খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলেন এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মোর্ত্তজা

গোলাম মোর্ত্তজা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। পরের ৫০ বছরের যত অর্জন, তার বেশিরভাই এসেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বে। তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা মোচন করে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এখন এক বিস্ময়ের নাম। ২১ ফেব্রুয়ারির মাতৃভাষা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, স্যাটলাইটের মালিকানা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ বহু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড এবং বৈশ্বিক মহামারি করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় আপনার একক ভূমিকা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।

দেশে তো বটেই বহির্বিশ্বেও আপনি একজন মানবদরদি নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। মায়ানমারে জান্তা সরকারের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের আপনি বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে মানবতার জননী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

আজ আমার মনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর বিশাল হৃদয়ের কথা। আমি খুব কাছ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর হৃদয় ছিল সাগরের মতো বিশাল। অত্যন্ত মানবদরদি মহান একজন নেতা ছিলেন তিনি। সেই মানবদরদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আপনি। বাবার বৈশিষ্ট্যই সন্তানের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে এটাই স্বাভাবিক এবং এই সাহসে বলিয়ান হয়েই আপনাকে বলতে চাই- বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২৫ মাস কারাভোগের পর মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করে আপনি নির্বাহী আদেশ দিয়ে মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। আপনার এই মহৎ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছিলো সারাদেশের মানুষ।

মেডিক্যাল বোর্ডের ডাক্তারগণের প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস যার চিকিৎসা শুধু বিদেশে আছে। দেশে কোনো চিকিৎসা নেই। বিলম্ব হলে যে কোনো বিপদের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি। তার ডায়াবেটিস এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দাঁত ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘদিন থেকে। কিডনির ক্রিয়েটিন বর্ডার লাইন ক্রস করেছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তার শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। ইত্যাদি নানা শারীরিক জটিলতায় তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। এসব কারণে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে যত দ্রুত সম্ভব অত্যাধুনিক চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। তার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বিলম্ব বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। দেশবাসীও বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে উদ্যোগি হয়ে আবারও মানবতার শুভ চেতনার পরিচয় দিবেন বলে আমার বিশ্বাস। আপনার সদিচ্ছাই কেবল তার মুক্তি ত্বরান্বিত করতে পারে। তার মুক্তিতে বিলম্ব ঘটলে আল্লাহ না করুন একটা কিছু ঘটে গেলে বর্তমানে দেশে যে শান্ত-সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে সেই শান্ত পরিবেশ হয়তো হঠাৎই অশান্ত হয়ে উঠতে পারে এবং এর থেকে যে উদ্ভুত পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তার দায়-দায়িত্ব সরকারপ্রধান হিসেবে আপনি কি এড়াতে পারবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?

লেখক: গোলাম মোর্ত্তজা, চেয়ারম্যান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি

আরও পড়ুন...