মোহাম্মদ আলম, গাজীপুর থেকে ফিরে : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমবারের মত বর্জ্য রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এই প্লান্টে প্রায় ৩২ টন বর্জ্য রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে সপ্তাহান্তে জৈব সারে রুপান্তরিত হবে।
গত বৃহস্পতিবার ১৬ জুলাই দুপুরে সিটির ৩ নম্বর জোনের ৩৬ নং ওয়ার্ডে কাথোরা এলাকায় বর্জ্য রিসাইক্লিং প্লান্টের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকর হচ্ছে পণ্যের পুনঃ ব্যবহার নিশ্চিত করা। বর্জ্য রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে গাজীপুরবাসীর সেবায় মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের স্বপ্ন ‘গ্রীন সিটি ক্লিন সিটি’ বাস্তবায়নে একটি যুগান্তকারী অগ্রযাত্রা বলে এলাকাবাসীর অভিমত। মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্যমতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও ১ নম্বর জোনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম সোহরাব হোসেন গণমাধ্যমে জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এটি পাইলট প্রকল্প। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্লান্টের কারিগরি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকবেন প্র্যাক্টিক্যাল এ্যাকশন ও কর্মজীবী নারী। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সার্বিক তত্ত্ববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
তিনি আরো জানান, ৮ থেকে ১০ দিনে প্রায় ৩২ টন গৃহস্থালী বর্জ্য রিসাইক্লিং করা হবে। প্রাথমিকভাবে ফেলনা আবর্জনা রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে জৈব সারে রুপান্তরিত হবে। একইভাবে ভবিষ্যতে বর্জ্য রিসাইক্লিং করে জৈব সারের পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানী , বায়োগ্যাস উৎপাদন করার প্রক্রিয়া চলছে।
সোহরাব হোসেন জানান, পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট স্থাপন করা হলো। এই পদ্ধতিতে সফলতা আসলে ভবিষ্যতে সিটি কর্পোরেশনের ৮ জোনেই এই প্লান্ট স্থাপন করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ যত বাড়ছে বর্জ্য তত বাড়ছে। বিশ্বের সব থেকে বড় উদ্বেগের বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে বর্জ্য। আবার চীন, জাপান, কোরিয়া, ফিনল্যান্ডসহ অনেক দেশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন এনে রিসাইক্লিং করে পুনঃ ব্যবহারের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করেছে। একটি দেশে উন্নয়নের অন্যমত শর্ত হচ্ছে পণ্যের পুনঃ ব্যবহার নিশ্চিত করা। একটি বস্তুকে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে পুনঃ পুনঃ ব্যবহার উপযোগী করার মাধ্যমে পণ্যের মূল্যমান বৃদ্ধি করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা বলা যেতে পারে। জাপানের উন্নয়নের শিখরে আরোহনের অন্যতম বিষয় হচ্ছে রিসাইক্লিং ম্যানেজমেন্ট। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১৯৭০ সালে জাপান একটি সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন করে। পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা বর্জ্যকে সম্পদে রপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে। ছোট আয়তন এবং অল্প জনসংখ্যা নিয়েও সঠিক নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কারনে জাপান আজ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি।
রাজনীতিবিদ একইসাথে শিক্ষানুরাগী এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক, প্রকৌশলী এম এম হেলাল উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে পুনঃ ব্যবহার যোগ্য পণ্যকে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম কাজ করছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তার এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ জনসাধারণের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। তবে তিনি মনে করেন, এর সঠিক বাস্তবায়নে মাধ্যমে সিটির সব জোনে একইভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করতে হবে। তবেই গ্রীন সিটি ক্লিন সিটি স্বপ্ন বাস্তব রুপ পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে বর্জ্য ব্যবস্থানা স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মনিরুজ্জামান মনির, কাউন্সিলর মোঃ রফিকুল ইসলাম, কাউন্সিলর মোঃ শাহিন আলম মৃধা, , মহিলা কাউন্সিলর পুষ্প আক্তার মায়া, বেনু বারেক, শিরিন আক্তার ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির মুঠোফোনে পিবিএ-কে বলেন, মাননীয় মেয়র মহোদয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে চান। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটা স্থাপন করা হয়েছে। একইভাবে সিটির সব জোনে বর্জ্য রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে গাজীপুরকে একটি গ্রীন সিটি ক্লিনি সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে মাননীয় মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বদ্ধপরিকর।
পিবিএ/এমএ