‘গ্রেফতার এড়াতে মোবাইল ব্যবহার করতেন না বিপ্লব লস্কর’

পিবিএ,ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশি বন্ধু সেঁজে পার্সেল প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ এটিএম কার্ড, চেক বই, পকেট রাউটার, সাড়ে তিন লাখ জাল টাকা, প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ এবং বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর ৩৪), ও তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪) এবং নাইজেরিয়ান নাগরিক চীডি (৪০), ইম্মানুয়েল(২৬), জন (৩১), আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডা কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক নিগুজেনি পাপিনি (৩২)কে গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল তাদেরকে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানা ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, দেশি-বিদেশী প্রতারক সদস্যরা বিভিন্ন পন্থার সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, ই-মেইল সংগ্রহপূর্বক ফেসবুকে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভীসহ বিভিন্ন ধরণের হয় পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলত। সম্পর্কে একটি পর্যায়ে দামি উপহার স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হীরা,, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার/ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলে। এরপর সেগুলো ব্যক্তির নাম ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠায়। প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সের গ্রহণের অপেক্ষায় থাকে। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশী প্রতারকরা বিভিন্ন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানায়, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে। পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেয়। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানায়, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরো বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে বার্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইন অন্যান্য আইনে মামলা হবে বলে মিথ্যা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

প্রতারিত ব্যক্তি মামলার ভয়ে প্রভাবকের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে দাধীকৃত টাকা পাঠালে পুনরায় ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ানা তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরো বড় অংকের টাকা দাবী করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।

প্রতারকরা তাদের দাবীকৃত টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক একাউন্টে জমা হওয়ার সাথে সাথে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিত।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ আরও বলেন, বিদেশী প্রতারক চক্রটি গ্রেফতার নুসরাতের মতো বহু বাংলাদেশীদের সহায়তায় এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলো। চক্রটি প্রতারণায় ব্যবহৃত ব্যাংক একাউন্টগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট জাল করে বিভিন্ন ব্যাংকে শত শত একাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়েছে। এ সকল ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তুলে নিত। আর এই টাকা তোলা এবং টাকা ভাগাভাগির কাজটি করত বিপ্লব লস্কর। সে বিদেশি নাম্বার ব্যবহার ক্ক্রে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি তদারকি করত। লস্করের সহযোগী হিসেবে কাজ করত সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০) এবং ইমরান হাসান ইকবাল (৩৩)কে নির্দেশনা দিত।
গ্রেফতারকৃত বিপ্লবের বিরুদ্ধে সিআইডির মানি লন্ডারিং মামল, মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ শতাধিক মামলা রয়েছে। এ মামলায় সে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে।

আরও পড়ুন...