এবার গুমের মামলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল সোমবার এ আদেশ দেয়।
যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদও রয়েছেন।
চিফ প্রসিকিউর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য এ সংঘবদ্ধ অপরাধ করেছে। এ জন্য আজকে একটি মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছি।
“মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। এদের মধ্যে বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে (কারাগারে থাকায়) হাজির করার আদেশ দিয়েছেন। আর ১১ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুারি এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিন গ্রেপ্তার সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।“
শেখ হাসিনা গতবছরের ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। তিনি এখনো ভারতেই আছেন।
এর আগে আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে এক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ভারতকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অন্তত দুটি গুমের অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারেরে গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত ১৫ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল বলেন, “গত ১৫ বছরে দেশে একটা ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছিল যে অস্ত্রের মাধ্যমে, তা হল গুম, ক্রস ফায়ার। সাদা পোশাকধারী, পোশাকধারী বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যেত, তারদের অধিকাংশই ফিরে আসত না।
“যারা ফিরে এসেছে তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু মামলায় আটক দেখানো হয়েছে, কাউকে গুলি করে ফেলে রাখা হয়েছে, কেউ স্বৈরশাসকের অবসানের পরে আয়নাঘর বা গুমঘর থেকে ফিরে এসেছে।”
তাজুল বলেন, “বছরের পর বছর গোপন কারাগারে আটক রেখে নির্যাতন, হত্যা, করা হয়েছে। দেশের ও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টে এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। সে অপরাধটা সংগঠিত হয়েছিল তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে, পরিকল্পনায়।”
তিনি বলেন, “এই বিচারের প্রাথমিক কাজটা আজকে শুরু করেছি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমরা খুব দ্রুতই শুরু করব। দ্রুত বলতে তাড়াহুড়া করে নয়, যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ততটুকু সময় নেব। এখানে প্রধানমন্ত্রী আছে, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টারা আছে, বিভিন্ন বাহিনী আছে, বিভিন্ন বাহিনী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে মন্তব্য করে তাজুল বলেন, “সেই অধ্যায়ে সবচেয়ে বড় যে প্রত্যাশা, সেটা হচ্ছে এই সমস্ত ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা।
“এবং আমরা বলেছি, ২০২৫ সালই হবে বিচারের বছর। এই অপরাধের সোথে যারাই জড়িত থাকুক, তারা কেউ রাষ্ট্রের চেয়ে বড় না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। সতুরাং আমরা বলেছি, আমার খুঁজছি অপরাধ, আমরা খুঁজছি অপরাধী।”