সোহাগ হাসান জয়,সিরাজগঞ্জ: ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী একটি চলন্ত ট্রাকে মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণীকে (২০) ধর্ষণের অভিযোগে ট্রাক চালক সোহেল রানাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক বেগম সালমা খাতুন আসামির উপস্থিতিতে এই রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ট্রাকচালক সোহেল রানা (৩২) বগুড়া সদর উপজেলার আশুখোলা গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে। সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু ট্রাইব্যুবানলের পাবলিক প্রসিকিউটর মাসুদুর রহমান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন চলছিল। স্বাভাবিক গাড়ী চলাচল বন্ধ ছিল। চন্দ্রা থেকে এই ভিকটিম সহ ০২ জন পুরুষ যাত্রী নিয়ে ড্রাইভার সোহেল রানা এবং হেলপার ওহাব শেখ তাদের ট্রাক বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। ট্রাকটির রেজিঃ নম্বর- বগুড়া-ট-১১-২৫১৬। বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হবার পর ট্রাকের হেলপার ট্রাক থামিয়ে যাত্রীদের জানান ট্রাকটি নষ্ট হয়ে গেছে। সারতে অনেক সময় লাগবে। এতে পুরুষ যাত্রী ২ জন নেমে যান। তবে মহিলা যাত্রী রিমি এই মামলার ভিকটিম তিনি ট্রাকের কেবিনের মধ্যেই ছিলেন। পুরুষ যাত্রী ২ জন নেমে যাওয়ার পর হেলপার ওহাব ট্রাক ড্রাইভার আসামী সোহেল রানা ও ভিকটিম রিমিকে ট্রাকের কেবিনের ভেতরে দিয়ে বাইরে থেকে কেবিনের দরজা আটকে দেন। এ সময় আসামী ‘সোহেল রানা ভিকটিমকে জোর করে ধর্ষণ করতে শুরু করলে ভিকটিম চিৎকার শুরু করলে তার চিৎকার শুনে ঐ ট্রাকের ১ জন পুরুষ যাত্রী ইউনুস আলী সুমন ট্রাকের কাছে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি তার মোবাইলে ভিডিও করেন। এটা আসামীরা দেখে দ্রুত ভিকটিমসহ ট্রাক নিয়ে বগুড়ার দিকে চলে যান। তখন ইউনুস আলী সুমন-১৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে, কন্ট্রোল রুম থেকে অবগত হয়ে কড্ডার মোড় নামক স্থানে ২ জন আসামী এবং ভিকটিমসহ ট্রাকটি আটক করা হয়। তাদের সবাইকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানায় নেবার পর ভিকটিমের বাড়ীতে খবর দিলে তার বাবা এবং ভাই থানায় আসেন। তারা ভিকটিমের কাছে ঘটনা শুনে ভিকটিমের বাবা মোঃ আলতাফ হোসেন খান অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত২০০৩) এর ৯ (১)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করার পর ট্রাক ড্রাইভার সোহেল রানা স্বেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে দ্যা কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর এর ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে ২০২৩ সালের ১২ মে আসামী ওহাব কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। মামলাটিতে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক এ রায় প্রদান করেন।