পিবিএ,ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চান না নেতৃবৃন্দ। তারা আন্দোলন করে তাঁকে মুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
রোববার (৭ এপ্রিল) খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে আয়োজিত গণঅনশনে বিএনপির নেতারা এ অঙ্গীকার করেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ছয় ঘণ্টার এ অনশন পালন করে বিএনপি।
অনশন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন কখনও প্যারোলে মুক্তি চাননি; প্যারোল কী জিনিস, তা তিনি জানেন না। তিনি জনগণের নেত্রী, আন্দোলন করে জনগণ তাকে মুক্ত করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমরা কোনও প্যারোলে মুক্তির কথা বলি নাই। কারণ পরিষ্কারভাবে বলছি, জামিন পাওয়া তার অধিকার। যে মামলায় তাকে জোর করে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেই মামলায় অন্য ব্যক্তিরা জামিনে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য যা করা দরকার আমরা করবো। সরকার কেন তাকে বাইরে রাখতে ভয় পায়? কারণ তিনি গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। ’৯০ সালে তিনি মানুষকে গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন।’
সরকার দেশটাকে একেবারে কারাগারে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে, সমস্ত অর্জন নষ্ট করে দিয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি অনেকের সঙ্গে একমত। আর বেশি দিন খালেদা জিয়াকে জনবিচ্ছিন্ন সরকার কারাগারে রাখতে পারবে না। তার কারাবাস গণতন্ত্রের একটি অংশ। পৃথিবীর বহু দেশে নেতারা কারাগারে থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন। সত্যের জয় করেছেন। তিনি এ দেশে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তা সত্য প্রমাণিত করবেন।’
দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা প্যারোলে মুক্তি নিয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নেননি। তিনি প্যারোলে কী, তা জানেন না।’
সরকারের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘সরকার বলছে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারেন। তাহলে আদালতে গিয়ে তার জামিনে বাধা দিচ্ছেন কেন? তার মুক্তির জন্য কারো অনুকম্পা চাই না। জনগণের নেত্রী তাদের মাঝে ফিরে আসবে। আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আইনি লড়াই ও স্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আজকেও পত্রিকায় দেখলাম বেগম খালেদা জিয়া যদি চান প্যারোল হবে। আমি আশা করবো বঙ্গবন্ধু যেমন প্যারোলে মুক্তি দিয়ে রাউলপিন্ডিতে আইয়ুব খানের সঙ্গে আলোচনা করতে যাননি। দ্বিতীয় নজির হবে যখন খালেদা জিয়া কোথাও প্যারোলে যাবেন না। প্যারোলে মুক্তি হবে তার মৃত্যু, গণতন্ত্রের মৃত্যু। এই জন্য আমি আপনাদের সঙ্গে শুধু সংহতি নয়, পায়ে পা মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খালেদা জিয়া, গণতন্ত্রের, স্বাধীনতার মুক্তির জন্য এখানে এসেছি।’
জেএসডির আ স ম আব্দুর বর বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের বলি, আপস করে, দরকষাকষি করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্মানজনক হবে না। সরকারের একটা মহল কৌশলে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাকে মুক্তির নামে নাটক করতেছে। বিএনপির নেতাদের বলি, তার মুক্তি দয়া নয়, অধিকার ও দাবি। দেশের ১৮ কোটি মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে, রাস্তায় নেমে দেখেন কীভাবে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাকে কারাগার থেকে নিয়ে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘরের মধ্যে স্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। আমি এখনই রাস্তায় নামতে প্রস্তুত আছি। আপনারা রাস্তায় নামবেন কিনা?’
এদিন সকাল ১০টায় থেকে বিএনপির গণঅনশন শুরু হয়ে বেলা ৪টা ৫০ মিনিটে শেষ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন মির্জা ফখরুলকে ফলের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
তবে সাড়ে ১০টায় অনশন শুরু হলেও দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতা আসেন দুপুর ২টার পরে।
এদিকে বিএনপির অনশনকে ঘিরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে অনশন থেকে বিএনপির কোনও নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি।
অনশনে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, এমরান সালে প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-প্রচার সম্পাদক শামিমুর রহমান, আমিরুল ইসলাম খান আলিম ও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
পিবিএ/এএইচ