পরিষ্কার সমীকরণ মাথায় নিয়ে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। জিততে পারলে ‘ডি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পানামার মুখোমুখি হতে হবে। জয় ছাড়া অন্য কোনো ফলে সেই ভাগ্যটা হবে না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্লারার লেভি’স স্টেডিয়ামে এই লক্ষ্যে মাঠে নেমে ভাগ্যটা নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি ব্রাজিল। কলম্বিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে দরিভাল জুনিয়রের দল। দুটি গোলই হয়েছে প্রথমার্ধে। ১২ মিনিটে ফ্রি–কিক থেকে দুর্দান্ত গোল করেন ব্রাজিল উইঙ্গার রাফিনিয়া। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোলটি শোধ করেন কলম্বিয়ার দানিয়েল মুনোজ।
৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে পানামার মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত করল কলম্বিয়া। ব্রাজিল ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে।
শুধু কঠিন প্রতিপক্ষই নয়, কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের অন্য দুশ্চিন্তাও আছে। হলুদ কার্ড নিষেধাজ্ঞায় সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তারকা উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে পাচ্ছে না ব্রাজিল। কলম্বিয়ার বিপক্ষে হলুদ কার্ড দেখায় নিষেধাজ্ঞাটি পেতে হলো ভিনিকে।
প্রথমার্ধ যে মেজাজে শেষ করেছিল দুই দল, বিরতির পর শুরু করেছে সেখান থেকেই। পাল্টাপাল্টি আক্রমণে লেভি’স স্টেডিয়ামের গ্যালারিভর্তি দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিল দুই দল। তবে ৮৩ মিনিটে পাওয়া গোলের সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারায় কপাল চাপড়াতে পারেন কলম্বিয়ার খেলোয়াড়েরা। বাঁ প্রান্ত থেকে লুইস দিয়াজের পাস থেকে ব্রাজিলের গোলকিপার আলিসনকে সামনে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল বোরে। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের এটাই সেরা সুযোগ ছিল কলম্বিয়ার।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঝমাঠ থেকে কলম্বিয়ান রক্ষণ চিড়তে সুচের মতো কিছু পাস ছেড়েছেন ব্রাজিল মিডফিল্ডার ব্রুনো গিমারাইস। ভিনিসিয়ুস সেগুলো ধরতে পারলেও কাজে লাগাতে পারেননি কড়া মার্কিংয়ে থাকায়। গোলের নেশায় মরিয়া ব্রাজিল ৭০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর রদ্রিগো, গিমারাইস জোয়াও গোমেজকে তুলে এদেরসন, দগলাস লুইজ ও সাভিওকে মাঠে নামিয়েছে। শেষ ২০ মিনিট বেশ চড়াও হয়ে খেলার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু কাজের কাজ যেটি, সেই গোল করতে পারেনি। ৫৯ মিনিটে দূরপাল্লার শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি পেতে পারতেন রাফিনিয়া। কলম্বিয়ান গোলকিপার ভারগাসের দৃঢ়তায় হয়নি। যোগ করা সময়ের ৪ মিনিটে গিমারাইজের বাঁকানো শট ভারগাস না ঠেকালে অবশ্য ম্যাচের ফল অন্য রকম হতে পারত।
প্রথমার্ধে রোমাঞ্চকর ফুটবল উপহার দিয়েছে দুই দল। কলম্বিয়া গুছিয়ে উঠতে সময় নিলেও ব্রাজিল শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। গতিময় খেলেছে বাঁশি বাজার পর থেকেই। কলম্বিয়াও ছেড়ে দেয়নি। ৮ মিনিটে প্রায় ৩৫ গজি ফ্রি–কিকে ব্রাজিলের পোস্ট কাঁপান কলম্বিয়ান অধিনায়ক হামেস রদ্রিগেজ। দর্শকেরা দারুণ ফ্রি–কিকটি দেখে ধাতস্থ হয়ে উঠতে না উঠতেই চার মিনিট পরই দেখা গেল আরেকটি দুর্দান্ত ফ্রি–কিক। এবার সেটি ব্রাজিলের পক্ষে।
