গান হৃদয় ছুঁলে তবেই সে শিল্প: শান্তনু মৈত্র

সুরের যাদুকর শান্তনু মৈত্র

পিবিএ ডেস্ক: সুরকার শান্তনু মৈত্র।ছবির গানের পাশাপাশি অরিজিনালসেও তাঁর সমান গতিবিধি। গান তাঁর কাছে গল্প বলা। সেই গল্প খুঁজতে গিয়ে তিনি প্রায়ই চষে ফেলেন আসমুদ্র হিমাচল। ভারতের প্রথম সারির সুরকার শান্তনু মৈত্র এবার সুর দিলেন কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতায়। কবির কথা আর শান্তনুর সুরের জাদুতে যে গান বলবে অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়েদের লড়াইয়ের গল্প। তাঁদের যন্ত্রণা, প্রতিদিনের যাপিত জীবনের ইতিকথা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী নোবেলের কণ্ঠে কতটা জাদু ছড়াবে সেই গান? এই ধরনের কাজ করার অনুভূতিই বা কেমন? এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে।এখানে পিবিএ’র পাঠকদের জন্য আমরা সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরছি-

প্রশ্ন: শান্তনু মৈত্র আরও একবার অরিজিনালসে। যেটা তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ ক্ষেত্র। একই সঙ্গে ইতিহাস, কোনও রিয়েলিটি শো-এর জন্য এই প্রথম অরিজিনাল তৈরি হল।

উত্তর: (হাসি) ভালো লেগেছে কাজ করে। এই ধরনের কাজ সত্যিই খুব দরকার। প্রথমে জি সারেগামাপা-র পরিচালক অভিজিত আমাকে বলেছিলেন, একজন অ্যাসিড আক্রান্তের জীবন নিয়ে অরিজিনালস করলে কেমন হয়! এখন তিনি একটি এনজিওর সঙ্গে যুক্ত। তাঁর মতো অন্যদের বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগাচ্ছেন। শুনেই বললাম, এর থেকে ভালো বিষয় আর কী হতে পারে! তারপরেই এই গান।

প্রশ্ন: কীভাবে এই গান এল?

উত্তর: আমি গান মাথায় শুনতে পাই। বিষয় জানার পর তাই আগে সুর করলাম। তারপরে শ্রীজাত কথা বসালেন। শ্রীজাতর কলম তো সোনা দিয়ে বাঁধানো! প্রকৃতি, প্রেম, প্রতিবাদ, যন্ত্রণা, যুদ্ধ—সব জীবন্ত হয় ওঁর লেখনির গুণে।

প্রশ্ন: প্রতি গানেই সুর দেওয়ার আগে আপনি গল্প বা উপাদান খোঁজেন। দরকারে চষে ফেলেন আসমুদ্রহিমাচল। এই গানে সুর দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটেছে?

উত্তর: আমার এখনও মনে আছে, ‘থ্রি ইডিয়েটস’-এর গানের সময় রনছোড়দাস ঝাঁঝরকে খুঁজছে দুই বন্ধু—এই আইডিয়া আমায় সুর এনে দিয়েছিল। এবার ব্যপারটা অন্য। অ্যাসিডে শরীর-মুখ ঝলসে বাহ্যিক রূপ পোড়ে কিছু মেয়ের। বদলে জায়গা করে নেয় তাঁদের ভেতরের সৌন্দর্য। মনের ভেতর ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা অপমানের আগুন। সেগুলো দিয়ে কিন্তু দিব্য ছবি আঁকা যায়। সুর দিয়ে। আমি এবার সেই উপাদান দিয়ে সুর করেছি। একই সঙ্গে গায়কের কথা মনে রেখেও সুর করি।

বাংলা গানের নতুন প্রতিভা নোবেল।‘ও দ্রুত গান তুলে নিতে পারে।’

প্রশ্ন: এই গানের জন্য নোবেল-ই কেন?

উত্তর: কারণ, আমি এই গানের সুর করেছি নোবেলকে ভেবেই। কোনও কারণে যদি ও না গাইত তাহলেই এই গানেরই সুর হত অন্য রকম। যিনি গাইতেন, তাঁর মত করে। দেখুন, এই ধরনের গান বাঁধার অনুপ্রেরণা কিন্তু নোবেলের মতো নতুন প্রতিভারাই। ওঁরা অন্যের গান গাওয়ার পাশাপাশি যাতে নিজেদের গানও গাইতে পারে তার জন্য তো অরিজিনালসের দরকার অবশ্যই। নোবেলের আরও গুণ আছে। ও দ্রুত গান তুলে নিতে পারে। ওর সঙ্গে যখন প্রথম বসেছিলাম তখন গান নিয়ে বসিনি। গানের চিন্তাটা নিয়ে বসেছিলাম। ওর সঙ্গে আলোচনা করে জানালাম কী চাইছি। নোবেল সেটা বুঝে নিয়ে গানে নিজেকে উজাড় করে দিল।

প্রশ্ন: কতটা তৃপ্তি পেলেন?

উত্তর: নোবেল জেমসের গান গাইতে ভালোবাসে। আজ যদি জেমস থাকতেন তাহলে উনিও আমার মতোই হয়তো নোবেলকে ডেকে বলতেন, তোমার জন্য একটা গান করতে চাই। নোবেল নিজেকে সেই জায়গাতেই আস্তে আস্তে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছে।

৭০০-য় পা ‘মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য’-র: বিয়ে হল চৈতন্য-বিষ্ণুপ্রিয়ার

প্রশ্ন: ইউটিউবে রোজ বহু অরিজিনালস আপলোড হয়। রিয়েলিটি শো-তে সেই গান সম্প্রচারিত হলে লোকের নজর টানবে তা। এই চিন্তা থেকেই কি জি সারেগামাপা-র মঞ্চ বাছলেন এই গানের জন্য?

উত্তর: এটাও একটা প্রধান কারণ অবশ্যই। কারণ, রোজ প্রতিযোগীরা একাধিক গান করেন অন্য শিল্পীদের। যা আগে থেকেই জনপ্রিয়। ওঁরা অবশ্যই নিজেদের মতো করে গেয়ে থাকেন। কিন্তু অমুকের গান গাইছে ব্যাপারটা থেকেই যায়। ফলে, তুলনাও চলে আসে। এবং পরের দিন সেই গানের কথা কেউ মনে রাখেন না। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের গান লোকে শুনবে বেশি। তাছাড়া, এটা নোবেলের জন্য তৈরি গান। একদম ওর নিজস্ব সম্পদ। ফলে, এখানে চাপ নেই। ও স্বাধীন ভাবে গেয়েছে।

প্রশ্ন: এভাবেই কি গানের মধ্যে দিয়ে আজকের দিনে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন?

উত্তর: বলতে পারেন। গান মানুষকে খুব চট করে ছুঁয়ে যায়। বক্তৃচা মানুষকে বোর করে। কিন্তু গান সেই একউ বার্তা মনে গেঁথে দেয় খুব সহজে। তাই মনে হল, গান যদি ঠিকভাবে বেঁধে তাকে বিদ্রোহের হাতিয়ার বানানো যায়, সে কিন্তু আগুন জ্বালাতে পারে। আর তখনই সঙ্গীত শিল্প। তার সার্থকতা। তা যদি না হয়, তবে গান শুধুই এন্টারটেনমেন্ট।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...