পিবিএ,খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারনে ছয় মাস বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুক্রবার(২৮শে আগস্ট) থেকে গেইট খুলছে খাগড়াছড়ি সকল পর্যটন কেন্দ্র। পার্শ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার-রাঙ্গামাটি-বান্দরবানের পরে শর্তসাপেক্ষে ও সীমিত পরিসরে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এজন্য দর্শনার্থীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধানসহ মানতে হবে ছয় শর্ত।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর অবশেষে রোববার(২৩শে আগস্ট) খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এর ফলে সব পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোর উপর করোনা কালীন সরকারি বাধা নিষেধ উঠে যাবে। জেলা করোনাভাইরাস(কোভিড-১৯) বিষয়ক জেলা কমিটির সভা শেষে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ২৮শে আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত ছয় শর্ত মেনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্ক, রিছাং ঝর্না, আলুটিলা গুহা পর্যটন কেন্দ্র ও মায়াবিনী লেক সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হবে। শর্তের মধ্যে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশের আগে মাস্ক পরিধান, স্যানিটাইজার/সাবান দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা, অসুস্থ অবস্থায় পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ না করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পর্যটন কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অন্যতম।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই দশকে গড়ে ওঠা খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। পর্যটকশূন্য হওয়ায় টানা আর্থিক ক্ষতির মুখে এই খাতে সকল পর্যটন শিল্প। এদিকে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করে এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পাবে পাহাড়ের পর্যটন শিল্প। আর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রশাসন সুূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার করোনা ভাইরাস(কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে গঠিত জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৮শে আগস্ট শুক্রবার থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহ পর্যটকদের জন্য শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে খাগড়াছড়ি পর্যটন কেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল-মোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে প্রায় ছয় মাস ধরে পর্যটন বন্ধ ছিল। জেলায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউনের পাশাপাশি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সকল পর্যটনকেন্দ্র ও হোটেল গুলি। এতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির মুখে ছিল পর্যটন সম্পৃক্ত ব্যাবসা প্রতিষ্টান, ব্যাবসায়ী ও হাজারো সেবা প্রদানকারী কর্মী গন।
২৩শে আগষ্ট খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস যেহেতু পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না তাই নিজেকে নিজের সুরক্ষা করে এ ভাইরাসের সাথে টিকে থাকতে হবে। দেশের অন্যান্য জেলাতে ইতিমধ্যে যেহেতু পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে তাই ২৮শে আগষ্ট থেকে এ জেলার পর্যটনকেন্দ্র গুলিও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে থাকবে নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জেলায় করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম,কক্সবাজার-রাঙ্গামাটি-বান্দরবানসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পর্যটন খুলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য খাগড়াছড়ি হোটেল-মোটেল খুলে দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহামারি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কল্পে গঠিত জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহ পর্যটকদের জন্য শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসক।
