মো. হুমায়ুন কবির, গৌরীপুর: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি’) গবাদিপশুর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছ। প্রতিদিনেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ বিভাগে মেডিক্যাল টিম গঠন করেও ব্যাপকতা কমাতে পারছেন না। প্রতিদিন শুধুমাত্র পশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে ৫০ থেকে ১০০ টি গরু-বাছুর।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, এটি ভাইরাস ডিজিজ। শুধু গৌরীপুর নয়, সারাদেশই মহামারি আকার ধারণ করেছে। ভ্যাকসিনও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বেসরকারিভাবেও
ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ২৫-২৬ হাজার চাহিদা দিয়েছিলাম। পেয়েছি মাত্র ১০ হাজার। ভ্যাকসিন প্রাপ্তি চান রেয়েছে। এ দিকে আক্রান্ত স্থানের সিমটম, আক্রান্ত পশুর রক্ত, চামড়াসহ নানা স্যাম্পল সংগ্রহ করেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের ডেপুটি চিফ ইফইউফ্যামলজিস্ট ড. প্রবাদ চন্দ্ৰ সাহা ও পাবলিক হেলথের উপ-পরিচালক ড. খালেদা জেসমিন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায় ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ’ প্রতিদিনেই গরু আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত গরুর শরীরের ফোসকা পড়ছে। কোনো গরুর পা
ফুলে যাচ্ছে, কোনো গরুর গলাতে ঘা হচ্ছে। কিছু আক্রান্ত গরুর চামড়ার নিচে পচন ধরেছে। ফলে এ রোগে আক্রান্ত গরুর একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গরু খাওয়া-দাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে। গ্রামে প্রতিদিনেই এ ধরণের লক্ষণে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়চ্ছে। স্থানীয় পশু চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করার পরেও গরু ভালো হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগিরা।চামড়া নিচে গুটিগুটি হয়ে যায় কিছুদিন পর গুটিগুলো পুরো শরীরে ঘা’র মতো হয়ে যায়। তার পরও আস্তে আস্তে গুটি বাডে যায়। গুটি গুলো আম্তে আস্তে ফেটে যায়। আক্রান্ত গরুর সংখ্যাও বাড়চ্ছে।রোগটি ছোয়াছে ধরনে। বাছুরের হলে গাভীতেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় আক্রান্ত পশু দাঁড়াতে পারে না। গরুর শরীরে প্রচন্ত জ্বর থাকে। নাক-মুখ দিয়ে লালা পড়ে। গরুর লোমের নিচে পচন ধরে। ক্ষতস্থান থেকে পুজ পড়ে, ডেসিং করলেও, কমে না।
উপজেলার মাওহা ইউনিয়ের কড়মুড়িয়া গ্রামে তাহমিনা আক্তার প্রায়৩৫ হাজার মুল্যের বাছুরের এ রোগ দেখা দিয়েছ। তিনি জানিয়েছেন তার বাছুরটি ৫/৬ দিন যাবত কিছুই খেতে পারছে না। অন্যান্য গরগুলো নিয়েও শঙ্কিত আছেন।
অপরদিকে সহনাটি ইউনিয়নের পাছার গ্রামে তাসলিমা আক্তার জানিয়েছেন তার দুটি বাছুরের এ রোগে আক্রান্ত। একটি কিছু খেতে পারছে না। অচিন্তপুর ইউনিয়নের ফারুক জানান, ৩-৪ দিনে তার গরুর শরীরে ফোসকা ফোসকা গুটি হয়েছে। গুটিগুলোতে স্পর্শ করলে খুব শক্ত লাগে।
হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাজনীন সুলতানা জানান, এ রোগে আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পডে। মশা ও মাছি এ ভাইরাসের প্রধান বাহক। এছাড়াও কীট- পতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গরুর লালার মাধ্যমে এবং খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গাভির দুধেও এ ভাইরাস বিদ্যমান। তাই আক্রান্ত গাভির দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত পশুকে অন্যত্র সরিয়ে বা দূরে রাখার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুস্থ গরুগুলো যেন আক্রান্ত না হয় তার জন্য নিমপাতা, খাবার সোডা খাওয়াতে বলা হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১১টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোরবাণীর পশুকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। খামারী ও কৃষক পর্যায়ে সচেতনতার কার্যক্রমও চলছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাজনীন সুলতানা জানান, প্রতিদিন আক্রান্ত পশু হাসপাতালে আসে। এছাড়াও মোবাইলে ও মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আফরোজা আফসানা বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।