অলোক আচার্য: বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছর দূরে থাকার নিষেধাজ্ঞার শাস্তি দিয়েছে আইসিসি। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পেলেও ভুল স্বীকার করায় এক বছরের শাস্তি কমানো হয়েছে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব তিনবার গোপন করার অপরাধে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ২৯ শে অক্টোবর থেকে আবার ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন। গণমাধ্যমে এমন আসার পর থেকেই ক্রিকেট নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
এই খবরে গোটা বাংলাদেশই আজ ভারাক্রান্ত। সামনে ভারতের সাথে সিরিজ কিন্তু আমরা তার খেলা দেখতে পারবো না। এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য এবং সর্বোপরি গোটা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য একটি দুঃসংবাদ। কেননা কোনো ভালো ক্রিকেটারের খেলা কেবল সেই দেশের মানুষকে আনন্দ দেয় না বরং তা সারা বিশ্বের মানুষেরই মন কেড়ে নেয়। সাকিব মূলত বিশ্ব মানের একজন খেলোয়াড় এবং আমার বিশ্বাস আমরা অতি ভাগ্য করেই এরকম একজন বিশ^মানের অলরাউন্ডারকে দলে পেয়েছি। আমরা যখন শচিন টেন্ডলকার, জয়সুরিয়া,শহিদ আফ্রিদি বা ব্রায়ান লারার খেলা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতাম সেরকমভাবেই বিশ^ এখন সাকিবের খেলা দেখার জন্য অপেক্ষা করে। তার অলরাউন্ড নৈপূণ্য বাংলাদেশকে বহুবার জয়ের মুখ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ক্রিকেট। বাংলাদেশ,শ্রীলংকা,ভারত ও পাকিস্থানের মানুষের ক্রিকেটপ্রিয় অন্যসব দেশের চেয়ে বেশি। এসব দেশের খেলাতে দর্শকদের উপচে পরা ভিড়ই প্রমাণ করে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। সেই সাথে যারা এই খেলা মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারাও জনপ্রিয়। প্রত্যেকেরই কমবেশি অবদান থাকে দেশের বিজয়ে। প্রত্যেক দেশেরই কিছু খেলোয়াড় থাকে যারা হয় সেদেশের ক্রিকেট ভক্তদের প্রাণ। সাকিব সেরকম একজন খেলোয়াড়। যার খেলার ধরন অনায়াসেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে জায়গা করে দেয়। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের প্রতিটি অধ্যায় এদেশের মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। প্রতিটি বিশ্ব শক্তির বিরুদ্ধে জয়ের এক একটা ইতিহাস আমাদের মনে আছে। ফুটবলের আলো এদেশে বহুবছর ম্রিয়মান। তবে ক্রিকেটটা গত কয়েক বছর ধরেই অধিক উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে। বাঘা বাঘা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগারা।
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষের আনন্দের একটি বড় উৎস হলো ক্রিকেট। আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবি,ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নের কথা আজ না বলি। ক্রিকেট আমাদের কাছে আবেগ। আর ক্রিকেটের অগ্রভাগে থেকে যে লড়াকু সৈনিকরা ক্রিকেটকে আজকের অবস্থায় এনেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো মাশরাফি,সাকিব,তামিম,মুশফিকুর,মোস্তাফিজ,লিটন,সৌম্য। আরো অনেকে আছেন। তাদের জন্যই আমাদের আজকের ক্রিকেট বিশ্ব প্রতিযোগীতায় সগর্বে অবস্থান করছে। কিন্তু হঠাৎ যেন আমাদের ক্রিকেটাঙ্গণে শান্তির সুরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অস্থিরতা কেবল ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মাঝেই সিমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে গেছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমী কোটি কোটি মানুষের ভেতর। সাকিব আল হাসানের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হওয়ার শাস্তি আমাদের কাছে একটি বজ্রপাতের মতো।
আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। সামনে ভারত সফর। সেই সফরে সাকিবের খেলা দেখতে পারবো না ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। ক্রিকেটারদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন যখন মিটে গেছে এবং আমরা প্রত্যাশা করছি যে সব ঠিক আছে তখনই সাকিবের এই সংবাদ আমাদের ব্যথিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাই এ নিয়ে নানা মতামতে ভরে গেছে। দেশের মানুষ সাকিবকে কতটা ভালোবাসে তারই প্রমাণ এসব। আসলে কেবল সাকিব নয় দেশের ক্রিকেটকে ভালোবাসি বলেই এই দুশ্চিন্তা। আমরা বিশ্বাস করি সাবিক যেদিন ফিরবে সেদিন তার সেই অলরাউন্ড নৈপূন্যেই ফিরবেন। তবে মাঝখানে তাকে এই দিনগুলো দিন পাওয়া যাবে না এটাই আফসোসের। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অর্জন তা যেন গোটা বিশ্ব দেখছে। সমন্বিত নৈপূণ্যে বাংলাদেশ দল আজ কোথায় পৌছে যাচ্ছে তা যেন কোন সীমায় বাধা যায় না। বিগত দুই বিশ্ব কাপেই আমাদের দেশ ভালো খেলেছে। আমরা সেই খেলা দেখে আনন্দিত হয়েছি। বিশ্বকাপ আমাদের কাছে একটি স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ একদিন বাংলার সোনার ছেলেরা এই দেশের মাটিতে নিয়ে আসবে এ আমাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থেকেই আমরা সবসময় আমাদেও ক্রিকেটাদেও পাশে থাকি, তাদেও উৎসাহ দেই অনুপ্রেরণা দেই। সেই সাথে এটাও বিশ্বাস করি যে সেই দলে সাকিব আল হাসান থাকবেন এবং দেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।
আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে অবস্থায় দাড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন সময়ের ক্রিকেটাররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দলীয় প্রচেষ্টা ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। তবে মাশরাফির নেতৃত্বে অন্য এক বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। বর্তমান ক্রিকেট দল আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের যেকোন সময়ের চেয়ে সেরা পারফরম্যান্স করা একটি দল। এই দল একটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল। যেখানে নিখাদ ব্যাটসম্যান, বোলার এবং অলরাউন্ডারের সমন্বয় রয়েছে। দল হারলে আমাদের চোখেও জল আসে। আমরা ব্যথিত হই। দল জিতলে আমরা উল্লাস করি। আমাদের ভালবাসা প্রকাশ করি। কারণ সেই আবেগ। ক্রিকেটটা আমাদের কাছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করি। আমরা এভাবেই আমাদের ক্রিকেট দলকে নিয়ে চিৎকার করতে চাই। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে চাই তাকিয়ে দেখ আমরা ক্রিকেট জগতে রাজত্ব করতে এসেছি। ওয়ানডে,টি টুয়েন্টি বা টেষ্ট যেকোন ফরম্যাটেই আমাদের লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জিততে পারি। এই দুর্দান্ত বাংলাদেশের একজন সাকিব আল হাসান। তিনি অবশ্যই ফিরবেন। ততদিন বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমী তার সাথে আছে।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট