খুলনায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ

 

প্রতীকী ছবি

পিবিএ, খুলনা: খুলনার কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশারের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যসহ অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়া নিয়মিত কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল বাশার ২০১৮ সালের ৭ জুলাই যোগদানের পরপরই টাকার বিনিময়ে বদলি বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। বদলিসহ বিভিন্ন তদবীর নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে যাতায়াত করায় সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন তিনি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির নিয়ম অনুযায়ি একটি বিদ্যালয়ে ৫ জন বা তার বেশি শিক্ষক থাকলে সেখান থেকে একজনকে বদলি করা যায়। ৪ জনের কম শিক্ষক থাকলে সেখান থেকে একজন শিক্ষক বদলি করতে হলে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে শিক্ষক বদলির নিয়ম রয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার বায়লাহারানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই সঙ্গে দুই জন সহকারি শিক্ষিকাকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করেছেন তিনি। এর মধ্যে সহকারি শিক্ষিকা রজনীগন্ধা মিস্ত্রিকে তার নিজ এলাকা সাতক্ষিরার শ্যামনগর উপজেলার যতীন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। এ অবস্থায় সেখান থেকে আরও এক সহকারি শিক্ষককে প্রশিক্ষণে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন তিনি। এভাবে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে বিধি বহির্ভূত বদলি ও ডেপুটেশন দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে স্থানীয় শিক্ষকদের অভিযোগ।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আংটিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে একজন শিক্ষক দিয়ে, গোলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে দুইজন শিক্ষক দিয়ে, তিন নম্বর কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে একজন শিক্ষক দিয়ে, ঘড়িলাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে তিনজন শিক্ষক দিয়ে, খাসি টানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে দুইজন শিক্ষক দিয়ে। যে কারনে এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। অথচ এসব বিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার না দিয়ে টাকার বিনিময়ে তথ্য গোপন করে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের পছন্দ অনুযায়ি স্কুলে বদলি করা হচ্ছে। এমব বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে তড়িঘড়ি করে বিদ্যালয়ের শূণ্যপদ পূরণের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে চাপ সৃষ্টি করে শিক্ষকদের দূরবর্তী বিদ্যালয়গুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি তিন নম্বর কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এক সাথে দুইজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়টি চলছে একজন শিক্ষক দিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের বিল ছাড়াতে গেলে তাকে টাকা দিতে হয়। সাধারণ বদলির ছাড়পত্র অথবা নতুন যোগদানের ক্ষেত্রেও শিক্ষা কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হয়। তার খামখেয়ালিপনায় বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে তিনি সাতক্ষিরার শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালিন সময়ে স্থানীয় শিক্ষকদের রোষানলে পড়েন। পরে তাকে সেখান থেকে বদলি করে কয়রা উপজেলায় পাঠানো হয়। কয়রা উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ সপ্তাহের চার দিন তিনি কর্মস্থলের বাইরে থাকেন। যে কারনে দাপ্তরিক জটিলতা পোহাতে হয় তাদের।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ব্যাক্তিগত ঝামেলার কারনে অফিসে কিছু দিন অনিয়মিত ছিলাম। এখন থেকে নিয়মিত অফিস করছি।’

কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসংগে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এস,এম সিরাজ-উদ-দোহা বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মৌখিকভাবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পিবিএ/ শেখ হারুন অর রশিদ/জেডআই

আরও পড়ুন...