পিবিএ, ডেস্ক: ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় করার জন্য গুগল এডসেন্স অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে গুগলের তুলনা নেই। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে তারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিস্ঠান। ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনের একটি অংশ এডসেন্স। গুগল এডসেন্স নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক লেখা ইতিমধ্য আছে. আমি আমার মত করে লিখলাম যাতে নতুনদের কাজে লাগে। যারা এডসেন্স ব্যবহার করেন তারা অনেকেই হয়তো ব্যাপারটা জানেন। তবুও শেয়ার করছি নতুনদের জন্য।
প্রথমেই প্রশ্ন করা স্বাভাবিক, এডসেন্স কি ? এককথায় এডসেন্স হচ্ছে ওয়েব সাইটে বিজ্ঞাপন রাখার জন্য গুগলের একটি পদ্ধতি। আপনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নিশ্চয়ই বিভিন্ন লিংক দেখেছেন যার পাশে Ads by Google লেখা। এগুলিই এডসেন্স বিজ্ঞাপন। আপনার ওয়েব সাইটে এই বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য এডসেন্স এর রেজিষ্ট্রেশন করাই যথেষ্ট। এরপর ওয়েব পেজে কোন ভিজিটর যখন কোন লিংকে ক্লিক করবেন তখন সেই সাইটের মালিক হিসেবে আপনি টাকা পাবেন। প্রতি ক্লিকের জন্য কয়েক সেন্ট থেকে শুরু করে কয়েক ডলার পর্যন্ত। মাসে আয় হতে পারে কয়েকশ ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলার। ফল পাওয়া যায় সাথে সাথে।
এডসেন্স কিভাবে কাজ করে জানার জন্য আরো কিছু বিষয়ে ধারনা থাকা প্রয়োজন। যেমন গুগল এডওয়ার্ডস। কোন কোম্পানী বা ব্যক্তি যদি গুগলকে ব্যবহার করে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিতে চান তাহলে তাকে বলতে হয়, আমি অমুক বিজ্ঞাপন অতদিনের জন্য দিতে চাই, প্রতি ক্লিকের জন্য অত পরিমান টাকা দেব। তাদের সাথে গুগলের চুক্তি এটুকুই। এটাই এডওয়ার্ডস।
ধরুন কোন কোম্পানী তার পন্যের বিজ্ঞাপনের জন্য গুগলের সাথে যোগাযোগ করল মাসে ১০ হাজার ডলারের। প্রতি ক্লিকে তারা ১ ডলারের বেশি দেবে না। গুগল তাদের বিজ্ঞাপনকে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে পাঠিয়ে দেয়। আপনি এডসেন্সের সদস্য হলে আপনার ওয়েব সাইটেও সেটা পেতে পারেন। কেউ সেই লিংকে ক্লিক করলে আপনার একাউন্টে ১ ডলার হিসেব জমা হবে। আপনি যে কোন সময় আপনার হিসেব জানার সুযোগ পাবেন। মাসে একবার যদি বিল করতে চান তাহলে বিল করলে আপনার ঠিকানায় চেক পাঠাবে গুগল।
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, যে কোম্পানীর এডসেন্স বিজ্ঞাপন সে জানে না তার বিজ্ঞাপন কোথায় দেখা যাবে। আপনিও কখনো নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ পাবেন না ঠিক কোন বিজ্ঞাপন আপনার সাইটে পাবেন। যেহেতু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের জন্য মুল্য বিভিন্ন রকম, আপনার ওয়েব সাইটে প্রতি ক্লিকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অর্থ পেতে পারেন। আপনার রিপোর্ট দেখে জানতে পারেন কোন ক্লিকের জন্য কত জমা হয়েছে। অভিজ্ঞতা বাড়লে কম টাকার ক্লিকের থেকে বেশি টাকার ক্লিকের বিজ্ঞাপনে বাছাইএর ব্যবস্থা করা যায়। তবে আগেই জানিয়ে রাখা ভাল, প্রতি ক্লিকে বেশি টাকা হলেই আপনি বেশি টাকা পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। ভিজিটর যদি বেশি টাকার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার চেয়ে কম টাকার লিংকে নিয়মিত ক্লিক করে তাহলে আপনার আয়ের সম্ভাবনা বেশি। মুল বিষয় হচ্ছে আপনার ওয়েব সাইটে ভিজিটর যত বেশি, ক্লিক করার সম্ভাবনা তত বেশি এবং আয় তত বেশি।
কাজটি কিভাবে করা সম্ভব দেখা যাক। আপনার একটি ওয়েব সাইট থাকতে হবে। এখনও যদি না থাকে তাহলেও এই মুহুর্তেই সেটা শুরু করতে পারেন।
১. Blogger.com সাইটে গিয়ে একটি ব্লগ তৈরী করুন। কয়েকটি ক্লিক করাই যথেষ্ট। এজন্য আপনার একটি ইমেইল এড্রেস প্রয়োজন হবে।
২. পছন্দমত টেম্পলেট বাছাই করুন। বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নানা ধরনের ব্লগার টেম্পলেট পাওয়া যায়। পছন্দমত কোন একটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। শুরুতেইকরতে হবে এমন কথা নেই, যে কোন সময় টেম্পলেট পরিবর্তন করে ওয়েব সাইটের সৌন্দর্য বাড়ানো যাবে।
৩. ব্লগ টিউন লিখতে শুরু করুন। কি নিয়ে লিখবেন ? আপনার যা ইচ্ছে। যদি গেমখেলতে ভালবাসেন গেমের রিভিউ লিখুন, মুভি দেখলে মুভির রিভিউ-খবর ইত্যাদি লিখুন। চারিদিকে লেখার মত বিষয়ের অভাব নেই।
