পিবিএ,ঢাকা: করোনা শনাক্তে আরটি পিসিআর কিটের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সারাদেশে এখন পর্যন্ত এ কিট দিয়েই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা চলছে। করোনা শনাক্তে এ কিটের সফলতার হার ৬৫-৭০ শতাংশ। সম্প্রতি কার্যকারিতা যাচাই শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) জানিয়েছে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি কিটের সফলতা ৭০ শতাংশ। সুতরাং বর্তমানে করোনা শনাক্তে যে কিটের ব্যবহার করছে সরকার তার চেয়ে গণস্বাস্থ্যের কিটের সফলতা বেশি।
শুক্রবার (১৯ জুন) সকালে এসব জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।
তার দাবি, বিএসএমএমইউ তাদের কিটের বিষয়ে যে সুপারিশ করেছে, তা যেন সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বাস্তবায়ন করে। সুপারিশ বাস্তবায়ন করলেই তারা উৎপাদন, বিপণন, পরীক্ষার কাজ শুরু করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, তাদের কিটের দুটি অংশ – অ্যান্টিজেন্ট ও অ্যান্টিবডি। অ্যান্টিবডি অংশের ফল বিএসএমএমইউ দিয়েছে। আর অ্যান্টিজেন্ট অংশের স্থগিত থাকা কাজ শুরু করতে লালা সংগ্রহের ডিভাইস দু-একদিনের মধ্যে জমা দেয়া হবে বিএসএমএমইউতে।
গত বুধবার (১৭ জুন) বিএসএমএমইউর অধ্যাপক শাহিনা তাবাসসুমের নেতৃত্বে পারফরম্যান্স কমিটি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিজেন্ট কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে উপাচার্যে কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই দিন উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া সংবাদ সম্মেলনে জানান, গণস্বাস্থ্যের কিট করোনা শনাক্তে কার্যকর নয়।
বিএসএমএমইউ বুধবার প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরলেও বৃহস্পতিবার তা পেয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করা হয়েছে জানতে চাইলে বিজন কুমার বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটা পেয়েছি। আমরা ওটা পড়াশোনা করেছি। ওখানে স্পষ্ট লেখা আছে, এই টেস্টটা যেখানে আরটি পিসিআর টেস্ট নাই বা যেখানে আরটি পিসিআর নেগেটিভ (করোনামুক্ত) হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। লকডাউনে কিংবা হার্ড ইমিউনিটি (রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা) কতটুকু আসছে, সেটা দেখার জন্য এ টেস্ট ব্যবহার করা যাবে। আমরা সর্বোপরি ৭০ শতাংশ শনাক্ত করতে পারছি। আরটি পিসিআরও তাই করছে। সুতরাং আমাদের সঙ্গে তাদের ১০০ ভাগ মিল আছে। যেখানে আরটি পিসিআর কিটের সফলতা ৬৫-৭০ শতাংশ, সেখানে আমাদের কিটের সফলতা ৭০ শতাংশ। তাহলে আমাদের খারাপ কোথায়?’
তাহলে বিএসএমএমইউর উপাচার্য কেন বললেন আপনাদের কিট কার্যকর নয়? জবাবে বিজন কুমার শীল বলেন, ‘এটার ইতিহাস জানা খুব মুশকিল। যেহেতু আমরা প্রেস কনফারেন্সে ছিলাম না, আমরা শুনিও নাই। একটা কথা মানুষ বিভিন্নভাবে বোঝে। হয়তো এভাবে কোনো একটা কিছু হয়ে গেছে। কিংবা তাদের নিজেদের মধ্যেই হয়তোবা বোঝাপড়ার অভাব ছিল। কিন্তু তাতে আমরা মন খারাপ করিনি। আমরা আমাদের কিটকে চিনি। আমরা এখনও কাজ করছি, এজন্য আমাদের আত্মবিশ্বাস একেবারে কম না। যে যার অবস্থান থেকে কাজ করছে, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কাজ করছি, করে যাব। সবাই মিলে কাজ করতে চাই। সবাই আমাদের বন্ধু।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেস কনফারেন্স হওয়ার আগে আমরা যদি পেতাম, তাহলে হয়তো খুব ভালো হতো। প্রতিবেদনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন বলবো না তবে শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, উনারা (বিএসএমএমইউ) যেটা করেছেন, ভালোই করেছেন। এখন উনারা যেটা বাস্তবায়ন করতে বলেছেন, ওটাই বাস্তবায়িত করুক। তাহলে আমাদের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। আমরা আশা করছি, দেশের মানুষের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এটাকে বাস্তবায়িত করবেন।’
বিজন বলেন, ‘যাদের মধ্যে অ্যান্টিবডি চলে আসবে, তাদেরকে ফ্রি (মুক্ত) করে দেয়া যেতে পারে। তারা বাইরে কাজ করতে যেতে পারবেন, নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন।’
অ্যান্টিজেন্ট অংশের বিষয়ে বিজন কুমার শীল বলেন, ‘বিএসএমএমইউ শুধু অ্যান্টিবডির ফল দিয়েছে। এন্টিজেন্ট আসলে দেখবেন অন্যরকম চেহারা হবে। লালা সংগ্রহের যে কিট আমরা তৈরি করেছি, সেটা প্যাক (মোড়কজাত) করা হয়ে গেছে। কাল কিংবা পরশু বিএসএমএমইউতে গিয়ে দিয়ে আসবো। ডেমোও দিব, তারপর তারা কাজ শুরু করবে। আমার মনে হয়, বাকি কাজটুকু দ্রুতই করতে পারবো। এ জন্য অত বেশি স্যাম্পল দরকার নেই। আপনি একশ স্যাম্পল টেস্ট করেই বুঝতে পারবেন কি হচ্ছে। একশ আর একলাখ স্যাম্পল টেস্ট করার মধ্যে কোনো পার্থক্য হয় না। শুধু সংখ্যাগত পার্থক্য।’
পিবিএ/এমআর