শর্তসমূহ:- ১. আগামী ২৮শে আগস্ট ২০২০ তারিখ হতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পর্যটন স্পটসমূহ(জেলা পরিষদ পার্ক, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা ও মায়াবিনী লেক) সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া যাবে। ২. পর্যটন কেন্দ্র সমূহে আগত পর্যটকগণকে মাস্ক পরিধান ব্যতিত পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। ৩.পর্যটন কেন্দ্র সমূহের প্রবেশ মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/সাবান দিয়ে পর্যটক গণের হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ৪. শারিরীকভাবে অসুস্থ অবস্থায় পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করা যাবে না।
সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে:-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি/বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক প্রণীত নির্দেশনা যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে বলে গন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসক।
জেলার পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জেলা শহর ও উপজেলাগুলোতে প্রায় ১শ টিরও বেশি আবাসিক হোটেল-মোটেলে পর্যটন মৌসুমে দৈনিক পাঁচ হাজারের বেশি -পর্যটক আসেন। পর্যটকদের সেবায় আবাসিক হোটেল-মোটেলে প্রায় ৪হাজার জনকর্মী, ট্যুরিস্ট গাইডসহ,৭/৮শতাধিক গাড়িচালক ও চালকের সহকারী এবং খাবারের দোকানের কর্মচারীদের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে।
খাগড়াছড়ি শহরের মনটানা হোটেল ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, ‘পর্যটন খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।’ সরকারি বিধি নিষেধ মেনে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান চালু করবো।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত গত ২৩শে আগস্ট রোববার গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,আগামী ২৮শে আগস্ট ২০২০ তারিখ হতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পর্যটন স্পটসমূহ( জেলা পরিষদ পার্ক, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা ও মায়াবিনী লেক) সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া যাবে, পর্যটন কেন্দ্র সমূহে আগত পর্যটক গণকে মাস্ক পরিধান ব্যতিত পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। পর্যটন কেন্দ্র সমূহের প্রবেশ মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সাবান দিয়ে পর্যটকগণের হাত জীবানুমুক্ত করতে হবে। শারিরীকভাবে অসুস্থ অবস্থায় পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করা যাবে না। সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি(বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক প্রণীত নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে)। তবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করলে বা জেলায় কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন সময়ে এ অনুেমাদন আবার বাতিল করা হতে পারে বলে জানান।
জেলাতে চরম দুর্ভোগ ও আর্থিক সংকটে, ফাঁকা পর্যটন কেন্দ্রগুলো:- খাগড়াছড়ি জেলার করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর সুনসান নীরব পাহাড়ী জেলার সবকটি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১৮মার্চ ঘোষনার পর ১৯মার্চ থেকে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। তার ধারাবাহিকতায় বৈসাবি-ঈদেও খুলেনি এ দ্বার। এতে চরম দুর্ভোগ ও আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ খাত সংশ্লিষ্টদের। অন্যান্য বছর পাহাড়ে বৈসাবি অনুষ্টান ও ঈদের আগের দিন থেকে খাগড়াছড়ি ও সাজেকসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণে ভিড় থাকলেও এ বছর তা হয়নি।
বৈসাবি অনুষ্টান ও ঈদ মানে আনন্দ। বৈসাবি অনুষ্টান ও ঈদ মানে খুশি। আর প্রতি বছর এই বিশেষ দিনগুলো পরিবার নিয়ে সবাই কমবেশি ঘুরতে যান। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। তবে এবার মহামারি করোনার কারণে ম্লাণ বৈসাবি অনুষ্টান ও ঈদ উৎসব। তাই পর্যটকদের উপস্থিতি না থাকায় খালি পড়ে আছে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
