“ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প” এবং “বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাষ্ট” নামক দুইটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকুরি প্রত্যাশীদের নিকট থেকে ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। ডিএমপির ডিবি পুলিশের মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অভিযানে চক্রটির ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. আজিজুল হাসান এমরান (৫১), বিউটি আক্তার (৩৫), মো. কবির উদ্দিন পিয়াস (৩০)। এসম গ্রেফতারদের কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা ও ভুয়া চাকুরির নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকালে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য । তারা গত ১৫ জুন আমেরিকার বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ফেয়ারফ্যাক্স এর অর্থায়নে “ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প” নামে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থায় ৬ হাজার ৪৭২ টি পদের বিপরীতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। একই দিন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট (বি.পি.কে.টি) নামের প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৯৪৪ টি পদের বিপরীতে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট এ (www.bpktp.org) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন চাকরির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ট্রাস্টটির একটি ভুয়া নিবন্ধন নম্বরও ব্যবহার করা হয়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দুইটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই প্রতিটি পদের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা হারে পে অর্ডারের মাধ্যমে টাকা নিতো। এরজন্য মিরপুরে সোনালী ব্যাংক বেগম রোকেয়া স্মরণি শাখায় প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট নামে একটি হিসাব নম্বর খুলে তাঁরা। যদি ব্যাংক প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্টের যে কাগজপত্র প্রয়োজন হয় সেগুলো জমা নেয়নি। ঐ হিসাবেই টাকাগুলো আসে। প্রায় ১৯ লাখের মতো টাকা আসে। এই টাকাগুলো নিয়ে তারা যখন পালানোর চেষ্টা করছিলেন আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিউটি আক্তার(৩৫) কে গ্রেফতার করি। বিউটি আক্তার আমাদেরকে দুজনের নাম বলেন তাদেরকে আমরা গ্রেফতার করি। তাদের দুজনের কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা ও মালামাল জব্দ করি।
তিনি বলেন, দুইটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই অফিসের ঠিকানা হিসেবে আমেরিকা প্রবাসী একটি বাড়ির নাম্বার দেওয়া হয়। বাড়ির মালিক ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। “বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট” বা “ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প” নামের কোন প্রতিষ্ঠান উক্ত ঠিকানায় নেই।
উনিশ লক্ষ টাকা সরিয়ে নেওয়া কিংবা বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা তাদেরকে খুজতেছিলাম। বিউটি আক্তারকে গ্রেফতারের পর তথ্যের ভিত্তিতে বাকি দুজনকে গ্রেফতার করি। তারা কি জন্য করেছিলেন, তড়িঘরি করে এটা কেন করলেন সেটা আমরা তদন্ত করে জানতে পারবো। তারা কত লক্ষ টাকা ব্যাংক থেকে তুলেছেন এবং কি করেছেন সেটা আমরা ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলে এবং তিনি কেন প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্টের নামে হিসাব নম্বর খোলার আগে তাদের কাছ থেকে কাগজপত্র নিলেন না। মানুষ তো সরকারি ব্যাংক মনে করে কিংবা বিশ্বাস রেখে চাকরি প্রত্যাশীরা টাকাটা জমা দিয়েছেন। আমরা সবকিছুই তদন্তের মধ্যে নিয়ে আসবো।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় ১ টি মামলা রুজু করা হয়েছে বলেও জানান হারুন অর রশীদ।