চাঁদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো ৪ জনের মৃত্যু


মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর : চাঁদপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরো ৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ১জন নিজ বাড়িতে ও ১জন হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। তাদের সবার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে করোনা উপসর্গে চাঁদপুরে ৬ জন মারা গেলো।

অপর দিকে চাঁদপুর জেলার মতমলব উত্তর উপজেলায় এক ইউপি মেম্বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। করোনা আক্রান্ত ইউপি মেম্বর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। তার বয়স আনুমানিক (৫০) বছর। এ নিয়ে চাঁদপুরে ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হলো।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান মিথেন, ওই মেম্বার করোনায় আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ওই মেম্বারের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ জানা যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই মেম্বার বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ঢাকায় নমুনা দিয়েছিলেন করোনা টেস্টের জন্য। এ নিয়ে মতলব উত্তর উপজেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হলো ৪জন।

এর মধ্যে ৫০ বছর বয়সী সিএনজি অটোরিক্সার চালক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, ৫ বছর বয়সী শিশু কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, ৩০ বছরের যুবক নিজ বাড়িতে এবং ৩০ বছর বয়সী আরেক যুবক হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন।

মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শিকারীকান্দি গ্রামের ৩০ বছর বয়সী এক যুবক বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। জ্বর, সর্দি, কাশি প্রভৃতি করোনার উপসর্গ ছিল তার। অসুস্থ অবস্থায় তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে তার শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন বেশ কয়েক দিন। সেখান থেকে বুধবার তাকে মতলব উত্তর উপজেলার পুতিয়ারপাড় এলাকায় অবস্থিত বোনের বাড়িতে দিয়ে যায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

স্থানীয় লোকজন অসুস্থতার কারণে তাকে সেখানে থাকতে আপত্তি করলে বৃহস্পতিবার সকালে শিকারিকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে আনা হয়। দুপুরে তিনি মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহের জন্য শুক্রবার দুপরে চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস থেকে লোক পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন মো. সাখাওয়াত উল্যাহ।

চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের ৩০ বছর বয়সী এক যুবককে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আক্রান্ত যুবক করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দাফন করা হচ্ছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজেদা বেগম পলিন বলেন, যতটুকু জেনেছি আক্রান্ত যুবক সিএনজিচালক ছিলেন। শুনেছি সে পেট ব্যাথায় আক্রান্ত ছিল। এটিও করোনার একটি উপসর্গ। তাছাড়া মানুষ অনেক সময় সঠিক তথ্য দেয় না। রোগ ও উপসর্গ গোপন রাখেন। রামপুরে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রেও আমাদের সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি। পরে রিপোর্ট এসেছে পজেটিভ। তাই আমরা কোনো রিস্ক নিতে চাই না। মৃত যুবকের নমুনা সংগ্রহ ও বিশেষ ব্যবস্থায় দাফনের জন্য লোকবল পাঠিয়েছি। নমুনা আইইডিসিআর-এ পাঠানো হবে। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে মৃত যুবক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা।

অন্যদিকে শাহরাস্তি উপজেলার সূচিপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের নরিংপুর গ্রামের ৬ বছর বয়সী এক শিশু নিউমোনিয়াসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে শিশুটি মারা যায়। এরপর করোনা টেস্টের জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে শিশুটি করোনায় আক্রন্ত ছিল কিনা।

শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসন ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আকতার জানান, দুপরে শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম (এলএলবি) শিশুটির বাড়ি লকডাউন করেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বর ওই পরিবারকে আনুসাঙ্গিক খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেছে।

এর আগে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট এলাকার ৫০ বছর বয়সী এক সিএনজি অটোরিক্সার চালক প্রায় ২ সপ্তাহ আগে মতলবে মোটরসাইকেল চালাতে যেয়ে আরেকটি মোটরসাইকেলের সাথে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়। বিশেষ করে তার মাথা মারাত্মকভাবে জখম হয়। চাঁদপুর সদর হাসপাতাল হয়ে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাত তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মারা যাওয়ার ২/৩ দিন আগে ওই ব্যক্তির পাশের সিটের একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে তার মধ্যেও করোনার বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। মারা যাওয়ার পর তার শরীর থেকে করোনা টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মৃতদেহ এখনো হাসপাতালে আছে।

সূত্র আরো জানায়, ওই ব্যক্তির করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে বলে পরিবারকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো কাগজপত্র পাওয়া না যাওয়ায় করোনার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তরে ২জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার খবর আমি পেয়েছি। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঢাকা মেডিক্যাল ও কুমিল্লা মেডিক্যালে মারা যাওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে সেখান থেকে জানানোর কথাও না।

পিবিএ/মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ/মোআ

আরও পড়ুন...