প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া সেই ফ্রি–কিক থেকে রাফিনিয়ার করা গোল ব্রাজিলের ভক্তদের অনেক দিন মনে থাকবে। বাঁ পায়ের জোরালো শটে বলটা ধনুকের মতো বাঁকিয়ে জালে পাঠান বার্সেলোনা উইঙ্গার। কোপা আমেরিকায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৭ সালের পর সরাসরি ফ্রি–কিকে এটাই প্রথম গোল ব্রাজিলের। আর এই টুর্নামেন্টে ২৫ বছর পর সরাসরি ফ্রি–কিক থেকে গোল পেল ব্রাজিল। সর্বশেষ ফ্রি–কিক থেকে গোল পেয়েছিল ১৯৯৯ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
গোল হজম করে পিছিয়ে পড়া কলম্বিয়া মোটেও ঢিমেতালে খেলেনি। ১৫ মিনিটে কলম্বিয়ান উইঙ্গার লুইস দিয়াজের পাস থেকে দারুণ ভলি করেছিলেন রদ্রিগেজ। বল পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। দুই মিনিট পর আরও একটি ফ্রি–কিক পায় ব্রাজিল। রাফিনিয়া এবার বল পোস্টে রাখতে পারেননি। ম্যাচের ১৭ মিনিটের মধ্যে তিনটি ফ্রি–কিক পাওয়া ব্রাজিলকে দুই মিনিট পরই জাল থেকে বল কুড়োতে হয়েছে। রদ্রিগেজের ক্রস থেকে বল জালে পাঠিয়েছিলেন কলম্বিয়ান সেন্টারব্যাক দাভিনসন সানচেজ। লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তুলে ধরেন। পরে ভিএআরও জানিয়ে দেয়, সানচেজ অফসাইডে থাকায় গোলটি হয়নি।
ম্যাচে ২৪ মিনিটের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। টাচলাইনে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে ব্রাজিল মিডফিল্ডার হোয়াও গোমেজ ও কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার জেফারসন লারমার মধ্যে বেঁধে গিয়েছিল। দুজনেই হলুদ কার্ড দেখেন। পরবর্তী পাঁচ-ছয় মিনিট এ নিয়েই খেলার মাঝে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি চলেছে। এর মধ্যে ৩৪ মিনিটে আবারও ফ্রি–কিক থেকে ব্রাজিল গোলকিপার আলিসনের পরীক্ষা নেন কলম্বিয়ার তারকা মিডফিল্ডার রদ্রিগেজ।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে ভিনিসিয়ুস কলম্বিয়ান বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির দাবি করেছিল ব্রাজিল। ভিএআর প্রযুক্তিতে দেখা যায়, সেটি মোটেও ফাউল ছিল না। কলম্বিয়া ম্যাচে ফিরেছে ঠিক এক মিনিট পরই। ফরোয়ার্ড জন কর্দোবার থ্রু পাস ধরে সমতাসূচক গোল করেন রাইটব্যাক দানিয়েল মুনোজ। তবে পরিসংখ্যানে তাকিয়ে ব্রাজিল নিশ্চয়ই তখনো বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল। এই টুর্নামেন্টে ম্যাচে প্রথম গোল করে গত ৪৫ বছরে কখনো হারেনি ব্রাজিল; যদিও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ফলটি পায়নি।
প্রথমার্ধে ৮টি শট নিয়ে ৪টি পোস্টে রেখে কলম্বিয়া বেশ ভালো খেলেছে। ব্রাজিল ৩টি শট নিয়ে পোস্টে রাখতে পেরেছে ২টি। প্রথমার্ধে দুই দল মিলিয়ে ফাউলের সংখ্যা মোট ১৭টি। ম্যাচের ৭ মিনিটে রদ্রিগেজকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখা উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস নিষেধাজ্ঞার কারণে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারবেন না।
‘ডি’ গ্রুপ থেকে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্যারাগুয়েকে ২–১ গোলে হারালেও কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারেনি কোস্টারিকা। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো দলটিকে। ৩ ম্যাচে ১টি করে জয়, হার ও ড্রয়ে মোট ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় হয়েছে কোস্টারিকা। ৩ ম্যাচে কোনো পয়েন্ট না পাওয়া প্যারাগুয়ে গ্রুপের তলানিতে। ডি গ্রুপের দুই শীর্ষ দল কলম্বিয়া ও ব্রাজিল উঠেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
টেক্সাসে কিউটু স্টেডিয়ামে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের ৭ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করেছে কোস্টারিকা। ফ্রান্সিসকো ক্যালভাও ৩ মিনিটে গোল করে এগিয়ে দেওয়ার ৪ মিনিট পর গোল করেন জোসিমার আলকোসের। প্যারাগুয়ের হয়ে ৫৫ মিনিটে গোলটি করেন র্যামন সোসা।