গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে তামাকমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (উপসচিব) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নমিতা দে বলেন,গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তামাকপণ্যের আমরা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। এখন থেকে আরও জোরেসোরে তামাকমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সভাকক্ষে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডব়্প এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে তামাকমুক্তকরণ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ বিষয়ক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, তামাকের বিজ্ঞাপন এখন অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তামাকের ব্যবহার বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যক্ষ ধূমপানের চেয়ে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব আরও ক্ষতিকর। বিশেষ নারী-শিশুরা এর স্বীকার বেশি হয়ে থাকে। নারীদের মধ্যে সাদা পাতার ব্যবহার বেশি, এটি বন্ধ করতে হবে।

সভায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে তামাকমুক্ত করতে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব়্পের প্রোগ্রাম কোঅরডিনেটর রুবিনা ইসলাম। উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীতে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটিএফকে বাংলাদেশের প্রোগ্রামস ম্যানেজার মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, বর্তমানে শীর্ষ ৮টি অসংক্রামক রোগের ৬টিই তৈরি করে তামাক। তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মৃত্যুবরণ করে। বর্তমান জনবান্ধব সরকারের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে দ্রুত এবং শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশ করে প্রজ্ঞাপন জারী এবং তা বাস্তবায়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

তিনি বলেন, তামাক কোম্পানি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বিভিন্নভাবে লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক যে নির্দেশিকা রয়েছে তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা তামাকমুক্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠনের আশা রাখছি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) এবং ডব়্পের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ আজহার আলী তালুকদার। তিনি বলেন, দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এফসিটিসি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। যেভাবে এই দেশের তরুণরা দেশের জন্য বিপ্লব করল, সেভাবে চাইলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়াও সম্ভব।

সম্প্রতি ১ জানুয়ারি ই-সিগারেট/ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে গেজেট প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ডব়্প।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা অনুমোদন না দিয়ে ফেরৎ পাঠানো হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশোধনীটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে অর্ডিন্যান্স আকারে পাশের জন্য সরকারের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া পরিমার্জনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ ১২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ পরিমার্জিত খসড়াটি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে উপস্থাপন করবে।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি, তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা এবং সংশোধনী আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জনস্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তারা।

উল্লেখ্য, ডর্‌প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্‌প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

আরও পড়ুন...