ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত কয়েকদিন ধরে গাজার এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ধারাবাহিক বিমান হামলা ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি বলেন, আল-আকসা হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সকে দেইর এল-বালাহ শহরের পূর্ব অংশে যেতে দেখেছি। ওই অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ওই হামলায় হতাহতদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজনও রয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। তৃতীয়জনকে হাসপাতালে আনা হয় ও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এদিকে, মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের একটি স্কুলে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১২ নারী-শিশুসহ অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার (৫ জুন) রাতে এই হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই স্কুলটি পরিচালনা করতো জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। হামলার সময় স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, স্কুলটিতে হামাস যোদ্ধারাও আশ্রয় নিয়েছিলেন।
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী জাতিসংঘের একটি স্কুলে শিশুসহ কয়েক ডজন লোককে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেছে। তাছাড়া মধ্য গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
আল জাজিরা আরবির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মধ্য গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবিরের একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় চারজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে। এর আগে রাতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্য গাজার একটি মিউনিসিপ্যাল অফিসে হামলা চালালে নুসেইরাতের মেয়র ইয়াদ আল-মাঘরিসহ পাঁচজন নিহত হন।
এর আগে ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় আজ-জাহরা ও মধ্য গাজার মাগাজি পৌরসভার মেয়রও নিহত হয়েছিলেন। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি পৌরসভার সদর দপ্তরও ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজায় কাজ করা নার্স ও মেডিকেল রেফারেন্ট কারিন হাস্টার বলেছেন, আল-আকসা হাসপাতাল এখন একটি ডুবন্ত জাহাজ। আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের মরদেহ রাখতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। হাসপাতালটির জরুরি কক্ষের ভিতরের দৃশ্য এখন গত কয়েকদিনের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ।
আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গুরুতর আহত অবস্থায় আল-আকসায় আসা অধিকাংশ মানুষই মারা যাচ্ছেন। চিকিৎসা কর্মীরা বলছেন, আমরা রোগীদের ছেড়ে দিচ্ছি না কিন্তু নানা সংকটের কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসাও দিতে পারছি না। জানি না, কবে সবকিছু ঠিক হবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮৩ হাজার ৩০৯ জন।