৪. এডসেন্স একাউন্ট খুলুন। ব্লগার সাইটে এজন্য লিংক পাবেন। এখানে আপনার সাইটের ঠিকানা এবং পরিচিতি, আপনার ঠিকানা এসব তথ্য দিয়ে ফরম পুরন করতে হবে। এই ঠিকানায় আপনার নামে চেক পাঠানো হবে। আপনার সাইটে কোথায়, কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখা যাবে সেটা সিলেক্ট করলে তারাই বলে দেবে কিভাবে সেটা করতে হবে।
৫. বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে আপনার ব্লগের পরিচিতি লিখে দিন। ফলে সার্চ করে আপনার ব্লগ পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ওয়েব সাইটে, সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে প্রচার বাড়ান।
অল্প কথায় কাজ এই টুকুই। এরপর একটু একটু করে আরো জানতে চেষ্টা করুন কিভাবে সাইটকে আরো উন্নত করা যায়, কিভাবে ভিজিটর বাড়ানো যায়, বিজ্ঞাপন কিভাবে রাখলে বেশি আয় করা যায়।
এখানে কিছু সাধারন তথ্য উল্লেখ করা হচ্ছে:
১. ক্লিক করলেই আয় হয় একথা ভেবে নিজেই বারবার ক্লিক করবেন না। গুগল খুব সহজেই আপনার ক্লিক এবং ভিজিটরের ক্লিক চিনতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার এডসেন্স রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করা হবে।
২. বেশি ভিজিটর পাওয়ার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি ভাল ওয়েবসাইট তৈরী। অন্যভাবে, ভিজিটরের আগ্রহ থাকে এমন বিষয় রাখা। ভুলে যাবেন না গুগল মুলত সার্চ ইঞ্জিন। কোন ওয়েব সাইট সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বেশি, কোথায় কত ভিজিটর যায়, কতক্ষন থাকে, কি করে এসব তথ্য তাদের চেয়ে ভাল অন্য কেউ জানে না। তাদের ঠকাতে চেষ্টা করবেন না। সাইটের প্রচার এবং মুল সাইটের বিষয়ের মধ্যে গড়মিল করবেন না।
৩. আপনার সাইটে বিজ্ঞাপন পাবেন সাইটের বিষয়ের সাথে মিল রেখে। যেমন বইয়ের সাইট হলে বিভিন্ন প্রকাশক, বই বা বিক্রেতার বিজ্ঞাপন, ফটোগ্রাফি সাইট হলে ক্যামেরা, নির্মাতা বা বিক্রেতার বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। এডসেন্সে সাধারনভাবে মানুষের আগ্রহ রয়েছে এমন কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং আপনার সাইটেও সে সম্পর্কিত তথ্য রাখুন।
৪. বিনে টাকায় শুরু করার জন্য গুগলের ব্লগার অবশ্যই ভাল যায়গা। আপনার কোন খরচই নেই। তাহলেও দীর্ঘ্যস্থায়ী সাইটের জন্য নিজস্ব ডোমেইন নেম, নিজস্ব হোষ্ট থাকাই ভাল। সেক্ষেত্রে ব্লগার ছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতেপারে। ব্লগার সহজ, কিন্তু ব্লগারের তুলনায় এগুলিতে কাষ্টমাইজ করার সুবিধে অনেকবেশি।
জানার জন্য এটুকু উল্লেখ করা যায়, ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগ তৈরী করতে খরচ নেই কিন্তু সেখানে গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা যায় না। আর জুমলায় ফ্রি হোষ্টিং এর ব্যবস্থা নেই। ব্লাগার ছাড়াও আরো কিছু সাইট ফ্রি হোষ্টিং এর সুবিধে দেয়। এদেরমধ্যে Tumblr এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
৫. সাধারনত বিজ্ঞাপন দেয়া হয় বিক্রির জন্য (পন্য অথবা সেবা)। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অনলাইন লেনদেন এর সম্ভাবনা বেশি। অথচ বাংলাদেশে অনলাইনে কেনা কাটার ব্যবস্থা নেই। অন্যভাবে বললে, বাংলাদেশ থেকে কেউ কিছু কেনার জন্য সাধারনত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে না। কাজেই বাংলায় ওয়েবসাইট তৈরী করলে এমনিতেই ক্লিকের সম্ভাবনা কমে যায়। যদি সম্ভব হয় সারা বিশ্বের জন্য ইংরেজিতেওয়েবসাইট তৈরী করুন।
নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, নিজের খরচ চলার মত আয় পেতে কতটা সময় লাগতেপারে ?
খুবই গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন। এতে এমন জাদুকরী কিছু নেই যে রাতারাতি আপনি হাজার ডলার আয় করবেন। হাজার ডলার আয়ের জন্য অন্তত দুই তিন বছর ক্রমাগত চেষ্টা করে ওয়েব সাইট উন্নত করার চেষ্টা করতে হতে পারে। এটুকু বলা যায়, এক সময় ফল পাওয়া যাবেই। কাজেই দেরী না করে শুরু করাই উত্তম। এখনও যাকিছু শিখতে বাকি আছে সেগুলি ক্রমে শিখে নেয়া যাবে। উন্নত মানের ওয়েব সাইট তৈরী, ওয়েব সাইটের প্রচার বাড়ানো, সার্চ ইঞ্জিন যেন সহজে খুজে পায় সে ব্যবস্থা করা (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও), এডসেন্স বাছাই করা, নির্দিষ্ট এডসেন্স ব্লক করা, এডসেন্স ছাড়াও আয়ের অন্যান্য পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে আগামীতে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্। -সূত্র ইন্টারনেট
পিবিএ/জেডআই