চা রফতানির ক্রমেই অবনতি

tulsi-tea

পিবিএ ডেস্ক: ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে চা রপ্তানি। বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে এর রেশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চা থেকে রফতানি আয়ে তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকার মোট রফতানি আয়ের প্রায় ১৪ শতাংশ আর ভারতের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ চা থেকে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ চা থেকে অর্জিত হয়েছে।

চা রফতানির চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথম ছয় মাসে চা থেকে রফতানি আয় এসেছে ১০ লাখ ৭১ হাজার ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০ লাখ ৭৭ হাজার মার্কিন ডলার। গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ডলার আয় এসেছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে।

রফতানি কমলেও ২০১৮ সালে চা উৎপাদনে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। চা চাষের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। এ সময় ৮ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি রফতানি হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নবম।

একটানা কয়েক বছর ধরেই দশম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। গত শতাব্দীর শেষে চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম, ১৯৮৯ সালে ছিল ১২তম। চা উৎপাদনে এখন শীর্ষে রয়েছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। উৎপাদনে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে কেনিয়া, শ্রীলংকা, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশের নিচে আছে জাপান, উগান্ডা, নেপাল, ইরান, মিয়ানমারের মতো দেশগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চা রফতানির পরিমাণ প্রতিবছরই শুধু কমছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনজনিত কারণে চা ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে চায়ের উৎপাদন এবং রফতানি আয় বাড়াতে হলে বাজারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এটি বাস্তবায়নে চা শিল্পের কারখানার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক ঋণ সুবিধা, সর্বাধুনিক উৎপাদন কৌশল অবলম্বন, উন্নতমানের চারা এবং চাষযোগ্য ভূমির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

চা রফতানি

২০১০ সালের আগে চা রফতানি এক কোটি কেজির বেশি থাকলেও ওই বছর থেকে রফতানি কমতে শুরু করে। আর গত ক’বছরে তা কমতে কমতে গত বছর পাঁচ লাখ কেজির নিচে নিমে এসেছে। চা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০০৭ সালে দেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার কেজি। ওই বছর দেশে কোনো চা আমদানি করা হয়নি। রফতানি হয়েছিল ১ কোটি ৫৬ লাখ কেজি। ২০০৮ সালে ৫ কোটি ৮৬ লাখ ষাট হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়।

ওই বছরও আমদানি করা হয়নি। রফতানি হয় ৮৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা পাতা। ২০০৯ সালে চা উৎপাদিত হয় ৫ কোটি ৯০ লাখ ৯ হাজার কেজি। কোনো চা পাতা ওই বছরও আমদানি করা হয়নি। রফতানি হয় ৩১ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা পাতা। ২০১০ সালে দেশে চা পাতা উৎপাদিত হয় ৬ কোটি ৪ লাখ কেজি। আর ওই বছর প্রথম চা পাতা আমদানি করা হয় দেশে।

২০১০ সালে দেশে ৪১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা পাতা আমদানি করা হয়। ওই বছর রফতানিতে প্রথম বড় ধরনের ধস নামে। ওই বছর রফতানি হয় মাত্র ৫ লাখ কেজি। এরপর থেকে প্রতিবছরই চা পাতা আমদানি বাড়তে থাকে। কমতে থাকে রফতানি। ২০১৬ সালে দেশে চা পাতা উৎপাদিত হয় ৮ কোটি ৫৫ লাখ কেজি। আমদানি হয় ৭৭ লাখ কেজি।

রফতানি হয় মাত্র ৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি। আর গত বছর তা আরও বেহাল অবস্থায় ঠেকে। গতবছর দেশে চা উৎপাদিত হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজির মতো। আমদানি হয়েছে ৮২ লাখ কেজি। আর রফতানি হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কেজির মতো। ২০১৭ সালে চা উৎপাদন হয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজি।

মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম এবং বান্দরবানে মোট ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে চাষযোগ্য ভূমির পরিমাণ ৬৪ হাজার ৮৮৬ দশমিক ২৫ হেক্টর। তবে চা চাষ হয় মোট ৫৯ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে।

চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, কুয়েত, ওমান, সুদান, জাপান, পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চা রফতানি হচ্ছে।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...