলের সংঘর্ষ, গোলাগুলি সমালোচিত হয়েছে। গোলাগুলিতে এপর্যন্ত পাওয়া খবরে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে,তাদের মধ্যে একজন সংবাদকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। কাদের মির্জা ও বাদলের উভয়ের কার কার লাইসেন্সকরা আগ্নেয়াস্ত্র আছে? সেসব খতিয়ে দেখতে হবে।
গোলাগুলির সময় পুলিশ সেখানে ছিল, গুলির ব্যবহার কার কাছ থেকে হয়েছে তা জানা জরুরী। তবে এ দুইজনকে দল ও মেয়র থেকে বহিষ্কার করে কঠিন সাজার আওতায় আনা দরকার। নইলে তাদের উস্কানিমূলক কথাবার্তায়, উগ্রতায় ভয়ানক হতাহতের আশংকা রয়েছে। বর্তমান রাজনীতিতে এ বড়ই অশোভনীয় ও ভয়ানক।
লেখকঃ কবি কলামিস্ট ও সাংবাদিক