করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ

ঘরে বসে সময় কাটানোর কিছু টিপস


শতাব্দী আলম : মাত্র একদিন ঘরে থেকেই বুঝতে পারছি, অলস সময় কাটানো কতটা দূঢ়হ! গণমাধ্যমকর্মী হিসাবে আমরা যারা দিনের অধিকাংশ সময় সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত থাকি, তাদের জন্য আরো কষ্ট। তবু নিজের এবং অন্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে থাকতে হবে। একটা উপন্যাসের প্লট ঠিক আছে সেটি শেষ করবো। পাশাপাশি দুইটা ছোট গল্প ধরেছি সেগুলিও। আপনারা যারা লেখক তাদেরতো কোন সমস্যাই না। বরং এটাই সেরা লেখাটা বের করার উপযুক্ত সময়। লেখালেখিও সারাদিন ভাল লাগবে না। তাই আরো কিছু কাজ বের করেছি আমি। প্রিয় পাঠক, আমার সময় কাটানো কাজগুলো আপনার সময় কাটাতেও সাহায্য করতে পারে।

প্রথমেই বলতে হবে, মহান আল্লাহ বান্দার প্রতিটি কাজেই মঙ্গল নিহিত রেখেছেন। আমরা পার্থিব শত ব্যস্ততার জাতাকলে পরিবারকে খুব অল্প সময় দেই। একবার ভাবুনতো আপনি আমি জীবনে কয়টা দিন পরিবারের সাথে কাটিয়েছি। একমাত্র অসুস্থ হলেই ঘরে থাকা হয়। তখনতো আর পরিবারের সদস্য মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানের আনন্দের সঙ্গী হওয়া যায় না। রোগীকে নিয়ে নিরানন্দ ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। এখন আমাদের সামনে নিরেট পারিবারিক সময় কাটানো সুযোগ। তাই যে কোন প্রকারে পরিবারের সকল সদস্যের সাথে আনন্দময় সময় কাটানোর পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আসুন অলস সময়টুকু পরিবারের সাথে আনন্দময় কাটাই।

