বাদল সাহা, পিবিএ, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দমূখর পরিবেশ এবং নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী স্বরসতী পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর এ পূজায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বড় ৪৫ ফুট লম্বা প্রতিমা দিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের আমবাড়ী গ্রামে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিমাটি তৈরী করেছেন শ্রীবাস গাইন (পাল)।
আজ রবিবার জেলার বিভিন্ন বাসা-বাড়ী, পাড়া-মহল্লা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মন্দির তৈরী করে প্রতিমা স্থাপন করা হয়। পরে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারন, উলু ধ্বনি ও ঢাকের বাজনায় মুখোরিত হয়ে ওঠে মন্দিরগুলো। এরপর দেবীর কৃপা ও জ্ঞান লাভের আশায় শিক্ষার্থীরা অজ্ঞলী প্রদান করেন। পূজা শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
এদিকে, জেলার সবচেয়ে বড় ৪৫ ফুট লম্বা প্রতিমা দিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের আমবাড়ী গ্রামের সার্বজনীন শ্রী শ্রী রাধাগবিন্দ ও গনেশ পাগল সেবাশ্রম চত্ত্বরে নির্মিত
৪৫ ফুট উচ্চতার এই সরস্বতী প্রতিমায় পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পুজা দেখার জন্য আমবাড়ী গ্রামের আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন লোক এসে জড়ো হয়েছে পূঁজাস্থলে। এছাড়াও বরিশাল, পিরোজপুর ও বিভিন্ন জেলা উপজেলার আত্মীয়-স্বজন এসেছে এ গ্রামে পুজা দেখার জন্য। এই পূজাকে কেন্দ্র করে বসেছে ৩দিন ব্যাপী গ্রামীন মেলা। আয়োজন করা হয়েছে ধর্মীয় যাত্রাপালা ও কবি গানের।
পাল শ্রীবাস গাইন (৪৫) বলেন, আমি আমার ৬ জন সহকারীকে নিয়ে এক মাস ধরে এ প্রতিমাটি তৈরি করেছি। এর আগেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের প্রতিমা তৈরি করেছি। আমি এ ধরনের প্রতিমা তৈরি করতে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে থাকি। কিন্তু এটা আমার গ্রামের পূঁজা । আমাকে আয়োজকরা যা দিবে আমি তাতেই খুশি। তবে আমি এর আগে ৪০ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরী করেছি। ৪৫ফুট উচ্চতার প্রতিমা এটাই প্রথম।
পিরোজপুর থেকে আগত গৌতম ডাকুয়া বলেন, আমি আমবাড়ী গ্রামের জামাই। যখন জানতে পারলাম ৪৫ ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমায় পূঁজা হবে তখন এই পূজা দেখার জন্য স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে শ্বশুরবাড়ী চলে আসলাম। আমার জীবনে এতো বড় সরস্বতী প্রতিমা দেখেনি।
পুরোহিত সুমঙ্গল ঢালী (৬৫) বলেন, আমি চল্লিশ বছর ধরে পূঁজা করি। কিন্তু এতো বড় প্রতিমায় কোন দিন পূজা করিনি। আমার আজকে অনেক স্থানে পূজা করার কথা ছিল, কিন্ত সব বাদ দিয়ে এখানে পূঁজা করতে এসেছি।
পূজা কমিটির সভাপতি অন্তর গাইন (৩০) বলেন, আমরা এলাকার যুবকরা মিলে এই পূঁজার আয়োজন করেছি। আমাদের এই পূঁজায় ৩ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আমরা এ ধরনের পূঁজার আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত।
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ বলেন, আমার ইউনিয়নে এতো বড় সরস্বতী পূঁজা হচ্ছে শুনে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আগামীতে যাতে এই পূঁজা আরো বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য আমি এলাকার যুবকদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
পিবিএ/বিএস/জেডআই