খাবার গলায় আটকে গেলে কী করবেন?

পিবিএ ডেস্ক: খাদ্যনালী দিয়ে খাবার পেটে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু খাদ্যনালী দিয়ে না হয়ে যদি খাবার অন্য কোনো নালী দিয়ে প্রবেশ করে সেক্ষেত্রে নিঃশ্বাস আটকে যেতে পারে। গলার কাছে কিছু একটা আটকে গেছে- এমন বোধ হতে পারে।

চোকিং বা গলায় খাবার আটকে যাওয়ার এই সমস্যা যে কারও সাথেই ঘটতে পারে। সাধারণত, চোকিং-এর ক্ষেত্রে খাদ্যনালী দিয়ে খাবার না প্রবেশ করে এসময় নিঃশ্বাস নেওয়ার পথে প্রবেশ করে। ফলে ফুসফুস দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কফ, হাঁচি, বুকে ব্যথা- এমন সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।

তবে গলায় খাবার আটকে যাওয়ার এই সমস্যা যদি বড় আকারে হয়ে থাকে এবং খুব দ্রুত এর কোনো সমাধান না নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। মানুষ নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিলে এরপর মস্তিষ্ক কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ৫ মিনিট সময় নেয়। তাই, ছোট ব্যাপার হলেও এই সমস্যাটিকে অবহেলা করা যাবে না একেবারেই!

কোন ধরণের খাবারগুলো বেশি গলায় আটকে যায়?

চোকিং বা খাবার গলায় আটকে যাওয়া সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। যে খাবারগুলো গ্রহণ করলে চোকিং বেশি ঘটতে পারে যেগুলো হলো-

ভাজাপোড়া শক্ত খাবার

চুইংগাম

ক্যান্ডি

বাদাম

পনির

পপকর্ন

কাঁচা সবজি ইত্যাদি।
এছাড়াও অন্যান্য খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে চোকিং-এর ঘটনা ঘটতে পারে।

খাবার গলায় আটকে যাওয়ার সাধারণ কারণগুলো-

অনেক কারণেই খাবার গলায় আটকে যেতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিচের কারণগুলোর ফলাফল হিসেবে চোকিং বেশি হয়ে থাকে।

১। বয়স-

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে গ্যাগ রিফ্লেক্স কমে যেতে থাকে। আর এর ফলাফল হিসেবে মানুষের গলায় খাবার আটকে যেতে পারে।

২। অ্যালকোহল সেবন-

অনেকসময় অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করলে সেটি মানুষের খাবার খাওয়ার সময় যে গ্যাগ রিফ্লেক্স হয় সেটাকে কমিয়ে দেয়। ফলে খাবার গলায় আটকে যায়।

৩। অসুখ-

অনেকসময় অসুখের কারণে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে। এই যেমন- পারকিন্সন্স ডিজিজের ক্ষেত্রে মানুষ খাবার গেলার প্রক্রিয়া ভুলে যায়। অনেকসময় তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে, গলায় খাবার আটকে যায়।

৪। খাবারের পরিমাণ-

আপনি অনেক বড় কামড়ে খাবার নিলে সেটা চিবিয়ে ফেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। ফলে না চিবানো খাবার গলায় প্রবেশ করে আটকে যায়। অনেক সময়, বাদামের মতো খুব ছোট খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেও সেটি আমাদের শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে এবং চোকিং সৃষ্টি করে।

৫। খাবারের দিকে মনোযোগ না থাকা-

এই সমস্যাটি বেশিরভাগ সময় শিশুদের ক্ষেত্রে হয়, কারণ তারা খাওয়ার সময় খেলতে থাকে, টেলিভিশন দেখতে থাকে বা দৌড়াদৌড়ি করে। ফলে খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ তাহকে কম। গলায় খাবার আটকে যায়। আপনি যদি খাওয়ার সময় অন্য কাজও করেন, সেক্ষেত্রেও এই সমস্যাটি হতে পারে।

শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গেলে কী করা উচিত?

শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গেলে সাথে সাথে গলায় হাত দিয়ে আশেপাশের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনার গলায় খাবার আটকে গিয়েছে। কেউ আশেপাশে না থাকলে চিকিৎসককে ফোন করুন। আর একইসাথে নিজের নাভীর উপরে একটি হাত রাখুন। আরেকটি হাত আগের হাতের উপরে রেখে জোরে চাপ দিন। বাঁকা হয়ে শক্ত কোনো স্থানে বসুন। জোরে জোরে নিজের হাত উপর-নিচ করতে থাকুন।

অনেকসময় খাবার আমাদের খাদ্যনালী দিয়েই প্রবেশ করে, তবে সেটা আটকে যায়। গিলতে সমস্যা হয়। লক্ষণ একই হলেও বোঝার চেষ্টা করুন যে ঠিক কোন সমস্যাটি আপনার হয়েছে। খাদ্যনালীতেই খাবার আটকে গেলে পানি খেয়ে সেটাকে নামানোর চেষ্টা করুন।

তবে আপনার গলায় যদি কোনো হাড় আটকে গিয়ে থাকে তাহলে সেটা কখনোই নিজে আঙ্গুল দিয়ে বের করার চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনিই আঘাত পেতে পারেন।

মূল লেখক : ডক্টর ডেনিস ছুয়া, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।

পিবিএ/এমএস

আরও পড়ুন...