খালেদা জিয়া সবসমই ‘আপসহীন’নেত্রী

 

পি

বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে না জানিয়ে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ও পরে তা নাকচ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আজ দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে বিএনপি
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া । ছবি:ফাইল

বিএ,ঢাকা: কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে না জানিয়ে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ও পরে তা নাকচ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আজ দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহসপতিবার ( ২৩মে ) দেশে ফিরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। শুক্রবার (২৪মে ) বেলা ১১টায় গুলশান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রধানত এ বিষয়েই কথা বলবেন বলে জানা গেছে।

বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির ৩ নেতা বৃহসপতিবার ( ২৩মে ) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ( ২১মে ) ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়া জেলার নেতাদের এক বৈঠক শেষে বলা হয়, এই আসনে বেগম খালেদা জিয়ারও মনোনয়নপত্র দাখিল করা হবে। কিন্তু এক দিন পরেই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী- বেগম খালেদা জিয়া উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে কেবল আপত্তিই জানাননি, তিনি ক্ষিপ্তও হয়েছেন। এ অবস্থায় উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও বেগম জিয়াকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র একাধিক নেতা বেগম জিয়াকে প্রার্থী করার চিন্তাকে ‘নাবালকসুলভ’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন না করার কথা জানিয়ে যে বার্তা দিয়েছেন, তাতে দলের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল হয়েছেন। এ ঘটনায় বেগম জিয়াকে আবারো ‘আপসহীন’ নেত্রী বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বৃহসপতিবার আলাপকালে বলেছেন, বেগম জিয়াকে না জানিয়ে তাকে প্রার্থী করার বিষয়ে স্থানীয় নেতাদের প্রস্তাব আমলে নেয়া সঠিক হয়নি। এটি যারা করেছেন, তাদের হাতে কোনো যুক্তি আছে বলে মনে হয় না। খালেদা জিয়াকে আমরা এখনো মুক্ত করতে পারিনি, এটি আমাদের একটি বড় ব্যর্থতা। কিন্তু নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়া, উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব ইস্যু তার মুক্তির দাবিকে গৌণ করে দিচ্ছে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি বলেন, জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়া আবারো প্রমাণ করলেন, তিনি যে আপসহীন। এটি আমাদের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ও অনন্য দৃষ্টান্ত। যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান পিঙ্কু বলেন, আপসহীন দেশনেত্রীকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করে যারা বিব্রত করার চেষ্টা করেছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। বেগম জিয়া আপসকামিতার রাজনীতি কেনো দিন করেননি, ভবিষ্যতেও করবেনও না। বেগম জিয়াকে প্রার্থী করার পেছনে কী যুক্তি ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে দলের অপর এক নেতা বলেছেন, ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। বর্ণচোরারা হিরো সাজতে গিয়ে এ ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনে তার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনটি আসনেই প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ অবস্থানে রয়েছেন বেগম জিয়া। তিনি তার দলের নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়ারও পক্ষে ছিলেন না।

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন ফখরুল : ব্যাংকক থেকে চিকিৎসা শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে ফিরেছেন। বৃহসপতিবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে সাথে নিয়ে ঢাকা ফেরেন তিনি। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নেন।
বিজেপি সরকারের সাথে সম্পর্ক নিবিড় করতে উদ্যোগী হবে বিএনপি : ভারতে দ্বিতীয় মেয়াদে ফের সরকার গঠন করতে যাওয়া বিজেপির সাথে সম্পর্ক আরো নিবিড় করার উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাধী দল-বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপি ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। কারণ বৃহৎ গণতান্ত্রিক বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে গণতন্ত্র থাকলেও বাংলাদেশে তা অনুপস্থিত। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার সরকারের সাথে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ার প্রচেষ্টা চালাতে তারা উদ্যোগী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হচ্ছে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত। তাদের নেতা নির্বাচনের যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এটাকে আমরা সম্মান করি। আমরা মনে করি, জনগণের সরাসরি ভোটে ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে যে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে তাকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, এখন বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক হবে জনগণের সঙ্গে জনগণের, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের; অবশ্যই এই সম্পর্ক বিশেষ কোনো দলের সঙ্গে হবে না। আশা করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এতে ভারতও প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ভারতে সরকার গঠন- এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তার পরও ক্ষমতাসীন বিজেপি জোট ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভ করেছে । ফলে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় আবার বিজেপি সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। তাদের দেশের জনগণ কাকে নির্বাচিত করল তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

তিনি বলেন, ভারত এ অঞ্চলের বড় শক্তি। দেশটিতে কোনো সরকার রাষ্ট্রপরিচালনায় আসছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর পড়ে। মোদি সরকার ক্ষমতায় এলে তারা তাদের দেশের মতো বাংলাদেশ ও আশপাশের দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ভূমিকা পালন করবেন বলে আমার আশা ।

পিবিএ/এইচটি


আরও পড়ুন...