পিবিএ,ঢাকা: বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেছেন, উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা কিভাবে সংঘটিত হলো তা তদন্তের পরই বলা যাবে। চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারীর হাতে যে পিস্তল ছিলো তা খেলনা কিনা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় গোলাগুলি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গুলি বিনিময় হয়েছে কী না-আমরা সেটা বলতে পারব না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানাবেন। তবে যাত্রী এবং ক্রুরা বলেছেন, সেখানে তিনটি শব্দ হয়েছে। কিন্তু সেটা গুলির ঘটনা কী না তা এখনও নিশ্চিত নয়। এরকম কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা রয়েছে। সেই নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে ওই অস্ত্রধারী কীভাবে প্রবেশ করল- তা নিয়ে আমরা রীতিমতো হতবাক। এ বিষয়ে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব বলে আমরা আশা করছি।’
সোমবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামের শাহ আমানতে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় কম্বিং অপারেশন থেকে শুরু করে যা কিছু ঘটেছে সব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি আমার কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই। তিনি তাৎক্ষণিক বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সফলভাবে অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেন। ওনার নির্দেশনা মতে জাতি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে।’
এসময় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, আমরা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার সকল বেষ্টনী এবং ধাপগুলো ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছি। এখানে যেকোনো বস্তু স্কান্যারে ধরা পড়ার কথা। তার সঙ্গে কিছু ছিল না- আপাতত আমরা এটা বলতে পারি। এই ধরনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পিস্তল নিয়ে বিমানে ওঠা সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম মোসাদ্দেক আহমেদ, বেবিচক সদস্য (অপারেশন) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান, বিমানের গ্রাহক সেবা বিভাগের পরিচালক মোমিনুল ইসলাম, ফ্লাইট অপারেশনের পরিচালক ফারহাত হাসান জামিল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি এক অস্ত্রধারী যুবক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। পরে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী সন্দেহভাজন অস্ত্রধারীকে ধরতে কমান্ডো অভিযান পরিচালিত হয়। এরপর ছিনতাইকারীর নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে রুদ্ধশ্বাস এই অভিযান শেষ হয়। ফ্লাইটটিতে ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু ছিল।
কালকে পর্যন্ত জানা যাচ্ছিল ওই যুবকের নাম মাহাদী। তবে র্যাব আজ জানাল তার নাম পলাশ আহমেদ।
ঠিক কী কারণে ওই যুবক বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছিল তা এখনও অস্পষ্ট। সে ক্রুদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তবে পাইলট ও ক্রুরা সুকৌশলে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করায়।
তবে রোববার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবার রহমান জানান, নিহত বিমান ছিনতাইকারী মাহাদীর কাছে পাওয়া পিস্তলটি ছিল খেলনার। এ ছাড়া তার সঙ্গে আর কোনো বিস্ফোরক ছিল না।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেছিলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পারি স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদের জের ধরে সো-কলড ছিনতাইকারী বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। বিমানটির খবর আমরা জানতে পেরে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পিএম অফিসেও আমরা কথা বলি। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের কিছু নির্দেশনা দেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হয়।’
পিবিএ/জেআই