চবিতে গভীর রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ৫০

পিবিএ,ঢাকা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বুধবার রাতের এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে অভিযান চালিয়ে ৫৯ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতভর হলের আশপাশে পুলিশি পাহারা বসানো হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি থমথমে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে দিনব্যাপী সংঘর্ষের পর বুধবার রাত একটার দিকে ছাত্রলীগের বিজয় ও কনকর্ড গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুর চালিয়ে বিজয় গ্রুপের কর্মীদের হল থেকে বের করে দেয় কনকর্ড গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল থেকে বিজয় গ্রুপের কর্মীরা বের হলে হলের সামনে মুখোমুখি হয় উভয় গ্রুপ।

পরে বিজয় গ্রুপ এ এফ রহমান হলের ভেতরে এবং কনকর্ড গ্রুপের কর্মীরা হলের সামনে অবস্থান নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চলে ইট-পাথর নিক্ষেপ এবং ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ।

অভিযোগ উঠেছে, কনকর্ড গ্রুপের কর্মীরা এ এফ রহমান হলে ঢুকে ৪৪টি রুম, চারটি মোটরসাইকেল কুপিয়ে ভাঙা হয়।

অনেকগুলো রুমে লুটপাট চালিয়ে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়। হলের লাইট নিভিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের গণহারে মারধর করেন তারা। এ সময় দুই গ্রুপের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়।

এর আগে একইভাবে সোহরাওয়ার্দী হলেও হামলা চালায় কনকর্ড গ্রুপের নেতাকর্মীরা। পরে রাত ২টার দিকে পুলিশ আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় কনকর্ডের ৫৭ জন ও বিজয় গ্রুপের ২ জনকে আটক করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাতভর হল ঘিরে পাহারাও দেয় পুলিশ।

রাত চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, ২০ জনেরও বেশি এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছে। সবাই খুব আহত ছিল। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জনকে চমেকে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে আলাওল হলের ২৩৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে বিজয় গ্রুপের এক কর্মীর সঙ্গে কনকর্ডের কর্মী ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বোরহানুল ইসলামের ঝামেলা হয়।

এর মীমাংসা করতে গেলে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের কর্মী আবীর হাসান তাকে চড়-থাপ্পড় দেন। এ ঘটনার জেরে গতকাল রাতে ক্যাম্পাসে ট্রেন এলে জিরো পয়েন্টের কাছে আবীরকে পেয়ে মারধর করে বোরহান ও তার সহযোগীরা।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ নিয়ে দিনভর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে বিজয় গ্রুপ এবং শাহজালাল হলের সামনে কনকর্ড গ্রুপ অবস্থান নেয়। তাদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, মধ্যরাতে শিবির স্টাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপুর নেতৃত্বে এ নৃশংস হামলা হয়েছে। আমাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। রাতের অন্ধকারে যারা আমাদের জুনিয়রদের উপর এভাবে হামলা চালিয়েছে তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু জানান, সন্ধ্যায় তিন হল থেকে বিজয়ের কর্মীরা আমাদের কর্মীদের বিতাড়িত করে। প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করলেও মধ্যরাতেও তাদের হলে ওঠার কোনো ব্যবস্থা করে দেয়নি প্রশাসন। রাতে তারা দুই হলে তারা উঠতে গেলে হামলা চালায় বিজয়ের কর্মীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, দুটি গ্রুপকে বারবার শান্ত থাকতে বলা হলেও সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে অনেকেই আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...