
পিবিএ,কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জে সহোদর দুই ভাইকে বঞ্চিত করতে চিকিৎসার কথা বলে বৃদ্ধ বাবার বসতভিটাসহ সমুদয় সম্পত্তি দলিল করে নিয়েছে পাঁচ মেয়ে। প্রতারণা করে জমি লিখে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারার পর মো. সাহেদ আলী ভূঞা (৮৫) নামে ভুক্তভোগী ওই বাবা দলিল বাতিলের জন্য আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। এরপরও মেয়েরা লিখে নেওয়া সম্পত্তি নানা ছলচাতুরী করে ভোগদখল করার পাঁয়তারা করছে। এরকম পরিস্থিতিতে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পাদিত দলিল বাতিল করার পাশাপাশি নিজের সম্পত্তিতে নিজের মালিকানা ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাহেদ আলী ভূঞা।
শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজারে কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি মেয়েদের প্রতারণার কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভুক্তভোগী মো. সাহেদ আলী ভূঞা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা মহিশাখালী গ্রামের মৃত জাফর আলী ভূঞা’র ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছাড়াও তার দুই ছেলে মো. মোস্তফা (৫০) ও মো. জয়নাল আবেদীন (৩৬) এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ককোলা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
মো. সাহেদ আলী ভূঞা জানান, তার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রেখে প্রথম স্ত্রী মারা যান। এরপর ১৫ বছর আগে একই এলাকার ককোলা আক্তারকে সাহেদ আলী ভূঞা বিয়ে করেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় তারা স্বামীর বাড়িতে থাকে। এছাড়া দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মোস্তফা বাড়ির পাশে মুদির দোকান দিয়ে সংসার চালান এবং ছোট ছেলে জয়নাল ঢাকায় থাকেন।
অন্যদিকে বয়সের ভারে ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে কাবু সাহেদ আলী ভূঞাকে দ্বিতীয় স্ত্রী ককোলা সেবা-যত্ন করেন। তাদের যাবতীয় খরচ ও দেখাশোনা করেন বড় ছেলে মোস্তফা। এ রকম পরিস্থিতিতে সম্প্রতি হঠাৎ জ্বর ও আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ রকম দুর্বল হয়ে পড়েন সাহেদ আলী ভূঞা। সাহেদ আলী ভূঞা অভিযোগ করেন, তার অসুস্থতার সুযোগে দুই ছেলেকে বঞ্চিত করে তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে তার পাঁচ মেয়ে জুয়েনা, রাব্বিনা, রুনা, হেপি ও আলপিনা এবং এক মেয়ে রুনার জামাই মো. চাঁন মিয়া মেম্বার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার মেয়েরা ও মেয়ে জামাই চাঁন মিয়া তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে গত ৩ মার্চ কিশোরগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে বসায়। সেখানে তাকে ডাক্তারের ঔষধ নিতে হলে দস্তখত দিতে হবে এই কথা বলে কতগুলো সাদা কাগজে কয়েকটি দস্তখত নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর একটি ঔষধের বোতল এনে তারা বলে যে, ডাক্তার ঔষধ দিয়েছেন। এরপর তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে সাহেদ আলী ভূঞা জানতে পারেন, ওইদিন তার দস্তখত নিয়ে তার বসতভিটাসহ সব সম্পত্তি মেয়েরা তাদের নামে হেবা দলিল করে লিখে নিয়েছে।
পরর্তীতে কিশোরগঞ্জ ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে হেবা ঘোষণা দলিল বাতিলের জন্য সাহেদ আলী ভূঞা বাদী হয়ে মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। সাহেদ আলী ভূঞা জানান, তার বসতভিটাসহ সহায় সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত চার কোটি টাকা। মূলত তার দুই ছেলেকে বঞ্চিত করতে তার মেয়েরা মিলে চিকিৎসার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে তার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। অথচ তার বড় ছেলে মোস্তফা তাদের ভরণপোষণসহ যাবতীয় খরচ চালান। সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ায় এখন তিনি নিঃস্ব। এসব বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় সাহেদ আলী ভূঞা চক্রান্তমূলকভাবে করা এই দলিল বাতিল ও তার সঙ্গে হওয়া প্রতারণার প্রতিকার চান।