মানব জাতি একটি মহামারি থেকে মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত। এই মহামারি মানুষের কামাই। এখন এ থেকে একমাত্র মহান আল্লাহ পাকের রহমতই আমাদের মুক্তি দিতে পারে। রোগ শোক যিনি দিয়েছেন। এ থেকে পরিত্রাণের পন্থাও সেই মহা মহিম আল্লাহই দিবেন। এজন্য মানুষ হিসাবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বেশী তওবা করা। মহান আল্লাহর করুণা ভিক্ষা চাওয়া। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সাফায়াত কামনা করা। মুসলিম হিসাবে নামাজই হচ্ছে সব থেকে উত্তম ইবাদত। কুরআন পাঠ, রোজা রাখা, বেশী বেশী জিকির আর নবী (সাঃ) এর দরুদ পাঠ করা। আর অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভাই-বোন নিজ নিজ ধর্মের চর্চার মাধ্যমে পার্থিব কৃপা ভিক্ষা করতে পারেন। আসুন ইবাদতের মাধ্যমে মানব জাতির আসু মুক্তি কামনা করি। সময়ও ভাল কাটবে।
আমি চাকুরির সুবাদে ঢাকা থাকি। মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আমার বাবা গত হয়েছেন। সন্তান হিসাবে মা-বাবার খিদমাত করা আমার কর্তব্য ও দায়িত্ব। কিন্তু সবসময় তা পারি না। আমি ঠিক করেছি, এ ক’দিন মার খিদমাত করবো। তাঁর সেবা করবো। আমরা গর্ভধারনী মার খিদমতে থেকে অলস সময় খুব অর্থবহ করতে পারি।
পার্থিব সহজ কিছু বিষয় সময় কাটানো উত্তম পন্থা। এর মধ্যে বই পড়া সর্বাগ্রে আসবে। সবার ঘরেই কমবেশী বই আছে। যেহেতু নতুন বই সংগ্রহ সমম্ভ না। তাই পছন্দের পুরোনো বইগুলো আবার পড়তে শুরু করতে পারেন। আপনি চাইলে অনলাইনে বিশে^র যে কোন লেখকের বই পড়তে পারেন। বই সময় কাটানোর অত্যন্ত কার্যকরী একটা পন্থা। আসুন বই পড়ি।
অবশ্যই ফজরের নামাজ আজান হবার সাথে সাথেই পড়ার চেষ্টা করবো। নামাজ পড়ে হালকা নাস্তা। তার পর ব্যয়াম। এক ঘন্টা ব্যয়াম করবো, তেইশ ঘন্টা সুস্থ থাকবো। যাদের সুগারের সমস্যা তাদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক। কয়েকটি হালকা ব্যয়ামের কথা বলবো। আমি প্রতিদিন ভোরে এটা চর্চা করি। তবে মনে রাখতে প্রতিটি ব্যয়ামের ফাঁকে নিজের সুবিধা মত সময় নিতে হবে। ১০ বার উঠবস করা। ১০ বার হাত উপরে উঠানো নামানো। ১০ বার দুই হাত সামনে পিছনে ছড়ানো। ১০ বার হাত ঘুড়ানো। ১০ বার দুই হাতের কব্জি ঘুড়ানো। হাত উপরের দিকে তুলে মুষ্টি বন্ধ ও খোলা ১০ বার। পায়ের হাটুতে দুই হাত ধরে ১০ গণনা করুণ। প্রথমে ডান পা, পরে বাম পা। ১০ বার দুই পা’য়ের কব্জি ঘুড়ান। পা’য়ের পাতা পেছনে ঘুড়িয়ে হাতে ধরে ১০ পর্যন্ত গণনা করুন। এভাবে দুই পা। এক পায়ে ভর রেখে অন্য পা হালকা ভাবে শুন্যে ভাসানো। দু’পা ছড়িয়ে দাড়িয়ে সামনে ঝুকে দুই হাতে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ছোয়ার চেষ্টা। এভাবে কয়েক বার। ডান বাম ডান বাম কয়েকবার পা চালানো। খুব সাবধানে ডানে বামে ঘাড় কাত করতে হবে। আরো সাবধানতার সাহিত ঘাড় ঘুরানো। জোড় আসনে বসে দুই পা’র পাতা মিলিয়ে হাটু উপর নিচ নাড়ানো, এতে কোমড়ের জয়েন্টে সতেজ হবে। বসে সামনে পা ছড়িয়ে মাথা সামনে ঝুকিয়ে হাটুর কাছাকাছি আনা। বড় বড় চোখ করে এক মিনিট দূরে তাকানো। হা করে চোয়াল ঘুড়াতে হবে ৫/৬ বার। বড় হা করে জিহ্বা বড় করে বার করা। বড় হা করে আ আ আ শব্দে স্বরধণির চর্চা। অজু করার মত মাথা, মুখমন্ডল, কান মাসেহ করতে হবে। মুখে বড় নিঃশ^াস টেনে নাক দিয়ে ছাড়তে হবে। একইভাবে নাকে টেনে মুখে ছাড়া। নিয়মিত ব্যয়াম মানুষিক ও শারিরিক সুস্থতার জন্য মহৌষধ হিসাবে কাজ করবে। ভাল হয় পরিবারের সবাইকে নিয়ে এটা করা। সময় ভাল কাটবে।
আমরা বড়রা কোন না কোনভাবে কাজ বের করে ফেলছি। সমস্য হলো শিশুদের নিয়ে। অথবা কলেজ বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়াদের। ঘরে বসে শিশুদের সাথে সময় কাটাতে কার না ভাল লাগে। যেহেতু স্কুল কলেজ বন্ধ। তাই নিয়ম করে এদের পড়ার খেয়াল রাখতে হবে। তবে সারাদিন পড় পড় করলে এদের বিরক্তি ধরবে। তাই পড়ার চাইতে অন্য কোন কিছুতেই বেশী সময় দিতে হবে। বিনোদন হিসাবে টিভি কম্পিউটারতো আছেই। তার সাথে এদের সাথে নানান মজার খেলার কোন বিকল্প নাই। কাগজে কলমে খেলা যেতে পারে। লুডু মেয়েদের খুব পছন্দ। কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা রান্নায় সময় ব্যয় করতে পারো। বই পাড়ার কথাতো বলেছিই। সন্তানের বিশেষ কোন প্রতিভা থাকলে এখনই সময় সেটি ঝালাই করে নেয়া। যেমন ছবি আঁকা, গান গাওয়া, নাচ এসব। ছেলেরা এই সুযোগে কম্পিউটারে পারদর্শী হতে পারো। তবে মোবাইল সবাই কমবেশী ব্যবহার করতে পারো। কারন ডিজিটাল প্রযুক্তির কোন বিকল্প নাই।
অনেকরই শখ বাগান করা। ছোটবেলা ‘আমার শখ’ রচনা লেখতে ছেলে-মেয়ে সবাই বাগান করার কথা একবার হলেও লিখেছি। আমি প্রথমদিন থেকেই ছাদ বাগানে হাত দিলাম। পাশে আমার যে ছোট্ট এক টুকরো জমি সেখানেও গাছ লাগালাম। বাড়ির অন্যরাও বাগান করতে পারেন। রাজধানির বাড়ি মালিকদের বলবো এ কদিন ছাদ খোলা রাখাই ভাল। এতে অনেকে ছাদে হাটার সুযোগ পাবেন। বারান্দা বাগানও করা যেতে পারে।
তবে মনে রাখবেন। আমরা একটি দূর্যোগময় পরিস্থিতে রয়েছি। কোনভাবেই এটাকে পিকনিকের আমেজে কাটানো ঠিক হবে না। ঘরে বসে বেশী বেশী পুষ্টিকর খাবার আপনার শারিরিক স্থুলতা বাড়াবে। আবার পর্যাপ্ত খাবারের সরবরাহেরও ঘাটতি রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে।
তবে সবাই বার বার সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন। প্রতিঘন্টায় খবর দেখুন। দেশের ও বিশে^র সবশেষ পরিস্থিতি জানুন। এটা খুব জরুরী। আসুন আমরা সবাই নিয়ম মেনে চলি। মানুষ হিসাবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন নিয়ে বেঁচে থাকি। আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে অশুভের বিরুদ্ধে বিজয়ী করবেনই। ইনশাআল্লাহ।
#
লেখক ঃ সাংবাদিক ও সাহিত্যক
২৫/০৩/২০২০

আরও পড়ুন...