চিকিৎসকে হত্যার হুমকিদাতা তাফসিরুল শিবিরকর্মী: র‍্যাব

পিবিএ,ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামানকে হুমকিদাতা গ্রেফতার তাফসিরুল ইসলাম (২৩) ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

সংস্থাটি বলছে, তাফসিরুলের বাবা রফিকুল ইসলাম রফিও স্থানীয় জামায়াতে ইসলামির সক্রিয় কর্মী। ২০১৩-১৪ সালে এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির অপরাধে রফির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয় এবং তিনি কারাভোগ করেন।

এর আগে বুধবার (১৬ আগস্ট) দিনগত রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে তাফসিরুলকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব জানায়, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রমণ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্যই তাফসিরুল ওই চিকিৎসককে হত্যার হুমকি দেন। চিকিৎসায় সাঈদীর পরিবারও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারপরেও যারা এই চিকিৎসককে হেয় করে কথা বলছেন ও হুমকি দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গত ১৩ আগস্ট জামায়াত নেতা সাঈদী অসুস্থ হওয়ায় তাকে বিএসএমএমইউ’র জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৪ আগস্ট রাতে তিনি মারা যান। সাইদী চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় বিশেষজ্ঞ টিম আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা করেন। সাঈদীর পরিবারও তার চিকিৎসার ব্যাপারে চিকিৎসকদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ চিকিৎসক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া এস এম মোস্তফা জামানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পাশাপাশি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী চিকিৎসকের এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীর (জিডি) প্রেক্ষিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-২ ও ৬ এর যৌথ অভিযানে ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকা থেকে তাফসিরুল ইসলামকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তাফসিরুল জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারসহ চিকিৎসক মোস্তফা জামানকে ফেসবুকে ও মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

তাফসিরুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তাফসিরুল স্থানীয় একটি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছে। সে স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য। সে আইটিতে দক্ষ হওয়ায় অনলাইনে ইমেইল মার্কেটিংয়ের কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতো।

এছাড়া, গ্রেফতার তাফসিরুলের বাবা রফিকুল ইসলাম রফি এলাকার জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। ২০১৩-১৪ সালে এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির অপরাধে তার পিতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় এবং এসব মামলায় সে কারাভোগ করেন।

গ্রেফতার তাফসিরুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর#তাফসিরুল ইসলাম” ও “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর ওরফে তাফসিরুল ইসলাম” নামে দুইটি ফেইসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে পরিচালনা করে।

মূলত সে দলীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে জামায়াত সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক মোস্তাফা জামানের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বিভিন্ন মাধ্যমে খুজে বের করে হোয়াটসঅ্যাপে হত্যার হুমকি দেয়।

পরবর্তীতে চিকিৎসক মোস্তফা জামান জিডি করলে তাফসিরুল মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মুছে ফেলে। কিন্তু তার মোবাইলে হত্যার হুমকি সম্বলিত মেসেজের স্ক্রীনশট পাওয়া যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রমণ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্যই তিনি ডাক্তারকে হুমকি দেন। সাঈদী সাহেবের পরিবারও চিকিৎসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যারা এই চিকিৎসককে হেয় করে কথা বলছেন ও হুমকি দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি।

নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি স্বার্থনেশি দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ডাক্তারের নম্বর ছড়ানো হয়েছে। সেখান থেকে তার নম্বর সংগ্রহ করে তাফসিরুল। তাছাড়া সে নিজেও আইটি বিশেষজ্ঞ। গ্রুপ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ডাক্তারকে হুমকি দিয়েছেন।

এছাড়াও এই সব গ্রুপ থেকে অনেকেই নম্বর সংগ্রহ করে ডাক্তারকে হুমকি দিচ্ছেন। তাদেরকেও গ্রেফতারে কাজ করছে র‍্যাব। এছাড়া গ্রুপগুলোকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন...