মাইনুল হক সান্টু,চারঘাট: রাজশাহীর চারঘাটে করোনা ভাইরাসের থাবায় হুমকির মুখে পড়েছে আমচাষীরা, পাইকার না থাকায় আমের নায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন উপজেলার হাজারো আমচাষীগন। লকডাউনের কারনে ঢাকা, চট্রগ্রাম, নোয়াখালীর আড়ৎ বন্ধ থাকায় উৎপাদিত আম বিক্রয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আমচাষীরা।
ভৌগলিক আবওহাওয়ার অনুকুলের জন্য পদ্মা বড়াল বিধৌত উপজেলার মাটি খুবই উর্বর যা আম চাষাবাদের জন্য উপযোগী এবং সু-স্বাদু। জানা গেছে উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ১২ হাজার ৮ শত ৪৯ হেক্টর কৃষি জমি আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮শত ১২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ রয়েছে। মৌসুমি ফল, আমের উপর নির্ভরশীল প্রায় কয়েক হাজার আমচাষী, ছোট, বড় খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ী, দৈনিক আয়ের শ্রমিক ও পরিবহন সেক্টর। আম সু-স্বাদু হওয়ার কারনে মুলত: আমের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। রপ্তানীও হচ্ছে কয়েকটি দেশে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুটি আমের কেবল আঁটি হয়েছে। পরিপক্কতা পেতে আরও দিন দশেক অপেক্ষা করতে হবে। তাই সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ মে শুক্রবার থেকে আম নামানোর অনুমতি থাকলেও চাষিরা আম নামাচ্ছেন না। করোনা সংকটকালে বাজার না পাওয়ার আশঙ্কা ও পর্যাপ্ত পাইকার না থাকায় চাষিদের তড়িঘড়ি আম নামানোরও ব্যস্ততা নেই। অথচ আগের বছরগুলোতে চাষিরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করতেন। বাগানে বাগানে শুরু হতো আম নামানোর উৎসব।
উপজেলার কাকঁড়ামারীর পরানপুরগ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার প্রায় ৪ বিঘা আম বাগান আছে। প্রতি বছর আম বিক্রয় করে ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা আয় হত। কিছু আম, আমি পাতা অবস্থায় বিক্রয় করি আর কিছু আম পেকে যাওয়ার পর বিক্রয় করি। কিন্তু এবছর আমের ফলন ভাল হওয়ার পরেও পাইকার না থাকায় আম বিক্রয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। একই কথা বলেন বুধিরহাটের আমচাষী খোরশেদ আলম। তিনি আরও বলেন আম মৌসুম এবছর দেড়িতে শুরু হওয়ায় আমে একধরনে পোক দেখা গেছে এবং গত কয়েকদিনের কালবৈশাখী ঝড়ে প্রচুর আম পড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক আমচাষীরা। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোন সহযোগীতা পায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
উপজেলা আমচাষী সমিতির সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, আম মৌসুমে আম পেকে যাওয়ার সময় বিশেষকরে বড় বড় আড়ৎদার, ফড়িয়ারা তাদের সাথে যোগাযোগ করে আমবাগানের আম ক্রয় করে। কিন্তু আড়ৎদাড়রা এখনপর্যন্ত আম ক্রয়ের বিষয়ে কোন সাড়া বা ক্রয়ের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমরা আমচাষীরা খুবই আতংকিত ও বিপদগ্রস্ত, প্রয়োজন সরকারী সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও অন্যান্য কৃষির মত প্রণোদনা যা আমচাষীদের ক্ষতি থেকে কিছুটা রক্ষা করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, জেলা প্রশাসক মহাদয়ের নির্দেশনায় আমচাষীদের আমের বাজারজাতকরনের জন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল সহযোগীতা করা হবে, যাতে করে আমচাষীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পিবিএ/মাইনুল হক সান্টু/বিএইচ