ঠিক এক বছর আগেও এই দিনে ঝাকে ঝাকে, দল বেধে হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটেছে খাগড়াছড়িতে। সকাল হতেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকবাহী গাড়িতে ভরে যেত জেলার প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বর। সেখান থেকেই পরিবার নিয়ে পছন্দের পর্যটন স্পটে ছুটতেন পর্যটকরা।
জেলার আলুটিলা, সুরঙ্গ, রিছাং ঝরনা, পাজেপ হর্টি কালচার পার্ক, মায়াবিনী লেকে এখন পর্যটক শূন্য। দেশের অন্যতম ক্রেজি স্পট সাজেকে ভ্রমণপিপাসুরা যাচ্ছে না অনেক দিন। করোনার কারণে গত ছয় মাস ধরে মন্দা পর্যটন ব্যবসা। অনেক হোটেল, মোটেল আপাতত বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি থাকলে পর্যটন খাতে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার মুখে পড়তে হবে বলে জানান তারা।
যানবাহন, হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে যেত মাসখানেক আগে থেকে। তাৎক্ষণিক এসে হোটেল কিংবা যানবাহন বিড়ম্বনা যেন স্বাভাবিক ছিল। ঠিক এক বছরের মাথায় মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে উল্টো চিত্র খাগড়াছড়িতে। সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী গত ছয় মাস ধরে বন্ধ দোকানপাট। চলছে না যানবাহন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হোটেল। পর্যটকদের উপস্থিতি না থাকায় খালি পড়ে আছে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
স্থানীয় খাবারের স্থান:-পান খাইয়া পাড়ার ”সিষ্টেম রেষ্টোরেন্ট, ”খাংময় রেষ্টোরেন্ট, মহাজন পাড়ার ”ইজোড় রেষ্টোরেন্ট, বেম্বো সট রেষ্টোরেন্ট, শাপলাচত্বরে মনটানা রেষ্টোরেন্ট, ভাই ভাই রেষ্টোরেন্ট।
সরকারের নির্দেশনা ও স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে বন্ধ এসব কেন্দ্র। পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট পরিবহন, হোটেল মোটেল ও খাবার হোটেলের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লোকসান গুনছেন লাখ লাখ টাকা। অনেকে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেউলিয়া হওয়ার পথে। সবশেষ চরম হুমকিতে রয়েছে বেসরকারি ভাবে বিনিয়োগকারীরা। ভরা মৌসুমে ব্যবসা বন্ধ থাকায় স্টাফদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য খরচ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা না আসলে বিকাশমান এ খাতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা মুখ ফিরিয়ে নিবে বলে মনে করছেন অনেকে।
মায়াবিনী লেক পরিচালনা কমিটির সভাপতি অংহ্লাপ্রু মারমা জানান, বৈসাবি ও ঈদে আমরা যে পরিমাণ পর্যটক পেতাম তা পুরো বছরের অর্ধেক। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর এ দুই মৌসুম কাজে লাগানো যায়নি। এতে করে এ কেন্দ্র চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্টাফদের বেতন ও অন্যান্য খরচ চালাতে হচ্ছে। ৬ মাসে ৫০লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন যদি সরকার আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে না।
পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্কের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো: আজিজুর রহমান জানান, নিজের জমানো কিছু ও পরিচিত জনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে এ বছরের শুরুতে দোকান দিয়েছেন। শুরুতে ব্যবসা ভাল চললেও ছয় মাস বন্ধ। এখন ধারের টাকা দিতে ও সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ার উপক্রম। একদিকে ব্যবসা বন্ধ অন্যদিকে দোকানে থাকা মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এক অনিশ্চয়তা অপেক্ষা করছে জানিয়ে সরকারের সহযোগিতা চান তিনিও।
পরিবহণ চালক মো: আবদুল মান্নান জানান, ৬ মাস ধরে আয় রোজগার বন্ধ। কি ভাবে কাটছে আমাদের কেউ কোন দিন এসে খবর নেয় না।
পরিবহন সমিতির মো: আবু বকর জানান, বৈসাবি অনুষ্টান ও ঈদের আগে-পরে খাগড়াছড়িতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসা শুরু করতো, কিন্তু এবারে তার উল্টো চিত্র। পর্যটকদের চাপ ২/৩দিন লেগে থাকতো। বর্তমানে চাহিদা অনুসারে আমাদের পরিবহন সংকটও দেখা দিতো,তা এখন নেই।
