গাজার হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৫০

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রায় ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন মেডিকেল স্টাফও রয়েছেন।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, উত্তর গাজা উপত্যকায় কামাল আদওয়ান হাসপাতালের সদর দপ্তরের বিপরীতে একটি ভবনে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রায় ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন চিকিৎসা কর্মীও রয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলার পর বেইট লাহিয়া প্রজেক্ট এলাকায় কামাল আদওয়ান হাসপাতালের বিপরীতে একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আমাদের তিনজন মেডিকেল স্টাফসহ প্রায় ৫০ জন শহীদ হয়েছেন।

আবু সাফিয়া বলেন, চিকিৎসা কর্মীরা হামলার শিকার ওই ভবনে উপস্থিত ছিলেন কারণ তারা তাদের পরিবার নিয়ে সেখানে থাকতেন। তিনি নিহত কর্মীদের শনাক্ত করেছেন। যাদের একজন আহমেদ সামুর, তিনি একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। এছাড়া হামলায় নিহত ইসরা একজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান এবং ফারেস নামে এক ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ প্রযুক্তিবিদ।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে পুনরায় সংগঠিত হতে বাধা দিতে ইসরায়েল গত ৫ অক্টোবর থেকে উত্তর গাজায় বড় আকারের স্থল আক্রমণ শুরু করে। ফিলিস্তিনিরা অবশ্য ইসরায়েলকে এলাকাটি দখল করতে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য অভিযুক্ত করেছে।

ইসরায়েলের সেই স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানিসহ পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে সেখানে অবস্থানরত অবশিষ্ট জনসংখ্যা সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামাসের সেই আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

আরও পড়ুন...