আওয়ামী লীগ সরকার লুট করে দেশকে শেষ করে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা যেন ভুলে না যাই আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী। হাসিনা (শেখ হাসিনা), সে গণহত্যা করেছেন। এখানে কোনো ক্ষমা নেই। গণহত্যার কোনো ক্ষমা হতে পারে না। ওই জায়গাতে আমাদের খুব শক্তভাবেই থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই, এটা আমরা পরিষ্কার করেছি। কেন দ্রুত নির্বাচন চাই? দ্রুত চাই এজন্য যে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণকে আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। সেজন্য আমরা মনে করি- এক হচ্ছে, সংস্কার করতে হবে, তা নিয়ে যাবে পার্লামেন্টে- সেভাবে অনুমোদন করা হবে, ডিভেট করে সেখানে সেটা পাস করাতে হবে এবং তাদের জনপ্রতিনিধিকে গ্রহণ করিয়ে সেটা করতে হবে। সুতরাং নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে তত দেশের জন্য মঙ্গল।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত. ফাঁদ থাকলে সেখানে আমাদের এই শত্রুরা যারা চেষ্টা করছে- আমাদের সমস্ত কিছু দখল করে ফেলা এবং বিপ্লবকে ব্যর্থতায় পরিণত করতে তারা সুযোগ পেয়ে যায় এবং পাচ্ছে। বিভিন্ন মহল বিভিন্ন জায়গায় দাবি-দাওয়া নিয়ে আসছে, কেন আগে কেউ করেনি, এখন নিয়ে আসছে? অপেক্ষা করো? জনগণের সরকার আসুক। এসব বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। অনেকে বলে যে, এতদিন পারিনি তাই এখন দাবিগুলো নিয়ে আসছি। এটাতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়।
কিছু উপদেষ্টার কথায় খটকা লাগে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি একটু চিন্তিত হয়ে যাই, কিছুক্ষণ আগে সাইফুল হক ভাই বলেছেন উদ্বিগ্ন হই, কখন কী বলেন- যখন ওই খানেই আমাদের খটকা লাগে। আমি আশা করবো যে, আপনি একটা সরকারে আছেন, দায়িত্ব পালন করছেন- উপদেষ্টারা এমন কোনো কথা বলবেন না বা এমন কোনো কাজ করবেন না- যাতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, আমাদের সম্ভবত লোকাল গভর্মেন্টে এডভাইজার সাহেব (হাসান আরিফ) বলেছেন, চার বছর সরকারের মেয়াদ। এটা তার বলার কথা নয়। তারা কমিশন গঠন করেছেন, সেই কমিশন প্রস্তাব দেবেন, জনগণ এক্সসেপ্ট করবে তারপর না জনগণ ঠিক করবে। কিন্তু যিনি ক্ষমতায় বসে আছেন, তিনি যদি বলেন যে, সরকারের মেয়াদ চার বছর হবে তাহলে একটা চাপ পড়ে যায়, এই কাজটা হাসিনা (শেখ হাসিনা) খুব ভালোভাবে করতেন, যেকোনো মামলার রায়ের আগে বলে ফেলতেন, ওটা কখনো সঠিক পথে নিয়ে যাবে না। তাই অনুরোধ করবো, এমন কথা-বার্তা বলবেন না, যেটাতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি- এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের বাংলাদেশের মানুষ আমরা অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। আমরা সব সময় সকল সম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করে আসছি, একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। ইদানীং দেখছি, আমরা একটা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে, একটা বড় রকমের আন্দোলন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। যেটা কেন জানি না, ভারতের যে বক্তব্য বাংলাদেশের বিপদ সম্পর্কে, তার সঙ্গে মিলে যায়। যেটা বাংলাদেশের এই বিপ্লব ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে অর্জন করা, সেটাকে অনেকাংশে বিপন্ন করার চেষ্টা করছে। এই কথা বলতে আমি বাধ্য হলাম। আমাকে বিদেশের সাংবাদিকরা টেলিফোন করেন- বিশেষ করে ভারতের সাংবাদিকরা তারা বলতে চান যে, স্যার ড. ইউনূস (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) কী রাষ্ট্র্র চালাতে পারছেন না, এই ধরনের কথা-বার্তা তাদের কাছ থেকে আসে। আমি তাদেরকে বলি, প্রশ্নই উঠতে পারে না। গোটা দেশের মানুষ তার ওপর আস্থাশীল। তিনি সুন্দরভাবে দেশ চালাচ্ছেন। যাকে মানুষ সমর্থন দেয়, সেখানে কোনো কিছু থাকতে পারে না।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবার লড়াই এখন। আগের ১৫ বছর যে লড়াই হয়েছিল, তা থেকে এই লড়াই আলাদা। ১৫ বছর ধরে আমরা রাজপথে লড়াই করেছি। এখন পুরনো বাংলাদেশকে বদল করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে, যাকে আমরা বলছি- সংস্কার। কী পরিবর্তন হবে? নিজেরা নিজেদের জিজ্ঞেস করেন। আমরা এই বাংলাদেশকে বদলে কী রাজাকারদের বাংলাদেশ করতে চাই, নতুন করে কোনো বিজাতীয় আদের্শের বাংলাদেশ করতে চাই? আমরা যখন সংস্কার বলছি, সেই সংস্কারের মানে কী? আমরা কী এমন কোনো সংস্কারের প্রস্তাব আনবো, স্বৈরাচার আবার ফিরে আসতে পারে।
জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।