বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি

ক্ষতিপুরণের দাবিতে পাঁচ হাজার নারী-পুরুষের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

প্লাবন শুভ,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ গ্রামবাসী রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ক্ষতিপুরণসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

সকাল ১০ টায় ক্ষতিগ্রস্ত দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে খনিএলাকায় এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ শেষে কয়লাখনির প্রধান ফটকের সামনে সকাল ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ১৩ গ্রামের প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ অংশ নেন।

মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্ত দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা, আলী হোসেন, রবিউল ইসলাম ম-ল, আল বেরনী, আবেদ আলী, সাইদুল ইসলাম, মনিরুজ্জামানসহ আরো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী প্রমুখ।

৬ দফা দাবিতে রয়েছে, খনি কর্তৃপক্ষের সমঝোতা চুক্তি মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে স্থায়ী চাকুরি প্রদান, ১৩ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ীগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন গ্রামবাসী তাদেরকে পুনর্বাসন করা, ভূমিহীন প্রতিটি পরিবারকে উন্নতমানের বাসস্থন তৈরি করে দেয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের এককালিন অবশিষ্ট ক্ষতিপুরণের টাকা দেয়া, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করাসহ মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও রাস্তা পুননির্মাণ করা এবং যেসকল ক্ষতিগ্রস্তদের জমি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে াতাদেরকে উৎপাদিত কয়লার ৫শতাংশ বোনাস দেয়া।

ক্ষতিগ্রস্ত দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, খনিএলাকার বৈগ্রাম-কাশিয়া ডাঙ্গা, মোবারকপুর, জব্বর পাড়া, দক্ষিণ রসুলপুর (বড়), দক্ষিণ রসুলপুর (ছোট), পূর্ব জ্জবর পাড়া, চক মহেশপুর, হামিদপুর, উত্তর চৌহাটি, চৌহাটি, সাহাগ্রাম, দুর্গাপুর এই ১৩ গ্রামের ঘরবাড়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি আদায়ে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়না। পরে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ফের লিখিত অভিযোগ করলে ১২ ফেব্রুয়ারী তারিখের মধ্যে ক্ষতিপুরণের দাবিতে খনিকর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়। তারপরও খনিকর্তৃপক্ষের বিভিন্নভাবে টালবাহানা করে আসছে।

তিনি আরো বলেন, ভূগর্ভে মাইন বিষ্ফোরণের কারণে বিকট শব্দ ও কম্পনে হামিদপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া, বাঁশপুকুর, মথুরাপুর, বৈদ্যনাথপুর, শিবকৃষ্ণপুর, পাতিগ্রাম, পাঁচঘরিয়া, চৌহাটি, কালুপাড়া, গোপালপাড়া, কাশিয়া ডাঙ্গা ও বৈগ্রাম মোট ১৩টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার ৪০০টি ঘরবাড়ীতে ফাটল ধরছে। অনেক ঘরবাড়ী ভেঙে ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে। আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য আন্দোলন করেও সুরাহ পাচ্ছি না। আমরা ক্ষতি কর্তৃপক্ষকে ৬ দফা দাবি দিয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, ক্ষতিগ্রস্ত এই ১৩ গ্রামবাসীকে ক্ষতিপুুরণ প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করতে।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, খনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়ে থাকে। এতে ঘরবাড়ীতে কিছু ফাটল দেখা দিতে পারে তবে দুর্বল নির্মাণ কাজের ঘরবাড়ীতে এটি বেশি দেখা দিয়ে থাকে। এলাকাবাসীর ঘরবাড়ীতে ফাটল দেখা দেওয়াসহ ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে সার্ভে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করেছেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন...