খুলনায় ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়ার নামে অর্ধ কোটি টাকা আদায়

মহানগরীর ইজিবাইকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চলতি বছরের প্রথম দিকে উদ্যোগ নেয় খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)
ইজিবাইক

পিবিএ,খুলনা: মহানগরীর ইজিবাইকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চলতি বছরের প্রথম দিকে উদ্যোগ নেয় খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এ জন্য কেবল মহানগরীতে বসবাস করেন এমন চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সাড়ে ৮ হাজারের মত ইজিবাইক চালকের কাছে ৫ শ টাকা মূল্যে ফরম বিতরণের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। তবে চালকদের লাইসেন্স প্রদান এবং ইজিবাইক নিয়ন্ত্রন কোনটারই সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে নগরীর ভোটার তালিকায় নাম আছে এমন ইজিবাইক চালকদের কাছে আবেদন ফরম বিতরণ করা হয়। ফরমের মূল্য ছিল ৫০০ টাকা। ইজিবাইকের লাইসেন্সের জন্য মোট ৮ হাজার ২২৮টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে লাইসেন্স দেওয়ার কথা থাকলেও এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

গত দুই মাসে এই কার্যক্রম আর সামনে এগোয়নি। বাইরের ইজিবাইক নগরীতে প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাও এখন আর কার্যকর নেই। ফলে নগরী ফিরে গেছে আগের চেহারায়। যানজটের পাশাপাশি ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও।

এদিকে ১৫ জানুয়ারি থেকে বাইরের ইজিবাইক নগরীতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় কেসিসি। এ জন্য নগরীর ৮টি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসায় কেসিসি ও ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু ১৫-২০ দিন পর আর তা কার্যকর নেই। এখন দিনের বেলা কেবল গল্লামারী সেতু দিয়ে নগরীর বাইরের ইজিবাইক নগরীতে ঢুকতে পারছে না।

তবে রাতের বেলা নগরীতে ঢোকার ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে না। দেখা গেছে, দিনরাত সবসময় এখন ময়ূরী সেতু, রূপসা সেতু, মোস্তর মোড়, বাস্তুহারা মোড়, তেলিগাতী ল্যাবরেটরি মোড়, যোগীপোল মোড় ও বাদামতলা বিআরটিএ অফিস মোড় দিয়ে ইজিবাইক নগরীতে ঢুকছে। ফলে নগরীর সড়কগুলোতে এখন ইজিবাইকের ছড়াছড়ি।

ইজিবাইক চালকদের হিসাব অনুযায়ী, নগরীতে এখন ৩০ হাজারেরও বেশি ইজিবাইক চলাচল করে। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ইজিবাইক চালকদের কোনো ধারণা নেই। ফলে চালকরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠানামা করায়।

রাস্তায় তিন-চার লাইন দিয়ে চলাচল করা অসংখ্য ইজিবাইকের কারণে যানজট লেগেই থাকছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে নগরীর প্রবেশ পথ গল্লামারি সেতু থেকে ময়লাপোতার মোড় পর্যন্ত দিন রাত যানজট লেগেই থাকে।

এছাড়া সিমেট্রি রোড, কেডি ঘোষ রোড, পাওয়ার হাউস মোড়, আহসান আহমেদ রোড, শামসুর রহমান রোড, ফেরিঘাট মোড়, খুলনা থানার মোড়, শহীদ হাদিস পার্ক মোড়, শান্তিধাম মোড়, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, মৌলভীপাড়া মোড়ে যানজট এখন নিত্যদিনের। প্রতিদিন নগরীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা এমনকি পাশের জেলাগুলো থেকেও শত শত ইজিবাইক নগরীতে প্রবেশ করে। সে কারণে জটিলতা আরও বেড়েছে।

এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের খুলনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব পিবিএকে বলেন, নগরীর যানজট নিরসনে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে ইজিবাইকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কেসিসি যে উদ্যোগ নিয়েছিল দ্রুত তা কার্যকর করা প্রয়োজন। এ ছাড়া লাইসেন্স দেওয়ার পর সব ইজিবাইকে একই রঙ করা এবং চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও জরুরি।

কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুখ হোসেন তালুকদার পিবিএকে বলেন, যে ৮ হাজার ২২৮টি আবেদন ফরম জমা পড়েছে, তা যাচাই-বাছাই শুরু হয়নি। কতটি লাইসেন্স দেওয়া হবে, তা তার জানা নেই। তিনি বলেন, সিটি মেয়রের নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এ ব্যাপারে কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, এখন পর্যন্ত আবেদন ফরম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আশা করি রোজার ঈদের পর পরই লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ কার্যক্রম শেষ হলে নগরীতে আর লাইসেন্সবিহীন কোনো ইজিবাইক চলতে দেওয়া হবে না।

পিবিএ/এইচআর/আরআই

আরও পড়ুন...