পিবিএ ডেস্ক: উইকিলিকস-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইকুয়েডর সরকার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও তাকে বের করে দিতে চাচ্ছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে সে দেশের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এই গুপ্তহত্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকস আদালতের সেই নথির অনুলিপি প্রকাশ্যে এনেছে। তারা বলছে, সম্ভাব্য গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও অ্যাসাঞ্জকে দূতাবাস থেকে বহিষ্কার করা হলে ইকুয়েডরের সংবিধান লঙ্ঘিত হবে।
এর আগে ৪ এপ্রিল উইকিলিকসের এক টুইটে বলা হয়, আইএনএ পেপার অফশোর কেলেঙ্কারি’তে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে বহিষ্কারের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দেশটির এক আইনপ্রণেতার ফাঁস করা আইএনএ পেপারে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনোর দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ পায়। এসব নথি উইকিলিকসে প্রকাশিত হয়েছে।
পরে আরেকটি টুইটে বলা হয় দ্বিতীয় আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে অ্যাসাঞ্জকে বের করে দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিতীয় দফায় নিশ্চয়তা পেয়েছে তারা।
তা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাকে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই দেশটির লন্ডন দূতাবাস থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়ে গেছে।
এদিকে অনলাইনে এ বহিষ্কার ও গ্রেফতার ঠেকানোর আহ্বান জানানো হলে বিক্ষোভকারীরা পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত এ দূতাবাসের সামনে জড়ো হন।
গত মঙ্গলবার ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, লন্ডন দূতাবাসে আশ্রয়ের শর্ত ‘বারবার ভঙ্গ’ করছেন অ্যাসাঞ্জ। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পারিবারিক ছবি প্রকাশের জন্য উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জকে দায়ী করেন মোরেনো।
টুইটার পোস্টে ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জো ভ্যালেন্সিয়া অবশ্য উইকিলিকস-এর দাবিকে ‘ভিত্তিহীন গুজব’ বলে উড়িয়ে দিলেও এরইমধ্যে তারা অ্যাসাঞ্জ-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে একজন কর্মকর্তাকে দূতাবাস থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। ইকুয়েডরের বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থাশীল নয় উইকিলিকস আর অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা। তার ভবিষ্যত নিয়ে অব্যাহত শঙ্কার মধ্যে উইকিলিকস-এর পক্ষ থেকে আদালতে অ্যাসাঞ্জের জবানবন্দির পুরনো নথিকে সামনে আনা হলো। জবানবন্দিতে অ্যাসাঞ্জ বলেছিলেন, ‘রাতে অচেনা লোকজন এই দূতাবাসের জানালা দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে। আমি আসলে গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার ভয়ে আছি। ঠাট্টা করছি না কিন্তু, সত্যিই বলছি।’
ইকুয়েডরের বিগত সরকার অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের অধীনে তার নাগরিকত্বও নিশ্চিত হয়। তবে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের বিরোধী মনোভাবের প্রতিফলন ঘটতে শুরু করে। ২০১৮ সালের জুনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুরক্ষার অবসান ঘটাতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা, তিনি সুইডেনে গেলে সুইডিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ করবে। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের নামে মৃত্যুদণ্ড দেবে। তাই কোনভাবেই দূতাবাস ছাড়তে নারাজ তিনি।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ইকুয়েডরের আদালতে অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডরের সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘কোনও ক্ষেত্রেই ইকুয়েডরের কোনও নাগরিককে অন্য দেশের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ নেই’। তিনি সে সময় বলেন, ‘বিষয়টা হলো, সরকার রাষ্ট্রের একটা অংশ মাত্র। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারে না, জাতিসংঘ স্বীকৃত অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না, বিধিবহির্ভূত বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে পারে না।’ তাকে দূতাবাস থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কার কথা জানানোর পর উইকিলিকস তাদের ইমেইল বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিদেশে নিজের দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ঢাকতে যদি প্রেসিডেন্ট মোরেনো একজন শরণার্থী প্রকাশকের সঙ্গে করা চুক্তি অবৈধভাবে বাতিল করে তবে ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না।’
বৃহস্পতিবার তাদের এক ইমেইল বিবৃতিতে বলা হয়, উইকিলিকস মোরেনোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রতিশোধ নিতে অ্যাসাঞ্জকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুক্রবার অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীদের বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন সত্য প্রকাশের দায়ে একজন প্রকাশককে বিচারের আওতায় নেওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছে, যুক্তরাজ্য ও ইকুয়েডরের সরকার তা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিলে গণতন্ত্রের জন্য সেটা খুব দুঃখজনক হবে।
ইকুয়েডরের বর্তমান সরকারের সন্দেহ, অ্যাসাঞ্জ ও উইকিলিকস আইএনএ পেপারস ফাঁসে জড়িত। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মোরেনো ও তার পরিবারের একটি ব্যক্তিগত ছবি ফাঁসের সঙ্গেও অ্যাসাঞ্জের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করছে তারা। প্রেসিডেন্ট মোরেনো গত মঙ্গলবার স্থানীয় একটি রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই দুই ঘটনাকে ইঙ্গিত করে বলেন, “কারো ব্যক্তিগত একাউন্ট হ্যাক বা ফোনে আড়ি পাতার অধিকার অ্যাসাঞ্জের নেই। …আমরা অ্যাসাঞ্জ ও তার আইনজীবীদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলাম তিনি অনেকবার তা লঙ্ঘন করেছেন।”
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সাড়া জাগানো বিকল্প সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয় ২০১০ সালে। মার্কিন কূটনৈতিক নথি ফাঁসের মধ্য দিয়ে উইকিলিকস উন্মোচন করে মার্কিন সাম্রাজ্যের নগ্নতাকে। সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠার পর ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসের আশ্রয়ে আছেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করে মুক্তমতের পক্ষের আন্তর্জাতিক দুনিয়ার অ্যাকটিভিস্টরা।
পিবিএ/এএইচ