পিবিএ,ঢাকা: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ও গণমাধ্যম আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, অতীতেও দুর্যোগের সময়ে নানা ধরনের গুজব রটানো হয়, কিছু অনলাইন পোর্টাল থেকে মানুষকে আতঙ্কিত করার জন্য ভুয়া সংবাদ পরিবেশিত হয়। এই গুজব ও মিথ্যা সংবাদের বিরুদ্ধে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো ভূমিকা রাখতে পারে এবং রাখছে।
আজ সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডে তথ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব), সম্পাদক পরিষদ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্সের (অ্যাটকো) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সম্মিলিতভাবে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা। এ জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এ ক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমের ওপরই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বর্তায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা টক শোতে অনেকে অনেক কথা বলছেন, কিন্তু সরকার পর্যায়ক্রমে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেই এখনো বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক দেশের তুলনায় ভালো।
বৈঠকে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। নোয়াব, অ্যাটকো, সম্পাদক পরিষদের নেতারা বলেছেন, বর্তমানে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সংকটকাল চলছে। সংবাদপত্রের পাঠক কমেছে, বিজ্ঞাপনও কমেছে। হকার ও এজেন্টরা কাগজ বিলি করতে চাচ্ছেন না। অনেক পাঠকও নিতে চাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে হকার ও প্রেসকর্মীদের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তাঁরা। সরকারের কাছে সংবাদপত্রের বকেয়া বিল নিয়েও কথা হয়।
গণমাধ্যমের সমস্যার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ সংকটের সময়ে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন নানা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে সংবাদপত্রের সার্কুলেশন কমে গেছে, কোনোটার অর্ধেকে নেমে এসেছে, কোনোটা আরও কমে গেছে। হকাররা ও সংবাদপত্রে যাঁরা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন, তাঁরা নানা সমস্যায় পড়েছেন। টেলিভিশনেও কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে কী কী করা যায়, তাদের পাওনা বিলগুলো যাতে তাড়াতাড়ি দেওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী একে একে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চিকিৎসাবিষয়ক নির্দেশনা (ট্রিটমেন্ট প্রটোকল) তৈরি করে পুস্তিকা আকারে সারা দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা যাতে দক্ষভাবে করা যায়, সে জন্য ৬৪টি জেলা ও ১০০টি উপজেলার মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সব স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থারও বিবেচনা করছে সরকার।
ধাপে ধাপে সরকার সবকিছু করছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুল বন্ধ করার আগে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয়েছে। আবার এখন টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান শুরু করা হয়েছে। এ সংকটের সময় ইতিবাচক ও সঠিক তথ্য তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশের ওপর জোর দেন তথ্যমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রতিদিন–এর সম্পাদক নঈম নিজাম সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্যের কথা জানান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সংকটের সময়ও গণমাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখে এবং রাখবে। সংবাদপত্রশিল্পের স্বার্থে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পত্রিকাগুলোর পাওনা বিলগুলো দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ জানান তিনি।
সাংবাদিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন উল্লেখ করে অ্যাটকোর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু আগামী পাঁচ মাসের জন্য অ্যাটকোকে একটি থোক বরাদ্দের অনুরোধ জানান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ, নির্বাহী সদস্য ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ভোরের কাগজ–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক সুজাত, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, অ্যাটকোর পরিচালক ও ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন।
পিবিএ/বিএইচ