পিবিএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরুর পর থেকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন ও ঢাকায় দুই সিটির নির্বাচনের পর আদৌ তারা নির্বাচনে যাবেন কি-না তা নিয়েই সংশয়ে ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ আনকোড়া রেজাউল করিমকে মেয়র প্রার্থী করায় কিছুটা আশার আলো দেখছে দলটি। দলের ভেতর চলছে মেয়র নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামার আলোচনা।
এবারের সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন রেকর্ড সংখ্যক ১৯ জন। বিপরীতে বিএনপির সে তালিকা একেবারে ছোট। মূলত মনোনয়ন চাচ্ছেন দুজন। তারা হলেন- নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। এর বাইরে আলোচনায় আছেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ ও সহ-সভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খান।
বিএনপি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আজ অথবা কালকের মধ্যেই চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর অনেকটাই চাঙাভাব এসেছে দলের ভেতর। আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিমকে অপেক্ষাকৃত সহজ মেয়র প্রার্থী হিসেবেই বিবেচনা করছে দলটি।
যদিও মাত্র এক সপ্তাহ আগেও পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আভাস পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন এবং ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় সিটি নির্বাচন নিয়ে স্পষ্টতই হতাশা বিরাজ করছিল নগর বিএনপিতে। সেই প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে আসেন দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন নগর বিএনপি কার্যালয় নসিমন ভবনে মহানগর ও জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানান বিএনপি মহাসচিব।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর, সেদিনই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে নিজেদের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন দলের সম্ভাব্য দুই প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্কর। দলের আরেকটি অংশ বলছে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা এরশাদ উল্লাহ বা নগর বিএনপির সহ-সভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খানকে মনোনয়ন দিয়ে চমক দেখাতে পারে বিএনপি। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবেন জানান এই চার নেতা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালি-বাকলিয়া) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন ডা. শাহাদাত। কারাগারে থেকেই সেই নির্বাচন করেন তিনি। ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে সেবার বিপুল ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সিটি নির্বাচন নিয়ে নিজের অনাগ্রহের কথা প্রকাশ্যে বলেছেন তিনি। তবে শনিবার রাতে মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তিনি এখন মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।
পরদিন গণমাধ্যমে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. শাহাদাত বলেন, ‘আ জ ম নাছির উদ্দীন ফের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাঠে বিএনপির প্রার্থীর জন্য কিছুটা ‘কঠিন’ হতো।’
শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত এবং আমাদের অধিকাংশ নেতাদের মতো ছিল নির্বাচনে না যাওয়া। কিন্তু কেন্দ্র থেকে যেহেতু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে নিজের আগ্রহের কথা দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। আশা করছি মনোনয়ন পাব। তবে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও ধানের শীষের হয়ে কাজ করব।’
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘নির্বাচন করা সকল রাজনৈতিক নেতার স্বপ্ন থাকে। আমারও সেই স্বপ্ন আছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে নগর বিএনপির সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচনে অংশ নেন। আমি এখনও কোনো নির্বাচনে অংশ নেইনি। নির্বাচনে যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমাকে পরিচিত করে দিতে হবে না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মানুষের স্বার্থে দেশের স্বার্থে বিএনপির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি।’
নির্বাচন নিয়ে নিজের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। তবে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করব না। কারণ এখন যে নির্বাচন হয় সে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। কারণ নির্বাচনের ফল কী হবে তা সবাই জানেন।’
নগর বিএনপির সহ-সভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, ‘কেন্দ্রের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। আমি তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলাম। দলের স্বার্থে অনেক ত্যাগ করেছি। মেয়র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। এখন দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে নির্বাচন করব। অন্য কাউকে দিলে দলের স্বার্থে কাজ করব। এখন দলকে গোছানোর সময়। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।’
পিবিএ/এমআর