পিবিএ ডেস্ক: কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শিগগিরই খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
গেল বছর খুলবে খুলবে করেও খোলা হয়নি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এ নিয়ে বাংলাদেশকে কয়েক দফায় প্রতিশ্রুতি দেয় দেশটির সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য সেখানে কর্মী পাঠানোর দরজা বন্ধই থেকে যায়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর আলোচনা চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার আগে আমাদেরকে বেশ কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের শ্রমিকরা যেন একটি নির্দিষ্ট টাকায় সেখানে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা আগে করবো। এটা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। শূন্য অভিবাসন ব্যয় ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়া মালয়েশিয়ায় আমরা কর্মী পাঠাবো না।
মন্ত্রী আরো জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তবে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়াটি যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেটি আগে নিশ্চিত করা হবে। বাজার খোলার আগে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কিছু নীতিগত বিষয় সমন্বয় করা দরকার। আমাদের করা চুক্তির বাইরে কোনো কর্মীকে আনা-নেয়া করা যাবে না। কিছু অসাধু মানুষের জন্য বিদেশে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা তাদেরকে আর সুযোগ দিতে চাচ্ছি না।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলবে বলে গুঞ্জন শুরু হয়। পরে সেটি না হওয়ায় ওই বছরের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয় নিশ্চিত করা, কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় দুই দেশের বেশিসংখ্যক রিক্রটিং এজেন্সিকে যুক্ত করা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কর্মীর সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা এবং তথ্যভাণ্ডারের পরিসংখ্যান বিনিময়ের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের কর্মীদের বিভিন্ন খাতে নিয়োগের বিষয়ে মাহাথির মোহাম্মদের সহযোগিতা কামনা করেন।
পরে ২০১৮ সালের ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ঢাকায় পুনরায় আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখিয়ে বৈঠক স্থগিত করে মালয়েশিয়া। যেটি এখনো স্থগিতই রয়েছে।
এদিকে, শ্রমবাজার নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা া বলেন, চলতি মাসে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান বাংলাদেশে আসতে পারেন। এই সফরে তিনি বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য নিজ দেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো পথ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার একটি সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে উঠা বিভিন্ন অভিযোগের কারণেই কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, এসব চক্রের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আছে সব তদন্ত করা হবে। যেসব দালালরা দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদেশে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো আচরণ মেনে নেয়া হবে না।
দক্ষ কর্মীদেরই কেবল মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার সরকার দক্ষ জনবল চায়। এজন্য শ্রমবাজার খোলার আগে আমাদের কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে, যাতে তারা সেখানে সম্মানের সঙ্গে টিকে থাকতে পারে।
এদিকে নিজ দেশের একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান বলেছেন, শ্রমবাজার খুলে দিতে তারা প্রস্তুত। এ বিষয়ে দুই দেশের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কয়েকটি বিষয় নিষ্পত্তি হলেই দেশটির শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে।
কুলাসেগারান জানান, শ্রমবাজার খুলে দেয়ার পর বাংলাদেশ থেকে যত কর্মী আসবে তাদের সব খরচ বহন করবে নিয়োগদাতা কোম্পানি। কর্মীদের কাছ থেকে বেশি অর্থ নিয়ে তাদেরকে বিপদগ্রস্ত করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে মোট ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করতে গিয়েছেন। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি থেকে এখন পর্যন্ত ২০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে এসেছে।
পিবিএ/এমএসএম