খুনি জিয়নের মুখে আবরারের হত্যার ভয়ঙ্কর বর্ণনা

পিবিএ,ঢাকা: শিবির শনাক্ত করতে জিয়ন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিনের সঙ্গে আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষে যায়। সেখান থেকে আবরারের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে আসা হয়। আবরারের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, এই হলে শিবির কারা। প্রশ্নের উত্তর না দিলে সে আরো কয়েকজনের সঙ্গে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে প্রথমে আবরারের হাঁটুতে পেটায়।
এতে উল্টোপাল্টা কিছু নাম বললে, তাকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়। এক পর্যায়ে আবরার মেঝেতে পড়ে গেলে স্কিপিংয়ের রশি দিয়ে তার পিঠে আঘাত করা হয়। এতে আবরার কান্নাকাটি করে চিত্কার করতে থাকে। তখন মনে হয় যে সে ভান করছে। এতে অন্যরা তাকে পেটাতে থাকে। এভাবেই বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন নামের এক আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন
মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন

তিনি জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি নিজেও আবরারকে কিল ঘুষি মেরেছেন এবং স্টাম্প দিয়ে হাঁটুতে পিটিয়েছেন। জবানবন্দিতে জিয়ন আদালতকে জানিয়েছেন, বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিনের নির্দেশে আবরারকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ওই কক্ষে আবরারকে ডেকে আনা হয়। এসময় ওই কক্ষের ইফতি ও তানভীর ছাড়াও আরো কয়েকজন উপস্থিত ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিবির সনাক্ত করা। প্রথম দিকে আবরার নামগুলো বলছিল না। এরপর আবরারের রুম থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও তার ব্যবহার করা ল্যাপটপ নিয়ে আসা হয়। শিবির কারা করে তা জানতে তারা চাপ সৃষ্টি করে। এরপরও আবরার মুখ খোলে না। এক পর্যায়ে সামসুল আরেফিন ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে আসে। মেহেদি হাসান আর জিওন হাত দিয়ে চড় থাপ্পড় শুরু করে। পরে ইফতি স্টাম্প দিয়ে মারধর শুরু করে। সে অনেকগুলো বাড়ি মারে। এ সময় অনিক সরকার স্টাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক পিটাতে থাকে। পায়ের পাতা, হাঁটু, হাতেও পেটায়। আমিও কিছু কিল ঘুষি মারি। পরে স্টাম্প দিয়ে হাঁটুতে পিটাই। এরপর ধাপে ধাপে অন্যরা কয়েক ধাপে ভেতরে এসে মারধর করে। এক পর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এসময় আবরার মেঝেতে বমি করে দেয়। তখন একজন বলে ওঠে, ও ভান করছে। এসময় আমি স্কিপিংয়ের রশি দিয়ে তার পিঠে মারতে থাকি। ছাত্রলীগের সমাজ সেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল মোবাইল ফোনে বিষয়টি অনিককে জানায়। অনিক আবরারকে গোসল করিয়ে হাতে-পায়ে মলম লাগিয়ে দিতে বলে। এ সময় আবরার দ্বিতীয়বার বমি করে। তখন আবরারের কক্ষ থেকে তার কাপড়- চোপড় নিয়ে আসে অন্যজন। আবরারকে ওই কক্ষ থেকে বের করে পাশের ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেয়া হয়। ওই কক্ষে আবরার বমি করে। মেহেদী তখন আবরারকে পুলিশের হাতে দেওয়ার জন্য নিচে নামাতে বলেন। এরপর জেমি, মোয়াজ ও শামীমসহ ৩/৪ জন তাকে কোলে করে সিঁড়ি ঘরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ ও চিকিত্সকদের খবর দেওয়া হয়। এরপর চিকিত্সক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...