পিবিএ,ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে কোরবানির পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাটের’ যাত্রা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে।
এটুআই ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় ই-হাটের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
জানা গেছে, আইসিটি ডিভিশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
অনলাইন হাটের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটা একেবারেই সহজ কাজ নয়, আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির জন্য পশুর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে যোগান দেয়া, সঠিক সময়ে ডেলিভারিসহ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। তারা বলছেন, এটি খুব সহজ কাজ নয়। আমরা এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলাম তবে এতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক ভুলত্রুটিও হতে পারে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই।
অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোরবানি পশুর হাট বসাবে না ঢাকা ডিএনসিসি। সেই সঙ্গে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এবার কোরবানির পশুর মাংস বাসা বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। অনলাইনে পছন্দের পশু কেনার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটি জবাই করে বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মাধ্যমে এমন উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে অনলাইন প্রক্রিয়াটা কীভাবে করলে ভালো হবে, কি কি সমস্যা আসতে পারে, এসব ভেবে এ সেবাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তারা। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কোরবানির পশুর মাংস বাসা বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি এ কার্যক্রমের সঙ্গে থাকবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
জানা গেছে, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন এবার দুই থেকে তিন হাজার কোরবানির পশুর মাংস প্যাকেটজাত করে বাসা বাড়িতে পৌঁছানোর চিন্তা করছেন। ৪৫টা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা এ কাজটি করবেন। একটি পশু জবাই করে মাংস কাটার পুরো প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো মানুষকে কাছাকাছি আসতে হয়। যেটা এই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয় মেনে পশু কোরবানি করে মাংস কেটে ক্রেতার বাড়িতে দিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে বিক্রি হওয়া পশু রাখার জন্য মোহম্মাদপুরের বছিলা, উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা নির্ধারণের কাজ চলছে।
শনিবার অনলাইনে কোরবানি পশু কেনার লক্ষ্যে ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট’ এর উদ্বোধন করা হয়।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি ডিজিটাল গরুর হাট থেকে কেবল গরু কেনাই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাই করে মাংস বাসায় পৌঁছেও দেয়া হবে। আমরা এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলাম। এতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক ভুলত্রুটি হতে পারে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যত্রতত্র গরু বেচাকেনা বন্ধ এবং একটা সিস্টেমে আনা। ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু কেনাবেচা করা যাবে। এছাড়া আধুনিক উপায়ে পশু কোরবানিও দেয়া যাবে।
কোরবানিকৃত পশুর রক্ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও সুষ্ঠুভাবে করা যাবে। অনলাইনের মাধ্যমে পশু কেনাবেচা ও কোরবানি দেয়া হলে পশুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেগুলো আমরা ফেলে দিই, সেগুলো রফতানির জন্য সংরক্ষণ করা যাবে। চামড়া সংরক্ষণ আগের চেয়ে সহজ হবে। এটি একটি কম্পোজিট প্রক্রিয়া।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল গরুর হাটের মাধ্যমে কোরবানি পশু ক্রয়ে এক নতুন মাত্রা যোগ হলো। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে গেলেও ভবিষ্যতে কোরবানি পশু ক্রয়ে এ ধরনের অনলাইন প্লাটফর্মের উপর নির্ভর করা যাবে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব নির্ধারিত হাটের মধ্যে ছিল মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বছিলা), ভাষানটেক, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড-৬-এর (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রপার্টি ও সংলগ্ন খালি জায়গার অস্থায়ী পশুর হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ, বাড্ডার ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) সড়কের হাট, মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং হাট, আগারগাঁও, ৩০০ ফিট এলাকার ডুমনি, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম অংশ ও ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা।
তবে ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এগুলো থেকে তিনটি হাট বাদ দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো, ভাষানটেক, ইস্টার্ন হাউজিং এবং আফতাব নগরের হাট। তবে উত্তরার সবগুলো হাট মিলিয়ে বৃন্দাবন এলাকায় একটি হাট বসবে। অর্থাৎ যে হাটগুলো বসবে সেগুলো হলো, মোহাম্মদপুরের বছিলা, কাওলার হাট, ৩০০ ফিট সড়কের ডুমনি হাট, ভাটারার সাঈদ নগর হাট এবং উত্তরার বৃন্দাবন। এছাড়াও থাকছে গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট।
কোরবানির পশুর হাটের বিষয়ে এর আগে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবার পশুর হাট বসাবে না ডিএনসিসি।
মেয়র বলেন, শহরে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে যদি পশুর হাট বসে সেটি কিন্তু জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আমি পরিবর্তন করতে বলেছি। হাট ইজারা দিয়ে হয়তো কোটি টাকা আয় করা যাবে, কিন্তু টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই তুলনামূলক কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাট বসানোর নির্দেশ দিয়েছি যাতে ব্যাবসায়ীরা পশু বিক্রিও করতে পারে আবার জনস্বাস্থ্যও বিবেচনায় রাখা যায়।
মেয়র বলেন, তেজগাঁও, আফতাবনগর, ভাষানটেক এলাকায় বড় হাট বসে প্রতিবার। সেখান থেকে আমাদের অনেক টাকা আয়ও হতো। কিন্তু এ বছর করোনা বিবেচনায় এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এসব স্থানে হাট বসাতে দেব না। এছাড়া উত্তরা ১০, ১১ ও ১২ এই তিনটি সেক্টরে বড় হাট বসত। গত বছর এ হাটে ইজারা মূল্য পাওয়া গেছে চার কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কিন্তু এ বছর এখানে আমরা হাট বসতে দেব না। উত্তরাবাসীর জন্য উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় বড় হাট বসবে, তারা সেখান থেকে পশু কিনতে পারবেন এবং ওই এলাকায় মানুষের বসবাসও কম।
এছাড়া মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের জন্য বছিলায় একটা হাট বসবে। পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী ও ৩০০ ফুট সড়কের সাইদ নগর এলাকায়, কাউলায়। গাবতলীতে স্থায়ী পশুর হাট আছে, সেটি থাকবে।
পিবিএ/এসডি