ট্যুরিস্ট পুলিশ খাগড়াছড়ি জোন-এর পরিদর্শক সন্তোষ ধামেই বলেন, খাগড়াছড়িতে আসা পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পর্যটন স্পর্টে নিয়োগ করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ। ফলে পুরো জেলার পর্যটন ষ্পর্টগুলো নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছে।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাহউদ্দিন জানান, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে যেন কেউ প্রবেশ পথে করা ভাবে সে দিকে নজরদারি রয়েছে। পুলিশ মোতায়ন রয়েছে অনেক কেন্দ্রের প্রবেশমুখে।
পর্যটকদের পছন্দের খাবারের প্রতিষ্ঠান মন টানা হোটেলের পরিচালক রুবেল পারভেজ জানান, বৈসাবি অনুষ্টান ও ঈদের বন্ধে আসা পর্যটকদের জন্য প্রতিদিন তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ জনের খাওয়ার আয়োজন করা হতো। কিন্তু এ বছর প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে হোটেল বন্ধ। ২০জন কর্মচারীর অধিকাংশ এখন বেকার।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যান মিত্র বড়ুয়া বলেন, করোনার প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ পর্যটনখাত। আর পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে হোটেল মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ছয় মাস ধরে খাগড়াছড়ির ৩০টির অধিক হোটেল বন্ধ রয়েছে। আয় না থাকায় অনেক হোটেল কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তিনি পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনার আহ্বান জানান।
পর্যটন কেন্দ্র সমুহ:-উল্লেখ্য বৈসাবি অনুষ্টান, ঈদ-উল-আজহার ও কোরবানে দীর্ঘ টানা ছুটিতে জেলার ৯টি উপজেলাতে এবার পর্যটকদের ভিড় কমেছে, একেবারেই নেই। প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্য ও তর তর করে বয়ে চলা ঝর্ণার উচ্ছ্বলতায় গা ভাসাতে পাহাড়ি কন্যা খাগড়াছড়িতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতো লাখো সৌন্দর্য্য পিপাসু পর্যটক। খাগড়াছড়ির মাটিরাংগায় আলুটিলা হৃদয় মেম্বার পাড়া রিছাং ঝর্ণা, দীঘিনালা তৈদুছড়া ঝরণা, হাজাছড়া ঝর্ণা, আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্কের জুলন্ত সেতু, পানছড়ি কংচাইরী পাড়া মায়াবিনী লেক, মাইসছড়ি নুনছড়ি দেবতা পুকুর, জেলার ভারত সীমান্ত শহর রামগড়ে তৎকালীন মহাকুমা বাংলাদেশ রাইফেলস অথাৎ বিডিআরের বর্তমানে বিজিবি’র ‘জম্ম স্থান’, রামগড় বৃহত্তম চা বাগান, কৃত্রিম লেক ও রামগড় জুলন্ত সেতুসহ প্রতিটি পর্যটন র্স্পটে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের দেখা মেলতো। যার ফলে অতিরিক্ত পর্যটকের ভারে পরিবহন সংকটও প্রায় দেখা দিতো।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক উপভোগ:-খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির ইনষ্টিটিউটের ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করা। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় জীবনধারা, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি তৈরীর নজরকাড়া হাজারো চিত্র। চারপাশে বিছিয়ে রাখা শুভ্র মেঘের চাদরের নীচে রয়েছে সবুজ বনরাজিতে ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে আঁকা-বাঁকা সড়ক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে খাগড়াছড়িতে আসা পর্যটকদের থাকার-খাওয়ার প্রস্তুত থাকতো বহু হোটেল-রেস্টুরেন্ট।
পর্যটন আসার যাত্রীবাহি ষ্টেশন:-ঢাকা হতে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ৩১৬কি.মি. ও চট্টগ্রাম থেকে ১০৯কি.মি.। রাজধানী শহর ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান, গাবতলী থেকে সরাসরি শান্তি পরিবহন, এস আলম, হানিফ, সোডিয়া, সেন্টমার্টিন, শ্যামলী, ইকোনোসহ ইত্যাদি অনেক বিলাস বহুল বাসযোগে খাগড়াছড়ি আসতে পারেন আপনি। তবে আসার আগে করোনা কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মোকাবিলা সরকারী সব নির্দ্দেশনা মেনে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে আসতে হবে। অন্যথায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের(কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে গেল ১৮ই মার্চ থেকে সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসন। একই সময় থেকে রাঙামাটির সাজেক পর্যটন কেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে পাহাড়ের লাভজনক পর্যটন শিল্পখাত।
পিবিএ/চাইথোয়াই মারমা/এসডি